লোডশেডিংয়ের জেরে কপালে ভাঁজ পড়ুয়াদের, শাটডাউনে নাজেহাল শিলিগুড়িবাসী
- Published by:Ananya Chakraborty
Last Updated:
বিশেষজ্ঞদের করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের তত্ত্ব সামনে আসার পর থেকে পুজো কি আদৌ হবে সে নিয়ে দ্বন্দ্বে গোটা শহরবাসী। কিন্তু প্রাক পুজো রক্?
ভাস্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: একেই করোনা, তারপর গরম। নাজেহাল শৈত্যশহর শিলিগুড়ির বাসিন্দারা। উপরন্তু শাটডাউন হয়েছে দোসর! আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ছে শিলিগুড়িবাসীর মনে। বিশেষজ্ঞদের করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের তত্ত্ব সামনে আসার পর থেকে পুজো কি আদৌ হবে সে নিয়ে দ্বন্দ্বে গোটা শহরবাসী। কিন্তু প্রাক পুজো রক্ষনাবেক্ষনের নামে এই চাঁদি ফাটা গরমের মধ্যে প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দিনভর শাটডাউন করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে অনলাইন ক্লাস করাতে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তথা সমাজসেবী অভয়া বসু। তিনি প্রশ্ন করেন কতদিন এভাবে যে লোডশেডিং হবে তা বুঝতে পারছি না। এই লোডশেডিংয়ের স্টাইল শিলিগুড়ির অন্তত ছিল না। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীই অনলাইন ক্লাসের ওপর নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবে এমন দিনের-পর-দিন ঘন্টার পর ঘন্টা শাটডাউন থাকার জেরে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মোবাইল বা কম্পিউটার চার্জ করতে পারছে না। বলতো তাঁরা ক্লাস মিস করছে। একেতেই স্কুল বন্ধ, তার উপর ধিকিয়ে চলছে এই অনলাইন ক্লাসগুলি। সেখানে একদিন দুদিন তাঁদের ক্লাস মিস মানে, কতটা বড় ক্ষতি ভাবতে পারছেন? প্রশ্ন রাখেন সেই অভয়াদেবী।
অভয়া বসু আরও বলেন, \'প্রথমেই জানিয়ে রাখতে চাই যে আমরা শিক্ষিকারা এই লোডশেডিং বা শাটডাউনের জেরে কতটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা বড় কথা নয়। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যেও বাস করে। শহরাঞ্চলে কিছু না হলেও আমাদের বিকল্প থেকে যাচ্ছে ইনভার্টার বা বাড়িতে ওয়াইফাই-এর মাধ্যমে। প্রত্যন্ত গ্রামে যে ছাত্রছাত্রীরা আছে তাঁরা সত্যি যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। আমি প্রত্যন্ত গ্রামের কোথাও ছেড়ে দেব শিলিগুড়ি শহরের এমন অনেক বস্তি এলাকা রয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ড রয়েছে যেগুলোতে এখনও পর্যন্ত উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে সেই এলাকাগুলির ছাত্রছাত্রীরা, পড়ুয়ারা কোথায় যাবে বলতে পারেন?\'
advertisement
অভয়াদেবী বলেন, \'করোনা অতিমারিতে আমরা অন্তত একটি বিষয় খুব স্পষ্টভাবে শিখতে পেরেছি যে আমাদের প্রত্যেকটি পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। তবেই আমরা পারব লড়াই করতে অন্যথা আমাদের চিরতরে মুছে যেতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে শিলিগুড়ির বুকে অগ্রিম একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশ ওয়ার্ডে সেই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে শাটডাউন হচ্ছে না। এদিকে প্রতি তিন মাস অন্তর গাদাগাদা বিলের বোঝা কিন্তু বিদ্যুৎ দপ্তর থেকে পাঠানো হচ্ছে। ফলত আমরা সেই বিল দিতে বাধ্য থাকছি। কিন্তু বিনিময়ে ন্যূনতম পরিষেবা থেকে যে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি তা বলতে আমি একবারও দ্বিধাবোধ করছি না।\'
advertisement
advertisement
উদ্বেগ প্রকাশ করে অভয়াদেবী বলেন, \'এই করোনাকালে অনেকেরই বাড়িতে এমন অনেক মানুষ আছে হয়তো সেই তথ্যটা আমাদের কাছে সেই অর্থে নেই তবে অনেকেরই বাড়িতে তো এমন রোগী রয়েছে যাদের অক্সিজেন চলছে বা অক্সিজেন কনসেনট্রেটের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হচ্ছে। আর এই গোটা মাধ্যমে বৈদ্যুতিক। তবে এই শাটডাউনের ফলে সেইসব রোগীর কতটা কষ্ট হতে পারে একবার ভেবে দেখেছেন? পাশাপাশি, আরেকটি বিষয়কে নজরে আনতে চাই বড় বড় সংস্থা শাটডাউনের জেরে জেনারেটর ব্যবহার করছে। সেই জেনারেটর থেকে বিষাক্ত বায়ু বাতাসে এসে মিশছে। ফলে সেদিক থেকেও আমাদের পরিবেশও বিপুল পরিমাণ দূষিত হচ্ছে। যা সত্যিই চিন্তার।\'
