জলের সমস্যার মোকাবিলা সমাজকে আরও শক্ত হাতে করতে হবে, অন্যথায় বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী
Last Updated:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (W.H.O.) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিশ্ব ব্যাপী কমপক্ষে ২ বিলিয়ন মানুষ পানীয় জলের জন্য দূষিত উৎস ব্যবহার করতে বাধ্য হয় এবং তাদের সকলেরই জল সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি রয়েছে।
গোটা দেশে জলের সমস্যা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, পৃথিবীকে বাঁচাতে আমাদের রুখে দাঁড়ানো দরকার ৷ কীভাবে সম্ভব হবে ? নানা উদ্যোগ নিয়ে নিজের মতামত দিলেন বিচারপতি অরিজিৎ পসায়ত ৷
সুপ্রিম কোর্ট অনেক আগেই বলেছিল যে বিশুদ্ধ জল ব্যবহার করা জীবনের একটি মৌলিক অধিকারের অংশ। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে মৌলিক নাগরিক অধিকার বর্ণনা করা হয়েছে এবং শীর্ষ আদালত বলেছে যদি কোনও ব্যাক্তি বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যাবহার করতে সক্ষম না হয়, তবে এই অধিকারটির কোনও অর্থই হয়না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পুরো বিশ্ব জুড়ে অন্তত পক্ষে ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) মানুষ বাধ্য হয় দূষিত উৎস থেকে পানীয় জল ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রত্যেকেরই জল অতিবাহিত রোগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনার হার অনেক বেশি। খুব কাছাকাছি যদি দেখতে হয় তাহলে নব্বইয়ের দশকে, আমি ওড়িশার ওপর তৈরি হওয়া একটি প্রতিবেদনের ওপর সিদ্ধান্তে পৌঁছে ছিলাম যে সেখানকার লোকেরা যেই মানের জল পান করার জন্য ব্যাবহার করে সেই মানের জল স্নান করার জন্য ও ব্যবহার করার যোগ্য নয়, এতটাই খারাপ যে সেই জলে স্নান করার ফলে চর্মরোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।
advertisement
advertisement
যদিও অতীতের কথা ভেবে এখন কোনও লাভ নেই। এখন সময় এসে গিয়েছে সামনের দিকে তাকানোর এবং এটা দেখার কিভাবে ভবিষ্যতে আমাদের পরিবেশ এবং বাস্তুকে আরও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এবং এটি উল্লেখ করতেই হবে যে এটি শুধু মাত্র সদগুরুর জ্ঞান এবং প্রবীণত্ব যে তিনি খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই “ র্যালি ফর রিভারস” অভিযান শুরু করেন।
advertisement
কিভাবে জল সংরক্ষণ করতে হবে এবং কিভাবে জলের দূষণ দূর করা সম্ভব, এই সমস্যার সমাধান না করা মানে আমরা ধীরে ধীরে একটি বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে পুরো সমাজকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। “কাবেরি কলিং” ( Cauvery Calling ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত যার মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ কিভাবে একত্রিত হয়ে এগিয়ে আসতে পারে। কারণ, এইধরনের উদ্যোগের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করাই নয়, এটি যদি সফল হয় তাহলে সেটি অর্থনৈতিক দিক থেকে এবং বাস্তুতান্ত্রিক দিক থেকেও লাভজনক হবে সেই মানুষগুলোর জন্য যারা নদী এবং নদী থেকে আসা সম্পদের ওপর ভরসা করে জীবন অতিবাহিত করে। এখন, অবশেষে, বিশ্বব্যাপী এই সচেতনতা তৈরি হয়ে গিয়েছে যে জলের ঘাটতি পূর্ণ করার প্রাথমিক উপায় হল গাছ লাগানো।
advertisement
