#কলকাতা: যখন একটি সুস্থ শরীর বজায় রাখার কথা আসে, আমাদের দেহে পুষ্টি এবং খনিজগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কারণে আমাদের খাদ্য সুষম হতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর হতে হবে। ভিটামিন সি (Vitamin C) আমাদের শরীরের সুস্থ ক্রিয়াকলাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির একটি উৎস। শরীরে কোলাজেনের (Collagen) সঠিক গঠনের জন্য এটা দায়ী। পাশাপাশি, ভিটামিন সি হাড়ের গঠন, রক্তনালীর স্বাস্থ্য এবং ক্ষত নিরাময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-সি একটি জৈব অম্ল। যা শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়। মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এ কারণেই ভিটামিন সি -র অভাবে অনেক রোগ হতে পারে, যা আরও অন্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
স্কার্ভি (Scurvy): স্কার্ভি হল ভিটামিন সি -র অভাবের সঙ্গে যুক্ত সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোগ। খাদ্যে ভিটামিন সি-র অভাব হলে দাঁতের মাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি হয়, মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়। এছাড়াও দুর্বলতা, ক্লান্তি, ফুসকুড়ি এবং আরও অনেক কিছু হয়। প্রাথমিক উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, খিদে কম হওয়া, বিরক্তি এবং জয়েন্টে ব্যথাও হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে রক্তাল্পতা, মাড়ির প্রদাহ, ত্বকের রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে।
আরও পড়ুন - Lifestyle: ঘন চুলের রহস্য কি বোঝা সহজ, চুলের দৈর্ঘ্য বলে দেয় মেয়েদের স্বভাব কেমন
হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism): হাইপারথাইরয়েডিজম হল যখন থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ করে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির সঙ্গে ভিটামিন সি থাইরয়েড ঠিক রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘস্থায়ী ভিটামিন সি-র অভাবে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হতে পারে, যা হাইপারথাইরয়েডিজমের দিকে নিয়ে যায়। যার ফলে ওজন কমে যায়, হৃদস্পন্দন বাড়ে, খিদে বাড়ে। এছাড়াও মহিলাদের রজঃস্রাবের সময় ও ধরনে পরিবর্তন-সহ আরও অনেক কিছু হতে পারে।
রক্তাল্পতা (Anaemia): খাদ্য় তালিকায় ভিটামিন সি অন্তর্ভুক্ত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য উপকারিতা ছাড়াও ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে, যা রক্তাল্পতার মতো রোগ প্রতিরোধের জন্য অত্যাবশ্যক। যা শরীরের লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যাওয়ার একটি ফল। এই রোগের উপসর্গগুলি হল ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
মাড়ি থেকে রক্তপাত (Bleeding Gums): যখন আমাদের দাঁতের স্বাস্থ্যের কথা আসে, ভিটামিন সি সেক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু দাঁতকেই মজবুত করে না, মাড়িকেও রক্ষা করে। অতএব, ভিটামিন সি-র অভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ির রোগ হতে পারে।
ত্বকের রোগ (Skin Diseases): ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি কোলাজেন উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কোলাজেন একটি প্রোটিন, যা ত্বক, চুল, জয়েন্ট ইত্যাদির মতো সংযোজক টিস্যুতে প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কী ভাবে শরীরে ভিটামিন সি-র অভাব মেটাতে হবে?
ডায়েটে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার (Vitamin C Rich Foods) অন্তর্ভুক্ত করা সর্বোত্তম উপায়। প্রচুর পরিমাণে সাইট্রাস ফল, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাকসবজি খেতে হবে ও ধূমপান এড়ানো উচিত। কারণ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ধূমপায়ীদের শরীরে ভিটামিন সি -র পরিমাণ কমে যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারা দিনে ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। প্রয়োজনে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টগুলিও নেওয়া যেতে পারে। তবে যে কোনও সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ভিটামিন সি-র সেরা উৎস:
সাইট্রাস ফল (Citrus Fruits): ভিটামিন সি-র সব চেয়ে সাধারণ উৎস হল সাইট্রাস ফল। এটা বলা হয় যে প্রতি দিন একটি বাতাবি বা কমলা লেবু থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
পাকা পেঁপে (Ripe Papaya): একটি ছোট পাকা পেঁপেতে থাকে ৯৫.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। যদি হাড়ের ব্যথা কিংবা সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগেন, তখন প্রাতরাশে রাখতে পারেন বেশ খানিকটা পাকা পেঁপে।
পেয়ারা (Guava): একটি বড় পেয়ারায় থাকে ৩৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। মধ্যযুগে নাবিকদের মধ্যে ভিটামিন সি-র ঘাটতি খুব গুরুতর সমস্যা ছিল। তার থেকে নানা ধরনের অসুস্থতা দেখা দিত। তখন চিকিৎসকরা নিয়মিত পেয়ারা খাইয়ে রোগ সারাতেন বলে শোনা যায়।
ব্রকোলি (Broccoli): এক কাপ ভর্তি ব্রকোলি কুচিতে থাকে ৮১.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। তবে বেশি ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরমে রাখলে তার পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। অর্থাৎ, কাঁচা ব্রকোলিতে যতটা ভিটামিন থাকে, রান্নার পর ততটা থাকে না। তবুও অনেক খাদ্যের তুলনায় বেশি ভিটামিন সি শরীরে প্রবেশ করে নিয়মিত ব্রকোলি খেলে।
শাক (Shak): যে কোনও সবুজ শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। নিয়মিত শাক খেলে পাশাপাশি অনেকটা আয়রনও প্রবেশ করে শরীরে।
আলু: একটি বড় আলুতে থাকে ৭২.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
স্ট্রবেরি (Strawberry): এই ফলটি ভিটামিন ও খনিজের একটি ভালো উৎস। এখন আমাদের দেশেও অনেক চাষ করা হচ্ছে এই ফলটি। স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকে, যা আমাদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে কাজ করে।
টম্যাটো (Tomato): টম্যাটো পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়াও টম্যাটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট লাইকোপিন। টম্যাটোতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ থাকায় তা শরীরের রক্তচাপ সঠিক মাত্রায় রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। টম্যাটো দাঁত এবং হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। টম্যাটোতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত রাখে এবং হাড়ের সঠিক গঠনে সাহায্য করে।
ডালিম (Pomegranate): ডালিম হচ্ছে ভিটামিন সি-সহ অনেক গুণে ভরপুর। এটি শরীরে ভিটামিনের ঘাটতির অনেকটাই পূরণ করতে পারে। ডালিমের বীজ শরীরে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
কিউই ফল (Kiwi): কিউই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। পাশাপাশি শরীরে অনেক ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে।
আমলকি (Amla): আমলকি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। আমলকিতে সমস্ত ধরণের জরুরি খনিজ ও ভিটামিন থাকে, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা বা জুস বানিয়েও আমলকী খাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ আমলকী রোগপ্রতিরোধ শক্তি ও মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকী খেলে লিভার ভালো থাকার পাশাপাশি ব্লাড প্রেশারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় ত্বক, চুল ঠিক থাকে। সর্বোপরি শ্বাসযন্ত্র ভালো রাখে এই ফল।
ডাল (Pulses): প্রতি দিনের খাবারে ডাল অন্তর্ভুক্ত করেও ভিটামিন সি-র ঘাটতি মেটানো যায়। শুকনো ডালে ভিটামিন সি থাকে না, কিন্তু জলে ভেজানোর পর এগুলি থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাই প্রতি দিনের খাবারে ডাল অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডাল শরীরে প্রচুর প্রোটিনও সরবরাহ করে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।