ঔষধের ফেলে দেওয়া স্টিপ ও খাম দিয়ে দুর্গা প্রতিমা গড়লেন গৃহবধূ পাপিয়া কর
- Published by:Ananya Chakraborty
Last Updated:
দীর্ঘ ছয় মাসের প্রচেষ্টায় ও আনুমানিক ১৩০০০ টাকা ব্যায়ে প্রতিমাটি বানিয়েছেন তিনি
নদিয়া: যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে, এই উক্তিটিকে বাস্তব জীবনে পুনরায় আর একবার প্রমাণিত করে দিলেন নদিয়ার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ পাপিয়া কর। ভালো কিছু করে দেখানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি যে মানুষকে তাঁর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করে তারই এক জ্বলন্ত নিদর্শন হলেন এই গৃহবধূ। দুর্গাপূজার সময় স্টেশন ও ফুটপাতবাসী ছোট ছোট অসহায় হতদরিদ্র পরিবারভুক্ত শিশুদের নতুন জামাকাপড় দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে ঔষধের ফেলে দেওয়া অবাঞ্ছিত স্টিপ বা খাম দিয়ে গৃহবধূ পাপিয়া দেবী তৈরি করে ফেললেন ঝাঁ-চকচকে দৃষ্টিনন্দনকারী দুর্গা প্রতিমা মূর্তি।
তাঁর এই শিল্পত্বে মুগ্ধ হয়ে যদি কোন সহৃদয় ব্যক্তি অথবা কোন ঔষধ ব্যবসায়ী ন্যায্য মূল্যের নিরিখে দুর্গা প্রতিমাটি ক্রয় করেন, তাহলে সেই অর্থ ব্যয় করে তিনি নতুন জামা কাপড় বিতরণ করার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার মরসুমে খুশি করতে চান ওইসব অসহায় কচিকাঁচা শিশুদের। মূলত সেই কারণেই তিনি ফেলে দেওয়া ঔষধের স্টিপ সংগ্রহ করে প্রায় সারে ছয় মাসের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ও তেরো হাজার টাকা ব্যয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তাঁর এই নন্দনিক দুর্গা প্রতিমা।ঠিক একইভাবে এর আগেও তিনি কাগজ, পাট, সবজির বীজ, গমের পাতা দিয়ে এই ধরনের মূর্তি তৈরি করেছিলেন। গত বছরও সুপারি দিয়ে তৈরি দুর্গাপ্রতিমা বিক্রয় করে পুজোর সময় নতুন জামাকাপড় তুলে দিয়েছিলেন স্টেশন ও ফুটপাতবাসী ছোট ছোট শিশু ও তাদের পরিবারের হাতে।
advertisement
শুধু তাই নয় সারা বছর ধরে এই সব শিশুদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াশোনা শেখান পাপিয়া দেবী। যাতে দুর্বিষহ দারিদ্রতাকে জয় করে ভবিষ্যতে তাঁরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এটাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন এই গৃহবধূ। পাপিয়া দেবীর স্বামী পেশায় একজন সাধারণ সব্জি বিক্রেতা। ফুটপাতে বসে সব্জি বিক্রয় করে যে অর্থ উপার্জন হয়, তাই দিয়ে এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন তিনি। তবে এই ধরনের সামাজিক কর্ম ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে মানসিকভাবে তাঁকে সমর্থন করেন পাপিয়া দেবীর স্বামী ও পুত্র বলে জানান এই গৃহবধূ হস্তশিল্পী। এছাড়াও তাঁর এই শিল্প কলার মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্যতা বজায় রাখা ও মারণব্যাধি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরতে এই বছর ঔষধের ফেলে দেওয়া স্টিপ দিয়ে তৈরি দুর্গাপ্রতিমার একহাতে গাছ ও অপর হাতে করোনার মূর্তি স্থাপন করেছেন পাপিয়া দেবী।
advertisement
advertisement
পাশাপাশি অশুভ শক্তি অসুরের মূর্তিটিতেও করোনার রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। তাঁর মতে, মহামারীর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে প্রাকৃতিক ভারসাম্যতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা উচিত।তাহলে গ্লোবাল ইকোসিস্টেম সঠিক পথে পরিচালিত হবে বলে মনে করেন তিনি। মূলত সেই কারণেই দুর্গাপ্রতিমার একহাতে অস্ত্রের বদলে গাছ দিয়ে এই বার্তাই সর্ব সাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন এই গৃহবধূ হস্তশিল্পী। এছাড়াও শুভ মাতৃ শক্তি দ্বারা অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটবে এই প্রত্যাশা নিয়েই অসুরের মূর্তিটি করোনার আদলে গড়েছেন তিনি। সর্বোপরি সর্ব শক্তিরূপিণী মা দূর্গা করোনা রুপি অসুর নিধন করে পৃথিবীকে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনবেন বলেই শুধুমাত্র আঠা ও ফেলে দেওয়া ঔষধের স্টিপ বা খাম দিয়ে এই দুর্গামূর্তি তৈরি করেছেন গ্রাম্য সাধারন পরিবার থেকে উঠে আসা গৃহবধূ হস্তশিল্পী পাপিয়া কর।
Location :
First Published :
September 20, 2021 11:00 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/Local News/
ঔষধের ফেলে দেওয়া স্টিপ ও খাম দিয়ে দুর্গা প্রতিমা গড়লেন গৃহবধূ পাপিয়া কর