নজরে ১ কোটি ভোট, কেন বুদ্ধ-অধীরদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুভেন্দু?
- Published by:Debamoy Ghosh
- news18 bangla
Last Updated:
বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর মুখে নিয়মিত বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে৷
#কলকাতা: নন্দীগ্রামে বাম সরকারের আমলে জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন৷ তৃণমূলে থাকাকালীনও বামেদের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তিনি৷ অথচ বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকে সেই শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেই বামেদের প্রশংসা৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসু তো বটেই, সম্প্রতি প্রমোদ দাশগুপ্ত, বিনয় চৌধুরী, গীতা মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সুকুমার সেনগুপ্তের মতো সিপিএম নেতাদের নামও৷ এমন কি, প্রকাশ্যেই বাম সমর্থকদের কাছে বিজেপি-কে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷
কিন্তু কেন হঠাৎ বামেদের প্রশংসায় এত মুখর কেন হলেন শুভেন্দু? মুখে বিজেপি নেতা বলছেন, 'আমি কখনওই বাম রাজনীতির বিরোধী ছিলাম না৷ লক্ষ্মণ শেঠের মতো হার্মাদদের বিরোধিতা করেছি৷' শুধু তাই নয় গত ২৫ জানুয়ারি তমলুকের সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসুর সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর গলায়৷ এমন কি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর কৃচ্ছসাধনের দরাজ প্রশংসা করেন তিনি৷
advertisement
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুভেন্দু এই বাম- কংগ্রেস প্রীতির পিছনে আসলে রয়েছে নিপাট ভোটের অঙ্ক৷ হিসেব বলছে, বাংলায় ২০১৬ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে বাম এবং কংগ্রেসের থেকে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট গেরুয়া শিবিরে এসেছে৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভোট ধরে রাখারই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন দুঁদে রাজনীতিবিদ শুভেন্দু৷ অথচ এই সময়কালের মধ্যে রাজ্যে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে মাত্র তিন শতাংশ মতো৷ ফলে ধরে নেওয়াই যায় যে বাম-কংগ্রেস শিবির থেকে তৃণমূল বিরোধী ভোটের সিংহভাগটাই বিজেপি-র ঝুলিতে এসেছে৷
advertisement
advertisement
আর এই অঙ্ক কষেই সিপিএম নেতারাও স্বীকার করছেন তৃণমূল বিরোধী এই বিপুল সংখ্যক ভোটাররা যাতে ফের বাম এবং কংগ্রেসের দিকে ফের ঝুঁকে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতেই তাঁদের মন জয়ে লাগাতার বাম-কংগ্রেস নেতাদের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে শুভেন্দুর গলায়৷ এমন কি, বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরবে বলেও বাম সমর্থকদের বার বার আশ্বস্ত করছেন শুভেন্দু৷
advertisement
সিপিএম নেতা অমিয় পাত্রের কথায়, 'শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে হয়তো জোর চর্চা চলছে৷ কিন্তু উনি কী বলছেন তাকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না৷ শুভেন্দু অধিকারী এখন অনেক বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু তৃণমূলে থাকার সময় তিনিই বড় বড় পদ আঁকড়ে ছিলেন৷ তাঁর পরিবারের সদস্যরাও একাধিক পদে ছিলেন৷ শুভেন্দু অধিকারী বাম-কংগ্রেস নেতাদের আচমকা প্রশংসা করছেন যাতে বিজেপি-র ঝুলিতে যাওয়া আমাদের ভোট ধরে রাখা যায়৷ কিন্তু ওনার সেই চেষ্টা সফল হবে না৷ কারণ অনেক জেলাতেই বাম মনোভাবাপন্ন মানুষ ফের আমাদের উপরেই আস্থা রাখতে শুরু করেছেন৷'
advertisement
গেরুয়া শিবিরে চলে যাওয়া এই ৩৩ শতাংশ ভোটে ভাগ বসাতে চেষ্টার কসুর করছেন না তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ আর এই চেষ্টা সফল হলে ২০২১-এর কঠিন পরীক্ষায় তাঁর কাজটাও অনেক সহজ হয়ে যাবে৷
২০১৬-এর নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী, এ রাজ্যে বিজেপি ১০.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রাপ্ত ভোট একধাক্কায় বেড়ে হয় ৪০.৩ শতাংশ৷ ধর্মের ভিত্তিতে ভোট মেরুকরণের রাজনীতিতে যে এ রাজ্যেও বিজেপি বেশ কিছুটা সফল, গত কয়েক বছরে বাংলায় তাদের উল্লেখযোগ্য ভোট বৃদ্ধিতেই তা স্পষ্ট৷
advertisement
আরও খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে বামেদের ভোট প্রায় ৯.৮৮ শতাংশ কমেছে৷ আবার ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে বামেদের মোট ভোট ক্ষয়ের হার বেড়ে হয়েছিল ১৬ শতাংশ মতো৷ আবার কংগ্রেসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে তারা ৮.৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সেখানে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা বেড়ে হয়েছিল ১২.৩ শতাংশ৷ কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের হার ৯.৬ শতাংশ থেকে কমে হয় ৫ শতাংশ৷
advertisement
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার কমেনি৷ ফলে এর থেকেই স্পষ্ট যে বাম এবং কংগ্রেস যে ভোট হারিয়েছে, তার থেকে লাভবান হয়েছে বিজেপি৷ ২০১১ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ৩৯ শতাংশ ভোট, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভোটের হার বেড়ে হয় ৩৯.৫৬ শতাংশ৷ আবার ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৯.০৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয় ৪৩.৩ শতাংশ৷
বাম এবং কংগ্রেস শিবির থেকে বিজেপি-র ঝুলিতে যাওয়া এই ভোটের সংখ্যা কমবেশি ১ কোটি৷ ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তা ধরে রাখা বিজেপি-র কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ সূত্রের খবর, শুভেন্দুকে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব যে দায়িত্বগুলি দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বাম-কংগ্রেস থেকে প্রাপ্ত এই ভোট ধরে রাখা৷ ফলে নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই দরাজ গলায় বাম-কংগ্রেস নেতাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন বিজেপি নেতা৷
Sujit Nath
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
Jan 30, 2021 6:09 PM IST






