#মালদহ: স্কুল ইউনিফর্ম নয়, বাবার মুখাগ্নি করে লালপাড়ের সাদা শাড়ি পড়ে কুশের উপর বসে সংস্কৃত পরীক্ষা দিল জুঁই। রবিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা যান। তিন বোনেদের বড় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জুঁই। তাই তাকেই বাবারা মুখাগ্নি করতে হয়েছে শ্মশানে গিয়ে। বাবার মুখাগ্নি করা অবস্থাতেই মঙ্গলবার স্কুলে গিয়ে সংস্কৃত পরীক্ষা দিল।
বাবাকে হারানোর শোক সামলে মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তি বলে এদিন উচ্চমাধ্যমিকের সংস্কৃতি পরীক্ষা দিল জুঁই মন্ডল। তার এমন পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সাহস যোগিয়েছেন পরিবারের লোকেরা।পাশে থেকে পরীক্ষা দিতে আগ্রহ বাড়িয়েছেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। আইহো হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ মিশ্র বলেন, খুব দুঃখজনক ঘটনা। তবে এমন দুঃখের দিনেও আমাদের স্কুলের এই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে এসেছে এর জন্য তাকে অভিনন্দন জানাই। জীবনে এমন অনেক দুঃখ কষ্ট আসবে তবে সমস্ত কিছুকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আছি। যতটা পেরেছি তাকে সাহায্য করেছি। মালদহের হবিপুর থানার আইহো হাই স্কুলের ছাত্রী জুঁই মন্ডল। তার বাড়ি আইহো যাদবনগর গ্রামে। এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন - Murshidabad News: হাজার হাজার টাকার রুপো হচ্ছিল পাচার, তারপর...
এক সপ্তাহ আগে ভূগোল পরীক্ষার দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা গোবিন্দ মন্ডল। বাবা গোবিন্দ মন্ডল পেশায় গাড়িচালক। গত এক বছর ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। গরমের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি পরিবারের লোকেরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা জানান তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাবার এমন অবস্থার কথা জানতে পারে জুঁই। তারপরেই মন খারাপ করে পরীক্ষা না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরিবারের লোকেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠায়। বাবার অসুস্থতার কথা চিন্তা করেই ভূগোল কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ও দর্শন পরীক্ষা দেয়।
মঙ্গলবার ছিল শেষ সংস্কৃত পরীক্ষা। তার আগেই বাবা গোবিন্দ মন্ডল রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ মারা যান। পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। গোবিন্দ বাবর কোন ছেলে নেই। তিন মেয়ে রয়েছে। সবথেকে বড় জুই মন্ডল। তাই বাবার মুখাগ্নি তাকেই করতে হয়েছে রবিবার রাতে। বাবার মুখাগ্নি করার পর পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জুঁই। আত্মীয় পরিজনের তাকে বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজী করে। পরীক্ষা শেষে জুই মন্ডল বলেন, বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই আমি পরীক্ষা না দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। আমার খুব দুঃখ হচ্ছিল ভালোমতো পড়াশোনা করতে পারছিলাম না। আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে বোঝায়। পরীক্ষা না দিলে আমার এক বছর নষ্ট হবে। গোটা বছরের পরিশ্রম বেকার হয়ে যাবে। সবাই আমাকে বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে পাঠায়। আমার পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে।
Harashit Singha
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।