কলকাতা: সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে জোট ও তৃণমূলের দড়ি টানাটানি। পঞ্চায়েত ভোটে, সাগরদিঘি মডেল রোখার চেষ্টা।সাগরদিঘি মডেল রুখতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস।দলে বাড়তে চলেছে সংখ্যালঘু নেতাদের গুরুত্ব।
ভাঙড়ের দায়িত্বে শওকত, সাগরদিঘির দায়িত্বে এক ঝাঁক সংখ্যালঘু নেতা।শুক্রবার কালীঘাটে দলের বৈঠকে সাগরদিঘিতে হারের কারণ খতিয়ে দেখতে আলোচনা হওয়ার কথা। পঞ্চায়েতে একাধিক সংখ্যালঘু মুখকে দায়িত্বে আনতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: আমাকে চড় মারুন, কিন্তু কারও চাকরি খাবেন না! চাকরি হারাদের হয়ে জোর সওয়াল মমতার
সূত্রের খবর, আগামী শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।ইতিমধ্যেই সাগরদিঘি উপনির্বাচন হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিভিন্ন সংখ্যালঘু এলাকায় গত কয়েক বছরে কী কী কাজ করা হয়েছে? কত সংখ্যক কাজ বাকি আছে তার যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের ফল যাতে অটুট থাকে সেই বিষয়ে রণকৌশল স্থির করছে শাসক দল।
সাগরদিঘিতে হারের কারণ কী? প্রাথমিক ভাবে দলীয় রিপোর্টে উঠে এসেছে, এই আসন কখনওই সহজ ছিল না তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে।২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল এই আসনে ৩৮.০২ শতাংশ ভোট। বামেরা পেয়েছিল ৩৪.৮৫ শতাংশ ভোট।কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছিল তৃণমূলের। যদিও এই আসনে টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসাবে লড়াই করেছিলেন আমিনুল ইসলাম। কংগ্রেস তাঁকে সাসপেন্ড করে। সমর্থন করেন অধীর চৌধুরী। তিনি প্রায় ১৫.৫৭ শতাংশ ভোট পান। তৃণমূল কংগ্রেস জয় পায় ৪৫৭৪ ভোটে।
আরও পড়ুন: 'এই পার্থদাকে আমি চিনতাম না', আক্ষেপ ফিরহাদের! আয়নার সামনে দাঁড়ান, কটাক্ষ বিরোধীদের
২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস জোট হলেও মুর্শিদাবাদে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হয় তাদের। সেখানে তৃণমূল জেতে মাত্র ৫২১৪ ভোটে। তৃণমূল কংগ্রেস পায় ২৬.২১ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পায় ২৩.১৬ শতাংশ ভোট। বামেরা পায় ২৩.০৩ শতাংশ ভোট। নির্দল পায় ১৮.৬৭ শতাংশভোট।
যদিও ২০২১ সালে গোটা রাজ্যেই লড়াই হয় তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপির মধ্যে৷ ওই নির্বাচনে সাগরদিঘিতে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৫১ শতাংশ ভোট। বিজেপি পায় ২৪ শতাংশ ভোট৷ কংগ্রেস পায় ১৯ শতাংশ ভোট। তৃণমূল কংগ্রেস ৫০,২০৬ ভোটে জেতে।
উপনির্বাচন সরকার গড়ার ভোট নয়। ফলে বাম ও কংগ্রেসের যে ভোট তৃণমূল কংগ্রেসে গিয়েছিল তা আবার ফেরত যায়। এমন কি, ২০২১-এর তুলনায় ভোট কমে যায় বিজেপির৷ তাই তৃণমূলের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।।এই প্রসঙ্গে তারা উদাহরণ টেনেছেন সামশেরগঞ্জ বিধানসভা আসনের ভোটও৷ যেখানে পরে নির্বাচন হওয়ায় ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের সময়ের মতই ভোটের জয়ের ব্যবধান ছিল না।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রার্থী নিয়ে প্রবল ক্ষোভ ছিল সাগরদিঘিতে। দলের প্রার্থী দেবাশিষ বন্দোপাধ্যায় প্রবল ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন দলের নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে। এমন কি, প্রচারে যাওয়া একাধিক নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ রাখায় অনীহা ছিল তাঁর। এ ছাড়া দলের নিচুতলার কর্মীদের কাছে এখনও উনি প্রয়াত সুব্রত সাহার বিরোধী বলেই পরিচিত হয়ে আছেন।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একাধিক জায়গায় প্রচারে ছিল না দলের পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। বিভিন্ন গ্রামে প্রচারে গিয়ে তা নজরে এসেছে অনেকের। এর সম্ভাব্য কারণ হিসাবে অনেকেই বলছেন বিধায়ক জাকির হোসেনের অফিসে আয়কর হানার পরে অনেকে ভয় পেয়েছেন। বারবার বিরোধী দলনেতার প্রচারে যাওয়ায় সেটা আরও তীব্র হয়েছে।
তার উপর, ভোটের ঠিক আগে কংগ্রেসের এক নেতার গ্রেফতারি ভাল চোখে নেননি ভোটাররা৷ ওই নেতা যে বুথের ভোটার, সেখানে কংগ্রেস পেয়েছে ৮৮ শতাংশ ভোট। ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রমাণিত। সেটা কেন স্থানীয় নেতৃত্ব আঁচ করে উঠতে পারেননি, তা নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠছে।
এ ছাড়াও রিপোর্টে অবশ্যই উল্লেখ হয়েছে, বিধানসভা ভোট মিটে যাওয়ার পর নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে ব্লক বা জেলা স্তরের নেতাদের যোগাযোগ ক্রমশ কমেছে। ফলে কোথায় ক্ষোভ রয়েছে, তা আঁচ করা যায়নি। কোন কোন কাজ বাকি রয়েছে, তার তালিকাই করে উঠতে পারা যায়নি। তাই উপনির্বাচনে ভরাডুবি বলে মনে করছে দল।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sagardighi, TMC