#কলকাতা: শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া অন্যতম বড় সমস্যা। মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এই কারণে। হার্টে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার বিষয়ে আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশি জানি। কিন্তু পায়েও রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এর পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু পায়ে রক্ত জমাট বাঁধলেও অনেকে তা বুঝতে পারেন না। ফলে চিকিৎসা সঠিক সময়ে হয় না। ফলে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে (Beware of these signs of blood clot in your legs)।
রক্ত জমাট বাঁধলে তা যে সব সময় খারাপ পরিণতি হয় তা সম্পূর্ণ ভুল। কিছু ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শরীরের কোনও অংশ কেটে গেলে রক্ত বের হয়। এবং তা যদি অতি দ্রুত জমাট বেঁধে যায় তাহলে রক্ত বের হওয়া বন্ধ হয়। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ভালো। কিন্তু শরীরের ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধলেই বিপদ। হার্ট, মস্তিষ্ক-সহ একাধিক অংশে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এক্ষেত্রে বড়সড় বিপদ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ শরীরের ভিতর রক্ত জমাট বাঁধলে তা নিজে থেকে ফের তরল হয় না। বাইরে থেকে কোনও ওষুধ প্রয়োগ করার পর তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এবং রক্ত জমাট বাঁধার পর শিরা ও ধমনীর মধ্যে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা দেখা যায়। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে সঠিক ভাবে রক্ত পৌঁছয় না। বাড়তে থাকে বিপদ। কোনও শিরা বা ধমনীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তাকে বলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (Deep Vein Thrombosis) সংক্ষেপে DVT বলে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জমাট বাঁধার পরিস্থিতি তৈরি হলে অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয় DVT-র মাধ্যমে। কিন্তু Deep Vein Thrombosis বা DVT কী? জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত…
আরও পড়ুন- টি টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শেষের পর কী বললেন বিরাট কোহলি?
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস কী?
ন্যাশনাল ব্ল্যাড ক্লট অ্যালায়েন্স (National Blood Clot Alliance) অনুযায়ী, প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় তাদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু হয় রক্ত জমাট বাঁধার কারণে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। ২৫ বছর হোক বা ৮৫ বছর বয়স হোক, যে কোনও বয়সে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকে। ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হয় যখন শরীরের কোনও শিরা বা ধমনীর মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এই পরিস্থিতিকে অনেক সময় শুধু থ্রম্বোসিসও বলা হয়। পায়ের ক্ষেত্রেও ডিপ ভেইন সিনড্রোম দেখা যায়। মূলত দীর্ঘক্ষণ একই ভাবে শুয়ে থাকলে বা পায়ের কোনও নড়াচড়া না করলে এই সমস্যা তৈরি হয়। যদি সঠিক সময়ে DVT-এর সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমনকী পায়ে রক্ত জমাট বাঁধলে মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। সাধারণ ভাবে খুব একটা মারাত্মক পরিস্থিতি না হলেও জমাট বাঁধা রক্ত যদি ব্রেন বা ফুসফুসে পৌঁছে যায় তখনই চিন্তার পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখনই ঝুঁকি বেড়ে যায়। মৃত্যুও হতে পারে রোগীর। কিন্তু কী ভাবে বুঝবেন যে আপনার পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে?
পায়ে জমাট বাঁধার উপসর্গগুলি হল-
পা ফুলে যাওয়া
পায়ে রক্ত জমাট বাঁধলে পা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সমস্যা একটি পায়ে দেখা দিতে পারে অথবা দু'টি পায়ে এই সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাঝে মাঝে পা অসাড় হয়ে যেতে পারে। যার ফলে হাঁটতে সমস্যা দেখা দেয়। তবে দু'টি পায়ে এই উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। সাধারণত একটি পায়ে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। এটি অতি সাধারণ উপসর্গ। এছাড়াও পায়ের বিভিন্ন পেশিতে টান ধরতে পারে।
পা লাল হয়ে যেতে পারে…
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হলে পা লাল হয়ে যেতে পারে। এমনকী পায়ের চামড়ার রঙ পরিবর্তন হতে পারে। পায়ের ভিতরে যেহেতু রক্ত জমাট বেঁধে যায় তাই এই উপসর্গ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকী লাল হয়ে যাওয়া অংশে হাত দিলে অসহ্য ব্যথা অনুভব হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন?
যদি DVT-র কোনও উপসর্গ প্রকাশ পায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন। কারণ যত দ্রুত এই রোগের চিকিৎসা করানো সম্ভব ততই মারাত্মক কোনও পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই সমাধান করা সম্ভব। এবং যদি পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয় তাহলে কোনও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। কারণ এই পরিস্থিতির চিকিৎসার জন্য কোনও বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ইঞ্জেকশন বা ওষুধ খাওয়ানো দরকার। সে কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকা জরুরি। এছাড়া পালমোনারি এম্বলিজম (Pulmonary Embolism)-এর পরিস্থিতি তৈরি হলেও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। DVT-র একটি রূপ হল পালমোনারি এম্বলিজম।
আরও পড়ুন- মিষ্টি খেলেই কি Diabetes রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে? এক ক্লিকেই ধারণা হবে পরিষ্কার
কাদের ঝুঁকি সব থেকে বেশি…
DVT যে কোনও বয়সে পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ঝুঁকি সব থেকে বেশি থাকে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের। এছাড়াও শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন যাঁদের বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা যায়। পাশাপাশি রক্তের সম্পর্কের মধ্যে কেউ যদি DVT-তে ভোগেন, অন্যরাও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।এছাড়াও যে সব মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধ খান অথবা মেনোপজের পর হরমোন নিচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া অনেক অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ দিন রোগীকে শুয়ে থাকতে হতে পারে- সেক্ষেত্রে রোগীর DVT-র সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূলত ক্যানসার, হার্ট, নিউমোনিয়া, হাড় ভাঙা ইত্যাদি ক্ষেত্রে রোগীদের DVT দেখা দিতে পারে।
সমাধান কী ভাবে?
প্রথমত শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বজায় রাখতে হবে।
প্রতি দিন নিয়ম করে আধ ঘণ্টা হাঁটতে হবে। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকে।
যাঁরা দীর্ঘক্ষণ অফিসে বসে কাজ করেন তাঁরা কাজ করার ফাঁকে অল্প হাঁটাহাঁটি করতে হবে। পায়ের পেশি যাতে সচল থাকে তার জন্য অল্প কিছু ব্যায়াম করতে হবে।
দীর্ঘক্ষণ ধরে কোনও যাত্রা করলে পা সচল রাখতে হবে। ট্রেনে যাতায়াত করলে একঘণ্টা অন্তর অন্তর একটু হেঁটে আসতে হবে।
যাঁরা শয্যাশায়ী তাঁদের নিয়ম করে পায়ের ব্যায়াম করিয়ে দিতে হবে। যাতে রক্ত সঞ্চালন সঠিক থাকে সেই দিকে নজর রাখতে হবে।
এছাড়াও অনেক ওষুধ ব্যবহারে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Blood Clot