রণদেব মুখোপাধ্যায়, কাটোয়া : মহিলা পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ ও পৌরহিত্যে বিয়ে সম্পন্ন করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্রী সোমাশ্রী বিশ্বাস। হিন্দু বিবাহের শাস্ত্রীয় রীতি ও পরম্পরাকে ভেঙে চুরমার করে নজির সৃষ্টি হল কাটোয়ার বিকিহাট গ্রামে। কাটোয়ার বিকিহাট গ্রামে নিজের বাড়িতে নারী পুরোহিতের পৌরহিত্যে মন্ত্রপূত যজ্ঞের আগুনের লেলিহান শিখাকে সাক্ষী রেখে বিশ্বজিৎ জানাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করলেন সোমাশ্রী।
তবে নতুন কনে সোমাশ্রী সিঁথিতে সিঁদুর পরলেন না। শুধু মনের মানুষের সিঁদুরমাখা তর্জনী দিয়ে তাঁর ললাটে চিহ্ন এঁকে দেওয়া হল। আর রাঙা সিঁদুর মাখা সোমাশ্রীর তর্জনীর সিঁদুর ছুঁল বিশ্বজিতের ললাট। সমাজে শুধু নারীর সিঁথি সিঁদুর দিয়ে চিহ্নিত করার মত ঘৃণ্য প্রথার প্রতিবাদের প্রয়োজন অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে সোমাশ্রী। সোমাশ্রী বিশ্বাস করেন বিয়ে নিয়ে বর্তমান সমাজে একটা পরিবর্তন দরকার। সেটা শুরু করতে পেরে ভাল লাগছে।
আরও পড়ুন : আগামী বছর সরস্বতী পুজো কবে, পঞ্চমী তিথি থাকবেই বা কত ক্ষণ, জেনে নিন এখনই
সোমাশ্রীর শৈশব কেটেছে বাঁকুড়ায়। তাঁর বাবা সূর্যকান্ত বিশ্বাস বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে ছিলেন। প্রতিবাদী সোমাশ্রী ছোট থেকেই বিয়ের শাস্ত্রীয় প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। বাবার কাছে পণ করেছিলেন তাঁর দাবি মেনে যেন বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়। সেইমতো নারী পুরোহিত বিবাহ সম্পন্ন করেন। সোনার গয়নার বদলে ছিল ফুলের অলঙ্কার। কন্যাদান, সিঁদুরদান প্রথা রদ করে অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ে সারলেন সোমাশ্রী বিশ্বাস। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও সোমাশ্রীর নারীবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে সমর্থন করলেন।
আরও পড়ুন : নকুলদানাতেই লুকিয়ে চরম বিপদ! জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
সূর্যকান্ত বিশ্বাস বলেন, " মেয়ের ইচ্ছাকে সমর্থন ছাড়াও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ব্রাহ্মণ্যবাদ থামাতে এই প্রতিবাদে আমিও সামিল হলাম।" রোহিণী, সঞ্চারী ও ধৃতি-এই তিন নারী পুরোহিত মিলে সোমাশ্রীর বিবাহ দিলেন। রোহিনী ধর্মপাল বলেন, " যে কোনও কাজ যে কেউ করতে পারে। আমরা যেখানে বিয়ে দিতে যাই সেখানে কন্যাদান আর সিঁদুর দান অনুষ্ঠান হয় না। সিঁদুরদানের মধ্য দিয়ে একটি নারীকে চিহ্নিত করার দিন শেষ হোক। সোমাশ্রী এই প্রতিবাদে নেমেছে খুবই ভাল লাগছে। সিঁদুর দান ও কন্যাদান প্রথার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে সোমাশ্রী ভাল কাজ করেছে। নারী স্বাধীনতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত হল সোমাশ্রীর এই বিয়ে। বৈদিক যুগে অনেক মহীয়সী নারী ঋষির কথা আমরা শুনেছি-অপালা, ঘোষা,লোপামুদ্রা,শাশ্বতী। ঋকবেদে কন্যাদান ছাড়া বিয়ের উল্লেখ আমরা পেয়েছি। নারী ঋষিদের উচ্চারিত বৈদিক মন্ত্রে অনেক যজ্ঞ সমাপিত হয়েছে এমন নজির পাওয়া যায়।"
কাটোয়ায় ছকভাঙা সোমাশ্রীর বিয়ের আসরে রচিত হল নারীমুক্তির মুক্ত গদ্য।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।