Barasat Blast: বাজি বিস্ফোরণে 'ক্ষতিগ্রস্ত' লক্ষ্মীর ভাণ্ডার! মন খারাপ দত্তপুকুরের মহিলাদের
- Published by:Salmali Das
- hyperlocal
- Reported by:RUDRA NARAYAN ROY
Last Updated:
Barasat Blast: দত্তপুকুর বাজি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার। হাজার মাল করতে পারলেই ১২০ টাকা পাওয়া যেতো।
উত্তর ২৪ পরগনা: দত্তপুকুর বাজি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার। হাজার মাল করতে পারলেই ১২০ টাকা পাওয়া যেতো। ওই গ্রামে ২০০ টি বাড়ি থাকলে, ১৫০ বাড়ির মহিলারাই এই কাজে যুক্ত ছিলেন। গ্রামে ঘুরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল সেই কথাই। দুর্ঘটনার পর এই বাজির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামের ৮০ শতাংশ বাড়ির মহিলাদের মাথায় উঠবে হাত। ভাবছেন কেন মহিলাদের মাথায় উঠবে হাত! এলাকার ওই মহিলাদের যে বিপুল অর্থের রোজগার বন্ধ হয়ে গেল।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এলাকার বেশ কয়েকজন ক্যামেরার সামনে না হলেও, মুখ খুললেন আমাদের কাছে। তাঁরা জানান, মোচপোল পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রায় অধিকাংশ মহিলারাই যুক্ত ছিলেন এই বাজি তৈরির সঙ্গে। বিনিময়ে মিলতো ভাল অঙ্কের টাকা।
advertisement
advertisement
গ্রামে অধিকাংশ পরিবার ছিল তৃণমূল কিন্তু হঠাৎই একে একে আইএসএফ হয়ে যায়। এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাই পশ্চিম পাড়ায় জয়লাভ করেছিল আইএসএফ। আর পাশের পূর্বপাড়া তৃণমূলের দখলেই রয়েছে। তবু গ্রামের উত্থান খুব দ্রুত হচ্ছিল, বাজি ব্যবসা লাফিয়ে লাফিয়ে বার ছিল। আর এর ফায়দা গ্রামে ছাড়িয়ে অন্যত্রও পৌঁছছিল। গ্রামের মহিলারা কাজ পাচ্ছিল, এমনকী রীতিমত আলুবোম বানানো নিয়ে কাড়াকাড়ি চলতো মহিলাদের মধ্যে। কে কত বেশি মাল করতে পারে, এই নিয়ে প্রতিদিন টানাটানি, ঝগড়ার মতো ঘটনাও ঘটতো।
advertisement
গ্রামে ভ্যান ঘুরতো, আর বাড়ি বাড়ি মাল দিয়ে যেত। এক হাজার মাল বানাতে পারলেই ১২০ টাকা মিলত। একহাজার মাল বানাতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক মত সময় লাগত। সারাদিনে চার পাঁচ হাজার মাল বানানো কোন ব্যাপারই ছিল না এলাকার মহিলাদের কাছে। এক একজন মহিলার দিনে গড়ে প্রায় ৫০০ টাকার উপর রোজগার ছিল। শুধু তাই নয়, জানা যায় এই বাজি ব্যবসায় টাকা লাগিয়ে অধিক লাভের সুবিধাও মিলতো। দু-লাখ টাকা লগ্নি করলে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ফেরত পাওয়া যেত। কেউ এটাকে বলতেন দাদন, কেউ বলতেন সুদে টাকা লাগানো। এলাকার যাদের একটু টাকা ছিল, তারাই এভাবে টাকা বাড়িয়ে নিত বাজি কারখানার মাধ্যমে।
advertisement
কীভাবে চলত মাল তৈরি! জানা যায়, আলু বোম কারখানা থেকে একটি কাগজে মোরা স্টোনচিপ ও বারুদ চলে আসত বাড়ি বাড়ি যাকে বলা হত পুরিয়া। সঙ্গে কালারিং প্লাস্টিকের লম্বা কাটিং। এবার মহিলারা সেই কাগজে মোরা আলুবোম কে প্লাস্টিকে টাইট করে জরিয়ে ফিনিস করত মাল। এইভাবে একহাজার মাল ডেলিভারি করতে পারলেই খাতায় উঠে যেত ১২০ টাকা। ভালই চলছিল মহিলাদের রোজগার, প্রতিটি পরিবারেই আর্থিক উন্নতি হচ্ছিল দ্রুত। আর এখন সিজিন চলায় মাল কাটছিল ব্যাপক পরিমাণে। এক একজনের বাকি পরে গিয়েছিল ২০-২৫ হাজার টাকা করে। পুজোর পরেই মিলতো বকেয়া সেই টাকা। তাই বাড়ির অনেক মহিলারাই এই বাজি কারখানায় জমাতো মাল তৈরির টাকা। এলাকার পুরুষেরা ঘটনায় ক্ষোভে ফুসলেও, মহিলারা অনেকেই হলেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ এই বাজি তৈরি মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার একটা ভাল মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।
advertisement
সকাল হলেই ভ্যানে করে বোঝাই মাল চলে আসতো বাড়ি বাড়ি, সবাই চাইত বেশি পরিমাণে মাল, তাহলেই রোজগার বাড়বে। এই কাজ ঝুকিপূর্ণ জেনেও, অর্থের লোভ এলাকার মহিলাদের ক্রমশ টেনে নিয়ে গিয়েছে বাজির কারবারে। গ্রামের আশি শতাংশ মানুষের বাড়িতেই উঠেছে বাজি তৈরির এই লাভের টাকা। তবে, যে ২০ শতাংশ গ্রামের মানুষ রাগে ফুঁসছেন, তাঁদের বলার অনেক কিছু থাকলেও ভয়ে যেন বলতে পারছেন না কোন কিছুই। যে কারখানায় এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সেই কারখানার রোজগারেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হয়েছেন বড়লোক। তবে কারখানায় আলু বোমের মাল বানানোর কাজ করতেন অধিকাংশই বাইরে থেকে আসা কর্মীরা। বাঁশ বাগানে ত্রিপল টাঙিয়ে দিনরাত চলতো এই পুরিয়া তৈরির কাজ। এই গ্রামের সকলের হাতেই ছিল টাকা-ই টাকা, ভালই চলছিল এই লক্ষ্মীর ভান্ডার। কিন্তু, হঠাৎ এখন গ্রাম একেবারে ঠান্ডা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডার, তাই যেন আরও মন খারাপ।
advertisement
Rudra Narayan Roy
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
August 31, 2023 1:12 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/উত্তর ২৪ পরগণা/
Barasat Blast: বাজি বিস্ফোরণে 'ক্ষতিগ্রস্ত' লক্ষ্মীর ভাণ্ডার! মন খারাপ দত্তপুকুরের মহিলাদের