বলেন বটে 'আমি ভাল আছি', আসলেই কি ভাল থাকেন মহিলারা? চিকিৎসকদের উদ্বেগ কিন্তু উল্টো কথাই বলছে

Last Updated:

Woman Health: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থেকে শুরু করে ক্রমাগত ক্লান্তি, একাধিক স্বাস্থ্যগত কারণে ভারতীয় মহিলারা একটি নীরব মহামারীর মুখোমুখি হচ্ছেন, যা 'আমি ভাল আছি' এই সামাজিকভাবে নির্ধারিত বাক্যাংশের আড়ালে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে লুকিয়ে রেখেছে।

এই জায়গায় এসে প্রশ্ন উঠবেই, ভারতীয় সমাজে মহিলাদের ভাল থাকা কোথায় হোঁচট খেয়ে চলেছে, কেন তার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না!
এই জায়গায় এসে প্রশ্ন উঠবেই, ভারতীয় সমাজে মহিলাদের ভাল থাকা কোথায় হোঁচট খেয়ে চলেছে, কেন তার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না!
২০০১ সালের কথা। মুক্তি পেয়েছিল অভিনেতা রাহুল বসুর পরিচালনায় প্রথম ছবি- এভরিবডি সেজ আয়্যাম ফাইন! ছবিতে মুখে ভাল আছি বলা আর ভাল থাকার সূক্ষ্ম রেখা অতি নিপুণ ভাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। সত্যি বলতে কী, কেউ কুশল প্রশ্ন করলে ভাল থাকার কথা জানানোই সামাজিক প্রথা। নেপথ্যে কারণ থাকে একাধিক, প্রচলিত সংস্কার এর একটা, খারাপ আছি বললে পাছে সত্যি সত্যিই দুর্দশায় পড়তে হয়!
সঙ্গে মিশে থাকে লোকলজ্জা, সঙ্কোচ, অন্যকে নিজের মানসিক এবং শারীরিক দুর্দশা বুঝতে না দেওয়ার অনীহার মতো কত শত কারণ! বিশেষ করে এই সঙ্কোচ ঘিরে রাখে মহিলাদের, ঠিক একসময়ে যেমন ঘিরে রাখত পর্দাপ্রথা। সমাজ বদলে গিয়েছে, সময় বদলে গিয়েছে, কিন্তু ‘আমি ভাল আছি’ জানান দেওয়া, খারাপ থাকা বুঝতে না দেওয়ার রীতি পালটায়নি। একসময়ে যেমন বাড়িতে অতিথি এলে নিজের খাবার তাঁকে বেড়ে দিয়ে পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে ঘুরতেন গৃহিণীরা, কাউকে বুঝতে দিতেন না যে তাঁরা খেতে পাননি, এও ঠিক সেরকম!
advertisement
advertisement
এই জায়গায় এসে প্রশ্ন উঠবেই, ভারতীয় সমাজে মহিলাদের ভাল থাকা কোথায় হোঁচট খেয়ে চলেছে, কেন তার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না! আসলে, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থেকে শুরু করে ক্রমাগত ক্লান্তি, একাধিক স্বাস্থ্যগত কারণে ভারতীয় মহিলারা একটি নীরব মহামারীর মুখোমুখি হচ্ছেন, যা ‘আমি ভাল আছি’ এই সামাজিকভাবে নির্ধারিত বাক্যাংশের আড়ালে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যাগুলিকে লুকিয়ে রেখেছে। যে সমাজে মহিলারা অন্যের যত্ন নেন এবং একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নিজের পেশাদার উভয় ভূমিকা পালন করে চলেন সমান তালে, সেখানে কিন্তু তাঁদের নিজের স্বাস্থ্যই প্রায়শই শিকার হয়ে ওঠে।
advertisement
আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল অ্যাসথেটিক এক্সপার্ট নৃপেন্দ্র গুহ এই প্রসঙ্গে সতর্ক করে বলছেন, “মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বেশ কয়েকটি রেড ফ্ল্যাগ উপেক্ষা করা উচিত নয়”। “এই বিপদ সঙ্কেতগুলোর মধ্যে রয়েছে কিছু জানান না দিয়ে ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি পাওয়া, ক্রমাগত ক্লান্তি, অনিয়মিত বা বেদনাময় ঋতুচক্র, ক্রমাগত শরীর ফুলে যাওয়া, স্তনের পরিবর্তন, শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা, দীর্ঘমেয়াদে মাথাব্যথা, ক্রমাগত পেট ব্যথা, অন্ত্রের অভ্যাসের পরিবর্তন, ত্বকের পরিবর্তন এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া।
advertisement
এই অবস্থাগুলো কেবল অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যের উপরেই প্রভাব ফেলে না, একই সঙ্গে ত্বক এবং চুলের সমস্যার দিকেও ঠেলে দেয়, যা বিষণ্ণতা, আত্মবিশ্বাস হ্রাস এবং স্বামী বা স্ত্রীর মনোযোগ হারানোর অনিশ্চয়তার কারণ হতে পারে। লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করা একটি পূর্বশর্ত। এটি আমাদের নিজের যত্ন নিতে এবং দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা করবে”, বলছেন ডা. গুহ।
advertisement
