বিনয়-বাদল-দীনেশের শিক্ষাগুরুর কর্মভূমি আজ আগাছায় ঢাকা, নিত্য বসে তাস ও নেশার আসর
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
Last Updated:
Independence Day 2022: রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে ছিলেন বিনয় বাদল দীনেশের শিক্ষাগুরু, স্বাধীনতার মাসে বিপ্লবীদের কর্মভূমিতে নেশার আসর
রুদ্র নারায়ণ রায়, উত্তর ২৪ পরগনা: আর মাত্র কয়েকদিন পরই পালিত হবে দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান । সেজে উঠবে দেশের নানা প্রান্ত । রাজ্যেও সাড়ম্বরে পালিত হবে, স্বাধীনতার এই উৎসব । তবে স্বাধীনতার প্রাক্কালে আদৌ কি যথেষ্ট সম্মান পেয়েছেন আত্মত্যাগী বিপ্লবীরা ? সেই প্রশ্নই তুলে দিচ্ছে আরও এক বার ।
স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষী নিয়ে অনাদরে, অবহেলায় আজও পড়ে রয়েছে রাজারহাটের পল্লী নিকেতন। স্বাধীনতার সাত দশক পরেও বিপ্লবের কর্মভূমি ডুবে অন্ধকারে। অভিযোগ, নিয়মিত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জঙ্গল আগাছায় ভরে গিয়েছে সাড়ে ন’বিঘা জমি । তারই মাঝে ঝোপে ঝাড়ে নেশার আসর বসাচ্ছে স্থানীয় যুবকরা । কেবল সপ্তাহে একদিন দাতব্য চিকিৎসালয়, আর ডিসেম্বর জানুয়ারিতে পিকনিক পার্টির জন্য সরগরম হলেও বাকি সময় যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা এখানে । বিভিন্ন জায়গায় সংস্কারের আর্জি জানালেও, এবারও আশাহত হয়েছেন প্রাক্তন ওয়ার্ডেন জয়দেব মণ্ডল, কেয়ারটেকার তপন বৈদ্য-সহ প্রমুখেরা।
advertisement
সহকর্মী কুমুদচন্দ্র সরকার, রসময় সুর, মেজর সত্য গুহদের সহযোগিতায় রাজারহাটের বাগুর এলাকার তৎকালীন অজ পাড়াগাঁয়ে স্বপ্নের পল্লী নিকেতন গড়ে তুলেছিলেন বিল্পবী নিকুঞ্জ সেন। রাজারহাট অঞ্চলের বাগু, শিখরপুর, ঝালিগাছি, নয়াবাদ, আড়বেলিয়া-সহ সাতটি গ্রামের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করতে এক মহান কর্মযঞ্জে সামিল হয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম সেই মানুষগুলি। তাদের আঁকড়ে ধরেই সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষার প্রসার, আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়েছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন : আপাত ব্রাত্য স্যাক্সোফোনে ফুঁ দিয়েই বাজিমাত ১২ বছরের খুদে শিল্পী পলকের
কিন্তু কালের নিয়মে একে একে নিভেছে দেউটি। বিনয়-বাদল-দীনেশের শিক্ষাগুরুর স্মৃতি বিজড়িত পল্লী নিকেতন আজ আগাছায় ভরেছে। রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে কৌলীন্য হারিয়ে পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতার এই স্মৃতি।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সেখানে দেখা গেল কয়েকজন তাস খেলছে, সঙ্গে চলছে মদ্যপান। ইতিহাস বলছে, ১৯৩১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই বাগু গ্রামে লবণ আইন আন্দোলনের জন্য ক্যাম্প করেছিলেন কুমুদচন্দ্র সরকার। তাঁর নেতৃত্বাধীন লবণ আইন বিরোধী মিছিলে গুলি চালালে মারা যান মোহিনী রায়। যার নামে আজও শহিদ বেদি ও রাস্তা আছে বাগুতে। চার বছর জেল খাটার পর ছাড়া পেলে তাকে পূর্ববঙ্গে ফিরে যেতে বাধ্য করে ব্রিটিশ সরকার।
advertisement
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলে এলাকার মানুষের ভালবাসার টানে বাগুতে ফিরে আসেন কুমুদবাবু। রমেশচন্দ্র মিত্র এস্টেটের কাছ থেকে জমি ও সর্বেশ্বর মণ্ডলের গোলা ভরা ধান নিয়ে ১৯৪৯ সালের চার জানুয়ারি গড়ে তোলেন সপ্তগ্রাম সর্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়।
আরও পড়ুন : মহরম উপলক্ষে বাড়তি সময় জল সরবরাহ বর্ধমান পুরসভার
এই বিদ্যালয়য়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন রসময় শূর এবং তিন বছর পর ওই পদে নিযুক্ত হন নিকুঞ্জ সেন। বিপ্লবী বাদল গুপ্ত ছিলেন নিকুঞ্জ সেনের ছাত্র এবং হাতে গড়া শিষ্য। শোনা যায়, রাইটার্সে অলিন্দ অভিযানের আগে নিকুঞ্জ সেন তাঁকে নিয়ে রাইটার্সের অন্দরমহল ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন যাতে নিখুঁত ভাবে অপারেশন চালানো যায়। মূলত নিকুঞ্জ সেন ও তাঁর সহযোগীদের চেষ্টায় শান্তিনিকেতনের ধাঁচে প্রথমে বাগু সপ্তগ্রাম উন্নয়ন পঞ্চায়েত ও পরে পল্লী নিকেতন নামে কমিউনিটি সেন্টার গড়ে ওঠে। উদ্দেশ্য, এলাকায় বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, দুগ্ধ সরবরাহ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন-সহ একাধিক লক্ষ্য।
advertisement
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, পূর্বতন বাম সরকারের আমলে পল্লী নিকেতনকে ঘিরে রক্ষণাবেক্ষণ চালানো, কেয়ারটেকার নিয়োগ করলেও এখন সেখানে কেউ নেই । অথচ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পল্লী নিকেতনের পাঁচ বিঘা জমিতে লিজ দিয়ে পিকনিক স্পট হিসাবে ভাড়া দিয়ে মোটা টাকা আয় করছে রাজ্য সরকার। এলাকার বাসিন্দা মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমরা চাই সরকার এটার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করুক ও এখানে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলুক।’’
advertisement
রাজারহাটের বিডিও ঋষিকা দাস বলেন, ‘‘ওখানে একটা স্থায়ী কমিটি আছে যারা এটার দেখভাল করেন। কীভাবে এটার উন্নতি করা যায় সেটা নিয়ে ওঁদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।’’ প্রশাসনের তৎপরতায় নেশার আসর উঠিয়ে, স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করা এই পল্লী নিকেতনের সংরক্ষণ হোক, চাইছেন এলাকার স্থানীয় মানুষরা।
Location :
First Published :
August 09, 2022 4:28 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/Local News/
বিনয়-বাদল-দীনেশের শিক্ষাগুরুর কর্মভূমি আজ আগাছায় ঢাকা, নিত্য বসে তাস ও নেশার আসর