পরিবার নিয়ে তিনদিন মন্দিরে আশ্রয়! ছেলে-বউ নিয়ে কোনওমতে বেঁচে ফিরলেন পরিযায়ী শ্রমিক
- Published by:Nayan Ghosh
- local18
Last Updated:
‘এক ডাকে অভিষেক’ প্রকল্পের নম্বর জোগাড় করে সমস্যার কথা জানান সাইফুল। এরপরই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবান গাজি।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা, অর্পন মন্ডল: দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে কাজ করছিলেন মুম্বইয়ের একটি কারখানায়। কিন্তু ক্রমাগত হেনস্থার জেরে ছাড়তে হয় সেই চেনা জায়গা। পরিবার নিয়ে পালিয়ে একটি মন্দিরে ঠাঁই নেন বিষ্ণুপুরের শ্রমিক সাইফুল শেখ। সেখানেই লুকিয়ে কাটে দিন তিনেক। বৃহস্পতিবার কোনওরকমে এলাকায় ফিরেছেন তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের কুলেরহাটি পঞ্চায়েতের সর্দার পাড়ার বাসিন্দা বছর চল্লিশের সাইফুল। প্রায় ১৪ বছর আগে মুম্বইয়ের দাদরে একটি কারখানায় কাজে যোগ দেন। ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও বছর তেরোর ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় সম্প্রতি। সাইফুল জানান, বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি বলে দেগে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, এমনকী পুলিশের তরফেও নানা ভাবে হেনস্থা শুরু হয়।
advertisement
advertisement
তাঁর আরও অভিযোগ, বাইরে বেরোলে মারধরও করা হয়। কার্যত বেরোনো বন্ধ হয়ে যায় সাইফুলদের। ওখানে থাকার জন্য পুলিশ মাথা পিছু ৫০ হাজার করে টাকা চায় বলে তাঁর দাবি। এসবের জেরে কারখানা বন্ধ করে দেন মালিক। কাজ বন্ধ, সঞ্চিত অর্থও প্রায় শেষ হয়ে যায় সাইফুলদের। বাড়িওয়ালাও ঘর ছেড়ে দিতে বলেন। বাংলার বেশ কিছু শ্রমিক ছিলেন সেখানে। বেশিরভাগই একা থাকতেন। সকলেই যে যার মত লুকিয়ে ফেরার রাস্তা ধরেন। কিন্তু পরিবার থাকায় আটকে যান সাইফুল।
advertisement
শেষ পর্যন্ত সপ্তাহ খানেক আগে পরিবার নিয়ে লুকিয়ে লোকাল ট্রেনে চেপে বসেন। দাদর থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে কল্যাণে সাইফুলের চেনা দু’-একজন ছিল। সেখানেই এসে নামেন। তবে সেখানেও থাকার জায়গা মেলেনি। শেষ পর্যন্ত একটি মন্দিরে ঠাঁই নেন তাঁরা। পুরোহিত মন্দির চত্বরে থাকতে দেন সাইফুলদের। গত সোমবার এলাকার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘এক ডাকে অভিষেক’ প্রকল্পের নম্বর জোগাড় করে সমস্যার কথা জানান সাইফুল।
advertisement
আরও পড়ুন : হঠাৎ ভেঙে পড়ল ৩০০ বছরের প্রাচীন বাড়ি, ভয়ঙ্কর আতঙ্ক এলাকায়
এরপরই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য বাবান গাজি। তিনি কিছু টাকা পাঠান। ট্রেনে উঠে পড়তে বলেন। পরিবার নিয়ে মঙ্গলবারই ট্রেনে উঠে পড়েন সাইফুল। টিকিট কাটার সুযোগও পাননি। কোনওরকমে প্ল্যাটফর্ম টিকিট কেটেই ট্রেনে চাপেন। বৃহস্পতিবার এলাকায় ফেরেন তিনি। সেখানকার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এখনও আতঙ্কিত শোনায় সাইফুলের গলা। তিনি বলেন, “১৪ বছর দাদরে আছি। চেনা লোকজন এভাবে বদলে যাবেন ভাবতে পারিনি। শেষপর্যন্ত পালাতে হল।
advertisement
কল্যাণে মন্দিরের ঠাকুরমশাই খুবই সাহায্য করেছিলেন। আমাদের লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু ওই ভাবে আর কতদিন! শেষ পর্যন্ত এক ডাকে অভিষেকে ফোন করি। ওরাই সাহায্য করেন। ফেরার পরে স্থানীয় নেতৃত্ব দেখা করেছেন। কিছু টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে আর কতদিন চলবে?”
আরও পড়ুন : রোদ ঝলমলে দিন, না তুমুল বৃষ্টি! কেমন থাকবে উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া? দেখে নিন ১১ জেলার হালহকিকত
তাহলে কি আবার যাবেন ভিন্ রাজ্যে? সাইফুল বলেন, “এলাকায় কাজ নেই। কিন্তু বাইরে যাওয়ারও আর ইচ্ছা নেই। বাইরে গিয়ে মার খাওয়ার থেকে এলাকায় ভিক্ষা করে খাব।” বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, “আগেও এলাকার একাধিক শ্রমিককে ফেরানো হয়েছে। এক্ষেত্রেও খবর পেয়েই ওই শ্রমিককে ফেরানোর ব্যবস্থা করি। বাংলা বলায় এভাবে হেনস্থা কাম্য নয়। পরিবারটির পাশে আছি। মুখ্যমন্ত্রীও পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।”
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata [Calcutta],Kolkata,West Bengal
First Published :
August 23, 2025 9:31 AM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
পরিবার নিয়ে তিনদিন মন্দিরে আশ্রয়! ছেলে-বউ নিয়ে কোনওমতে বেঁচে ফিরলেন পরিযায়ী শ্রমিক