গত কয়েক বছর ধরে, বিশ্ব-উষ্ণায়ণ সম্পর্কে অনেক কিছু শুনছি। এরকম হওয়ার কারণটা কি? এটির কারণ হল যেই সবুজ মলাটটি রয়েছে পৃথিবীর ওপরে সেটি খুবই দ্রুতহারে হ্রাসপ্রাপ্ত হচ্ছে। ইথিওপিয়া একসময় সর্বোচ্চ ছিল গাছ-পালার দিক থেকে, কিন্তু এখন সেটি একটি বিশাল মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। কেন? কারণ বেশিরভাগ গাছকে কেটে তাঁর কাঠ রপ্তানি করা হয়েছে। আনুমানিক প্রতিদিন ৩০০ জাহাজ, নির্মাণ কাজের উপযোগী কাঠ রপ্তানি করার জন্য দেশ থেকে বাইরে পাঠান হত। এটি দেশের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিক্রয়লব্ধ আয় এনে দিচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু এর কারণে দেশটি একটি বড় মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছিল।
advertisement
এই কারণে “পরিবেশ রক্ষা” এবং “টেকসই উন্নয়ন” (sustainable development) শব্দগুলি আমাদের শব্দতালিকা থেকে উঠে এসে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। আমরা শিল্পগুলিকে দূরে রাখতে পারি না। দেশগুলি সেই দ্রব্যগুলিই রপ্তানি করবে যেগুলি তাদের দেশের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নতি এনে দেবে এবং যেগুলি সম্পদ সৃষ্টিতে সাহায্য করবে, কিন্তু টেকসই উন্নয়নই হল এখানে নীতিবাক্য। ঠিক এই কারণেই আমি “র্যালি ফর রিভারস্” বা “কাবেরি কলিং” এর মত উদ্যোগকে সমর্থন করি কারণ এই উদ্যোগটি অর্থনীতি এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিপূরক হিসাবে কাজ করে এবং এটাই হওয়া উচিত।
advertisement
পরিবেশ রক্ষায় বিচার বিভাগের ভূমিকা
পরিবেশ ও বাস্তুশাসন সুরক্ষায় ভারতীয় বিচার বিভাগ খুবই প্রচারমূলক ভূমিকা পালন করেছেন। নব্বইয়ের দশকে গোদাভারমান মামলার (সুপ্রিম কোর্টে পরিবেশিত প্রথম পরিবেশ সংক্রান্ত মামলা) রায়ের দিন থেকে এখন অবধি, যখন পরিবেশকে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য একটি জাতীয়-সবুজ-বিচারসভা (National Green Tribunal) অবস্থান করছে, তখন বিচার বিভাগ সর্বদাই সক্রিয় ভাবে কোনও না কোনও উপায় বের করে নিয়েছে কিভাবে সঠিক উপায়ে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করা যায়।
advertisement
দেশ জুড়ে বনাঞ্চলের ব্যাপক ধ্বংস লীলা শুরু হওয়ার থেকেই এটা শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছায় যে, তারা এবার থেকে পরিবেশ সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে তদারকি ভূমিকা পালন করবে যাতে প্রাকৃতিক সম্পদের বৃহদায়তন ধ্বংস থেকে প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করা যায় এবং তারা এই জন্য কেন্দ্রীয় ক্ষমতায়িত কমিটি (Central Empowered Committee, CEC) তৈরি করেছেন।
মূল বিষয়টি হল বনাঞ্চচলে কোনও অ-বনজ কার্যকলাপ চালান উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ, খনন। এটি হল একটি অ-বনজ কার্যকলাপ। কিন্তু বেশিরভাগ খনি গুলিই বনভূমিতেই অবস্থিত। সুপ্রিম কোর্ট এটা বলেছেন যে যদি কোনও ব্যক্তি বনভূমিতে এমন কোনও কাজ করে যেটি বনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখে না তাহলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। অথবা সেই ধরনের কার্যকলাপ তিনি করতে পারবেন কিনা তার জন্য তাকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। বন ও পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে এই সকল কাজের জন্য। আইনে এই ব্যাপারগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি রয়েছে, এবং এই ধরনের অপরাধের জরিমানা কোটি কোটি টাকা অবধি নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু যতদিন না আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে, ততদিন স্রেফ আইন দিয়ে এর সম্পূর্ণ রূপান্তর সম্ভব নয়।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
August 26, 2019 12:27 PM IST