বিশেষজ্ঞরা ক্রমশই আরও বেশি করে এই নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন যে সামাজিক কলঙ্ক, নিজের যত্ন নেওয়ার সময়ের অভাব এবং তার পাশাপাশি সচেতনতার অভাবও নারীদের সময়মতো চিকিৎসা সহায়তা পেতে বাধা দিচ্ছে। চিকিৎসায় এই বিলম্বের ফলে প্রায়শই প্রাথমিক রোগ নির্ণয় হয় না এবং এর ফলে স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।
Dr. Arindam Banerjee, President of World Orthopaedic Concern International
advertisement
Dr. Arindam Banerjee, President of World Orthopaedic Concern International
ওয়ার্ল্ড অর্থোপেডিক কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি ডা. অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় পেশি এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা নাটকীয়ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করেন। “মহিলাদের প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হল অস্টিওপোরোসিস। অতীতে বয়স্ক মহিলাদের কোমর নাকের মতো বেঁকে থাকা একটা সাধারণ বিষয় ছিল। এই শারীরিক বিকৃতি ছিল দুর্বলতা, পুষ্টির অভাব, একাধিক গর্ভাবস্থা এবং অনেক শিশুকে স্তন্যপান করানোর সংমিশ্রিত কারণ, যার ফলে তাদের ক্যালসিয়ামের অভাব হত এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি থাকত”, জানিয়েছেন ডা. বন্দ্যোপাধ্যায়।
advertisement
কিন্তু যা দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে এসে লক্ষণগুলো অনেক বেশি গোপন এবং পরিণতি এখন আরও ভয়াবহ। “আজকাল ভারতের অনেক মেয়েই খুব কমই ব্যায়াম করে। তারা স্কুলে যায়, সারা দিন ধরে কেবল টিউশন নিয়ে যায়। মানুষের হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকার জন্য ওজন বহনকারী কার্যকলাপের প্রয়োজন হয়, যার ফলে বোন ব্যাঙ্ক তৈরি হয় এবং পেশিও সুস্থ থাকে। জীবনের প্রথম বিশ বছর ধরে সুস্থ পেশি এবং হাড় তৈরিতে ব্যর্থ হলে এক সময়ে এসে অস্টিও-সারকোপেনিয়া, আক্ষরিক অর্থেই পেশি এবং হাড়ের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে আজীবন পেশির ব্যথা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো রোগ দেখা দেয়। বসে থাকা যেন নতুন ধূমপান”, ডা. বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করে দিয়ে বলেন।
Vikram Saha, Director of C.C. Saha Ltd. and C.C. Saha Mediacentre
Vikram Saha, Director of C.C. Saha Ltd. and C.C. Saha Mediacentre
চিকিৎসার অ্যাকসেস এবং তার ব্যয়ভার বহন করা গুরুত্বপূর্ণ বাধা হিসেবে রয়ে গিয়েছে ঠিকই, তবে বিশেষ করে মহিলাদের চাহিদা পূরণকারী স্বাস্থ্য পরিষেবারও চাপ রয়েছে। “একজন মহিলা তাঁর পরিবার এবং কর্মক্ষেত্র উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তবুও তিনি প্রায়শই সময়, বাজেটের সীমাবদ্ধতা বা সচেতনতার অভাবের কারণে নিজের স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে উঠতে পারেন না”, বলছেন সি.সি. সাহা লিমিটেড এবং সি.সি. সাহা মিডিয়াসেন্টারের পরিচালক বিক্রম সাহা। “এই জন্যই আমরা পেশাদার স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা প্রদানকে অগ্রাধিকার দিয়েছি যা সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী”।
চিকিৎসকদের বার্তা স্পষ্ট- সবারই, বিশেষ করে মহিলাদের শরীরের কথা শুনতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। যা সামান্য লক্ষণ বলে মনে হতে পারে, তা কিন্তু আদতে গুরুতর এক সতর্কবার্তা হতে পারে! ভাল থাকার ভান করার মূল্য এক সময়ে খুব বেশিই হয়ে উঠতে পারে- এর ফলে জীবনও নষ্ট হতে পারে।
view comments
বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
বলেন বটে 'আমি ভাল আছি', আসলেই কি ভাল থাকেন মহিলারা? চিকিৎসকদের উদ্বেগ কিন্তু উল্টো কথাই বলছে
Next Article
advertisement
Rhino rescue: বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
বিপর্যয়ের সময় ভেসে গিয়েছিল তারা, অবশেষে ঘরে ফিরল ১০ গন্ডার! সফল 'অপারেশন রাইনো'
  • ১৩ দিনের অপারেশন রাইনোতে ১০টি গন্ডার উদ্ধার করেছেন বনকর্মীরা

  • বিপর্যয়ের সময় জলদাপাড়া থেকে ভেসে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি গন্ডার

  • অক্লান্ত পরিশ্রমের পর বনকর্মীরা গন্ডারগুলোকে জঙ্গলে ফেরাতে সক্ষম হন

VIEW MORE
advertisement
advertisement