বাঘের খাঁচায় বন্দি সন্তান, চিতা ঘুরছে স্বাধীনভাবে! চা পাতা তুলতে নামলেই ভয়, ডুয়ার্সে নজিরবিহীন আতঙ্ক
- Published by:Nayan Ghosh
- local18
Last Updated:
তুলে নিয়ে যেতে পারে ছোট্ট প্রাণ। বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। তাই লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখতে হচ্ছে শিশুদের।
বানারহাট, জলপাইগুড়ি, রকি চৌধুরি : ডুয়ার্সের তোতাপাড়া চা বাগানে এক শিউরে ওঠার মতো ছবি। বন্যপ্রাণ খাঁচায় বন্দি হওয়ার কথা, অথচ বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। চিতাবাঘ অবাধে ঘুরছে চা বাগানে। আর নিজেদের সন্তানদের খাঁচায় আটকে রেখে কাজে যাচ্ছেন চা শ্রমিকেরা। চা পাতা তুলতে নামতেই ভয় বুক কাঁপছে মায়েদের। খোলা জায়গায় শিশুদের রেখে কাজে নামা মানেই মৃত্যুকে আমন্ত্রণ। কারণ, যে কোনও মুহূর্তে চিতাবাঘ ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। তুলে নিয়ে যেতে পারে ছোট্ট প্রাণ। বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। তাই লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখতে হচ্ছে শিশুদের।
উল্লেখ্য, ২৭ আগস্ট বুধবার রাতেই বানারহাট থানার অন্তর্গত কলাবাড়ি এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে এক কিশোরকে তুলে নিয়ে যায় চিতাবাঘ। কিছুক্ষণ পরই উদ্ধার হয় তার নিথর দেহ। ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারকে শোকস্তব্ধ করেনি। বরং গোটা বাগানবাসীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। বাগানের শ্রমিক মহল্লায় এখন নেমে এসেছে অদ্ভুত নীরবতা।
advertisement
advertisement
গত বছরও তোতাপাড়া চা বাগানেই একইভাবে শিশুহত্যার অভিযোগ উঠেছিল চিতাবাঘের হামলায়। সেই ক্ষত শুকোয়নি আজও। শ্রমিকদের দাবি, বারবার প্রাণহানি ঘটলেও চিতাবাঘটিকে আটক করা যায়নি। ফলে আতঙ্ক আরও গভীর হচ্ছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে গোটা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে। চা বাগানের বাসিন্দারা এখন বাগানের মাঝখানের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেও ভয়ে কাঁপছেন।
এদিকে বুধবার রাতে চিতা বাঘের হামলায় মৃত শিশুর পরিবারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দেখা করেন বন দফতরের চারটি রেঞ্জের রেঞ্জার ও বন কর্মীরা। বিন্নাগুরি বন্যপ্রাণী স্কোয়াড, মরাঘাট রেঞ্জ, ডায়নারে এবং নাথুয়া রেঞ্জের আধিকারিক ও বনকর্মীরা এদিন মৃতের বাড়িতে যান। পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রাথমিক পর্যায়ে কুড়ি হাজার টাকা। পরবর্তীতে সরকারি কাগজপত্র খতিয়ে দেখে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বাকি ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হবে পরিবারকে। এমনটাই বন দফতর সূত্রে খবর।
advertisement
আরও পড়ুন : সাইকেলে ভারত ভ্রমণে পাঞ্জাবের তিন যুবক, লক্ষ্য শুনলে…
চা শ্রমিকদের অভিযোগ, বন দফতর শুধু আশ্বাস দিয়েই ক্ষান্ত। কিন্তু বাস্তবে চিতাবাঘ ধরতে কোনও উদ্যোগ নেই। প্রতিদিনই যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাগানে কাজ করতে নামতে হচ্ছে তাঁদের। এমনকি সন্ধ্যা নামলেই কবরঘাটার মতো নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে পুরো মহল্লা। কেউ আর রাস্তায় বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না। যদিও বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বুধবার রাতে কলাবাড়ি চা-বাগানে চিতাবাঘের হামলায় মৃত্যুর ঘটনার পর এলাকায় ২টি বাঘ ধরার খাঁচা পাতা হয়েছে ছাগলের টোপ দিয়ে। এমনকি ওই এলাকার আশপাশ দিয়ে আরও চারটি বাঘ ধরার খাঁচা পাতা হয়েছে। যাতে সেই হিংস্র চিতাবাঘকে খাঁচাবন্দি করা যায়।
advertisement
তোতাপাড়া বাগানের বাসিন্দা প্রশান্ত দাস, বলেন, “আমাদের তোতাপাড়া চা বাগানে গত সেপ্টেম্বর মাসে এক শিশুকে চিতাবাঘ তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। তারপর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন শ্রমিকরা। তাই বাগানের শ্রমিকরা কাজে যাওয়ার সময় বাচ্চাদের এই খাঁচার মধ্যে আটকে রেখে পাতা তুলতে যান।”
আরও পড়ুন : সচিব থেকে মন্ত্রী এক ছাদের তলায় সবাই! বাঁকুড়ার জল স্বপ্ন
শ্রমিক সুমন মুন্ডা ওরাও দাই মা-র দায়িত্বে বলেন, “চিতাবাঘের ভয়ে এই শিশুদের খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়। আমরা পাহারা দি। যাদের বাড়িতে শিশুদের দেখভালের কেউ নেই, সেই সন্তানদের মায়েরা নিয়ে এসে এই খাঁচার মধ্যে রেখে পাতা তুলতে যান। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি শিশু এই খাঁচায় রাখা হয়। বাইরে চা বাগানে রাখলে যে কোনও মুহূর্তে চিতাবাঘ হামলা করতে পারে। আগেও এই বাগানে একজনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।”
advertisement
চিতাবাঘের আতঙ্কে ডুয়ার্সের তোতাপাড়া সহ একাধিক চা বাগানের শ্রমিকদের জীবন এখন রুদ্ধশ্বাস। একদিকে প্রতিদিনের রুজি-রুটি, অন্যদিকে প্রাণহানির ভয়, এই দোলাচলে দিন কাটছে তাঁদের। শ্রমিকদের আক্ষেপ, খাঁচা তো চিতাবাঘের হওয়ার কথা, অথচ আজ খাঁচায় বন্দি হচ্ছে তাঁদেরই সন্তানরা।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata [Calcutta],Kolkata,West Bengal
First Published :
August 31, 2025 9:45 AM IST