করোনাকালে সোনারপুরের মসীহা টোটো চালক দেবা
- Published by:Ananya Chakraborty
Last Updated:
টোটো করেই বহু করোনা আক্রান্তকে নির্দিষ্ট গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দিয়েছেন সোনারপুরের দেবাশিস
রুদ্র নারায়ন রায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: সংসার চালাতে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন টোটো চালানো। দৈনিক যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে যায় কোনো রকমে। তবু মানুষের জন্য কিছু করার বাসনা দীর্ঘদিনের। সেই বাসনা থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা আক্রান্তদের সহযাত্রী করে সকাল বিকাল ছুটে চলেছেন সোনারপুরের মসীহা দেবাশিস সরকার ওরফে দেবা।
জীবনের ঝুঁকি শুধু তাঁর একার নয়। স্ত্রী, নাবালক সন্তান সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও। তবুও এতকিছুর পরোয়া না করে রাত দিন টোটো ছুটিয়ে চলেছেন দেবা। সমাজ যাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে সেইসব অসহায় মানুষকে হাসপাতাল কিংবা ডায়গনাস্টিক সেন্টারে পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। এভাবে টোটো করেই বহু করোনা আক্রান্তকে নির্দিষ্ট গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দিয়েছেন সোনারপুরের দেবাশিস।
advertisement
সোনারপুর স্টেশন থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার গেলে ঘাসিয়াড়া বাজার। সেখানেই নতুন পল্লীতে বাস দেবার। ছোটবেলায় বাবাকে হারান। তাই মা আর দুই ছোট ভাইকে মানুষ করার জন্য কলেজে পড়ার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে টোটো কিনে চালানো শুরু করেন। স্ত্রী সুবর্ণা ছাড়াও এগারো বছরের ছেলে, মা, শ্বাশুড়ী ও দুই ভাই নিয়ে দেবার পরিবার।
advertisement
advertisement
সমাজসেবার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান তিনি। সে কারণে প্রবীন মানুষদের জন্য রেল লাইনের পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় নবজীবন নামে একটি পার্ক তৈরি করেছেন দেবাশিস। করোনার প্রথম থাবায় যখন কোভিড আক্রান্ত রোগী দেখলে পালিয়ে যাচ্ছেন সকলে, তখন হাসি মুখে এগিয়ে এসেছেন দেবা। অসহায় মূমুর্ষ মানুষদের নিজের টোটো করেই পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে। হাসি মুখে দেবা বলেন, ‘করোনা রোগী বলে দূরে পালালে হবে না। কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিয়ে ওঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। মৃত্যুর ভয় পাইনা বলেই হাসিমুখে এই কাজ করতে পারি।‘
advertisement
গতবছরের মত এবছরও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেই একই কাজ করেছেন তিনি। রোগী বহন করতে গিয়ে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় সেজন্য গোটা গাড়িটাই স্যানিটাইজ করে দেন রোগী নামানোর পর। গাড়ির মধ্যে অক্সিমিটার, থার্মোমিটার, প্রেসার মাপার যন্ত্র প্রভৃতি রেখে দিয়েছেন। চব্বিশ ঘন্টাই নিজের মোবাইল অন রাখছেন রোগী বহনের জন্য। এম্বুলেন্স চালকদের যখন অতিরিক্ত দর হাঁকানোর অভিযোগ উঠছে, তখন নিজের সংসার চালাতে দেবা নিচ্ছেন সামান্য কিছু খরচ। তিনি নিজে নন, রোগীরাই ঠিক করেন কত ভাড়া দেবেন। আবার, অসহায় দের তিনি বিনা পয়সাতেই গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেন। কখনো বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল, কখনও সোনারপুর গ্রামীন হাসপাতাল আবার কখনও পিয়ারলেস, রুবি, মেডিকাতে ছুটে চলেছে তার টোটো।
advertisement
দেবার এই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সোনারপুর বাসীরা। এলাকার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সৌমিত্র কর বলেন, ‘এটা একটা মহৎ কাজ। এই বিপদের দিনে উনি যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে এলাকার বাসিন্দা হিসাবে আমাদের গর্ব হয়।‘ সোনারপুর বাসীদের কাছে তাই দুঃসময়ের মসীহা হয়ে উঠেছেন টোটো চালক দেবা।
view commentsLocation :
First Published :
July 10, 2021 9:41 AM IST










