#শিলিগুড়ি: করোনার বড় প্রভাব পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরও। লকডাউনের আগে থেকেই বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। সেপ্টেম্বরেও খোলার সম্ভাবনা ক্ষীন। শিক্ষা বর্ষ পিছিয়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। এই সময়ে একমাত্র ভরসা অনলাইন ক্লাস বা টিউশন। লকডাউন বুঝিয়ে দিয়েছে শিক্ষা সবার কাছে সমান নয়। শহর এবং শহর ঘেঁষা কিছু গ্রামের পড়ুয়াদের কাছে অনলাইনে ক্লাস সম্ভব হলেও, দূরের ওই চা বাগান বা বনবস্তির ছাত্র, ছাত্রীদের কাছে অনেকটাই দুষ্কর। স্মার্টফোন তাদের কাছে বিলাসিতা। যেখানে দু'বেলা পেটপুড়ে খাওয়া জুটছে না, সেখানে অনলাইনে ক্লাস স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না। তাদের পাশে অভিভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছেন শিলিগুড়ির নন্দী দম্পতি! সঙ্গে "মোবাইল লাইব্রেরি" নিয়ে।
কী এই "মোবাইল লাইব্রেরি"? বছর তিনেক আগে এই লাইব্রেরি পথ চলা শুরু করে। মূলত পিছিয়ে পড়া গ্রাম, চা বাগান, বস্তি এলাকার রাস্তা ধরে। অভাবী, অসহায় পড়ুয়াদের কাছে। এই লাইব্রেরিতে কি নেই? ক্লাস ৫ থেকে ১২-এর যাবতীয় বই রয়েছে। কম্পিউটার, ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞান, অর্থনীতির বই। সঙ্গে NEET, IIT, JEE, NET, GATE, WBCS সহ বিভিন্ন প্রতিযগিতামূলক পরীক্ষার বই। সবমিলিয়ে লাইব্রেরিতে ৬ হাজারের কাছাকাছি বইয়ের ভাণ্ডার রয়েছে। তা নিয়েই শিলিগুড়ির নন্দী দম্পতি ছুটে বেড়াচ্ছেন এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায়।
তাদের নয়া প্রকল্প" দশ টাকার টিউশন" নিয়ে। এই দশ টাকার মাধ্যমে ওরা চা বাগান, বন বস্তির পড়ুয়াদের নানা বিষয়ে টিউশন দিয়ে আসছে। ওরা মানে অনির্বান নন্দী এবং তাঁর স্ত্রী পৌলমী চাকি নন্দী! দুঃস্থদের অর্থের অভাবে যাতে পড়াশোনা বন্ধ না হয়, তারই দায়িত্ব নিয়েছে ওদের সংগঠন "লিভ লাইফ হ্যাপিলি"। পৌলমী চাকি নন্দী জানান, এই মূহূর্তে আমরা ১৬টি বাগান এবং ৩০টি গ্রামের দেড় হাজার পড়ুয়াদের নিয়ে কাজ করছি। ওদের টিউশন দেওয়া হচ্ছে।
শিলিগুড়ির কিছুটা দূরের লোহাসিং চা বাগানের একটি বস্তির ৮০ জনকে এরই মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে টিউশন দেওয়া হয়েছে। কেননা এই গ্রামের অভিভাবকদের কাছে স্মার্ট ফোন তাদের ছেলে, মেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া কঠিন নয়, দুষ্কর। অনির্বান নন্দী জানান, সাধ্যমতো সিলেবাস অনুযায়ী কোর্স সম্পন্ন করিয়ে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। করোনার জেরে সোশ্যাল ডিস্টেনশিং মেনেই করানো হল টিউশন ক্লাস। নাক, মুখ ঢাকা ছিল মাস্কেও! আগামীদিনে আরো কয়েকটি চা বলয় এবং গ্রামে ছুটে যাবে ওরা। যাবে ওদের সঙ্গী মোবাইল লাইব্রেরিও!
Partha Pratim Sarkar