advertisement
শিলিগুড়ি শহরে গত কয়েকমাস ধরেই বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম অবনতি হয়েছে। যখন-তখন বিনা নোটিশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার শহরবাসীর ভবিতব্য হয়ে গিয়েছে। গত এক বছর ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অ্যালুমিনিয়ামের বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের বদলে কেবল লাগানোর কাজ করছে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি। শহরের ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই অ্যালুমিনিয়ামের তারের বদলে কেবল লাগানোর কাজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই পুরো কাজটা করা হয়েছে বিনা নোটিশে কার্যত দপ্তরের কর্তা ও বরাত প্রাপ্ত সংস্থার মর্জিমাফিক। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মুখ্যমন্ত্রী সুভাষ পল্লীতে একটি ৩৩/১১ কেভিএ সাব স্টেশনের উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু ঐ উদ্বোধনের পর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও সাবস্টেশনের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারিনি বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি। গত কয়েক মাস ধরেই বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে ভক্তিনগর, দেশবন্ধুপাড়া, ডাবগ্রাম, ফুলেশ্বরী, সুভাষপল্লী, বাগরাকোট, আশ্রমপাড়া, শ্রবণনগর এমনকি রবীন্দ্রনগরের মতো এলাকাতেও কেবল বসানোর কাজ করে চলেছে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ব্যাহত হচ্ছে এই এলাকাগুলিতে। এদিকে আবার প্রাকপুজো রক্ষণাবেক্ষণের নামে ২৯ জুলাই থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা প্রায় দুই মাসের লোডশেডিংয়ের সিডিউল প্রকাশ করা হয়েছে বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির তরফে। এতে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে দফায় দফায় সাত-আটদিন আবার কোথাও ১৫দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শাটডাউন করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, রক্ষনাবেক্ষনের নামে এতদিন সময় লাগছে কেন? তাহলে বিগত দিনগুলিতে এই যে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রেখে কি কাজ করা হল?
advertisement
একইভাবে ক্ষোভ উগরে দেন মহারাজা অগ্রসেন হাসপাতালে দন্ত চিকিৎসক ডাঃ ইমনাভ দে। তিনি বলেন, \'বিদ্যুৎ দপ্তরের তরফে রক্ষনাবেক্ষনের নামে যে শাটডাউন করা একপ্রকার যেন প্রহসন লাগছে। আমরা যারা দাঁতের চিকিৎসক তাদের সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট বৈদ্যুতিন। হলি ইনভার্টার বা জেনারেটর দিয়ে সবসময় চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব। এমনকি অপারেশন টেবিলেও বা দাঁতের চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের অনেক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত জেনারেটর বাই ইনভার্টার কাজ করা শুরু করছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজে খুব অসহায় হয়ে পরি।\' চিকিৎসক ইমনাভ প্রশ্ন করেন, \'যদি পুজোর সময় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার স্বার্থেই এই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ, তবে কেন বেশি সংখ্যক কর্মীকে কাজে লাগিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করা হচ্ছে না? এই অসহ্যকর গরমের কথা, সাধারণ মানুষের কথা কেন পৌঁছচ্ছে না তাদের কাছে?\'
advertisement
যদিও এ প্রসঙ্গে ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর শিলিগুড়ি শাখার জোনাল ম্যানেজারের সঙ্গে নিউজ ১৮ লোকাল বারংবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সদুত্তর পায়নি।
Location :
First Published :
August 11, 2021 12:15 AM IST