Opinion: বিদ্যাসাগরের তোলা প্রশ্নগুলি আজও আমাদের নাড়া দেয়, তাঁর স্বপ্নের পশ্চিমবঙ্গ গড়তে হবে: সুকান্ত মজুমদার

Last Updated:

Sukanta Majumdar: বিদ্যাসাগর প্রমাণ করেছিলেন, দারিদ্র্য কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়, মনোবলই মানুষকে মহৎ করে তোলে।

বিদ্যাসাগর নিয়ে কেন্দ্রের ভাবনা কী, জানালেন সুকান্ত মজুমদার
বিদ্যাসাগর নিয়ে কেন্দ্রের ভাবনা কী, জানালেন সুকান্ত মজুমদার
সুকান্ত মজুমদার
বিদ্যাসাগরের অসমাপ্ত নবজাগরণ: পশ্চিমবঙ্গের পুনর্জাগরণের রূপরেখা
১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহে জন্ম নিয়েছিলেন এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, যিনি শুধু বাংলাকেই নয়, সমগ্র ভারতবর্ষকে মানবতার এক নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। অগাধ পাণ্ডিত্য, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সীমাহীন করুণা দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সমাজ সংস্কারের এক অমর ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, “৪০ কোটির এই বঙ্গ সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় ঈশ্বরের এক অভূতপূর্ব আশীর্বাদ”। আজকের বাংলার এই অন্ধকার সময়ে দাঁড়িয়ে সেই উক্তি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
advertisement
advertisement
বিদ্যাসাগর প্রমাণ করেছিলেন, দারিদ্র্য কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়, মনোবলই মানুষকে মহৎ করে তোলে। প্রদীপের ক্ষীণ আলোয় পথ চলা সেই কিশোরই হয়ে উঠেছিলেন সংস্কৃত কলেজের বিস্ময় প্রতিভা। অথচ তিনি নিজের পাণ্ডিত্যকে ব্যক্তিগত যশের জন্য নয়, ব্যয় করেছিলেন সমাজের মুক্তির জন্য। নারীশিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহের স্বীকৃতি, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিদ্যাসাগর ছিলেন এক নির্ভীক সৈনিক। নিজের সন্তানের বিয়ে বিধবার সঙ্গে দিয়ে তিনি তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের বিরুদ্ধে এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘোষণা করেছিলেন, প্রমাণ করেছিলেন সংস্কার মানে কেবল প্রচার নয়, বাস্তবায়ন।
advertisement
কিন্তু বিদ্যাসাগরকে জন্ম দেওয়া সেই রত্নগর্ভা রাজ্যই আজ তাঁর আদর্শের পরিপন্থী হয়ে উঠেছে। যে পশ্চিমবঙ্গের নারীর মুক্তির জন্য তিনি জীবনপাত করেছিলেন, সেই রাজ্যেই আজ মেয়েদের স্কুলছুট হওয়ার হার সর্বোচ্চ। বাল্যবিবাহে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ, অকাল মাতৃত্বে জর্জরিত অসংখ্য কিশোরী। বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন শিক্ষা হয়ে উঠুক চরিত্র গঠনের মূল মাধ্যম। কিন্তু আজ প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি আর অবৈধ নিয়োগ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রের সমার্থক হয়ে উঠেছে। বিদ্যাসাগর নারী ক্ষমতায়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন, কিন্তু আজ এই পশ্চিমবঙ্গের মেয়েরা অসুরক্ষিত, অবহেলিত, বঞ্চিত। বিদ্যাসাগরের নামে মূর্তি বসিয়ে, মাল্যদান তো চলছে, কিন্তু তাঁর আদর্শকে প্রতিদিন অপমান করা হচ্ছে। বিদ্যাসাগরের নৈতিকতাকে পদদলিত করছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। নিজের ব্যবহার করা উত্তরীয় বিদ্যাসাগরের মূর্তির গলায় পরিয়ে তাঁকে অপমান করার চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন তিনি।
advertisement
অন্যদিকে কেন্দ্রের সরকার বিদ্যাসাগরের আদর্শকে কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করছে। “বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও” থেকে শুরু করে বাল্যবিবাহ রোধে কঠোর ব্যবস্থা, নারীর কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ, সবই বিদ্যাসাগরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তিন তালাক বিলের মাধ্যমের সংখ্যালঘু মহিলাদের অধিকারকে সুনিশিত করেছে কেন্দ্র সরকার। ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের সম্মান। কারণ আমরা মানি, শিক্ষা মানে কেবল কিছু কাগজে লেখা ডিগ্রি নয়, শিক্ষা মানে নৈতিকতা, চরিত্র গঠন আর সাহস।
advertisement
বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনের শেষ সময়েও প্রান্তিক মানুষের সেবা করে গিয়েছেন। তিনি সাঁওতাল পরগনার অজ্ঞাতপ্রায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি দাতব্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসালয়। অথচ আজ বাংলার প্রান্তিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই রাজ্যের সরকার ভোটব্যাঙ্ক রক্ষায় আয়ুষ্মান ভারত আটকে দিয়েছে। সহানুভূতিহীন জ্ঞান অর্থহীন। কিন্তু রাজ্যের এই সরকার প্রমাণ করেছে, রাজনীতিহীন সহানুভূতি তাদের কাছে অর্থহীন।
advertisement
দীর্ঘ এক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও, বিদ্যাসাগরের তোলা প্রশ্নগুলি আজও আমাদের সমাজের সম্মিলিত বিবেকে কোথাও যেন নাড়া দেয়। যে মানবসভ্যতা তাঁর নারীজাতিকেই রক্ষা করতে বারংবার ব্যর্থ হয়, তাদের কি আদৌও সভ্য বলা যায়? যে শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু ডিগ্রিলাভ হয়, কিন্তু মর্যাদা বৃদ্ধি হয় না, তাকে কি আদৌও সাফল্য বলে গণ্য করা যায়? সাহস ও জ্ঞানের মোড়কে যে উত্তরগুলি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দিয়ে গিয়েছেন, তা আমাদের পাথেয়। কেবল মূর্তিতে মাল্যদানের জন্য নয়, বিদ্যাসাগর রয়েছেন প্রত্যেক বাঙালির মননে, প্রত্যেক শিক্ষাঙ্গনে যেখানে মেধার চর্চা হয়, প্রত্যেক প্রতিবাদী সত্ত্বায়, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালায়। তাঁর আসমুদ্রহিমাচল জ্ঞান অক্ষয় হয়ে থেকেছে। গোটা একটি সভ্যতা যখন খারাপ সময়েও ফের নবজাগরণের আশায় দিন গুনছে, সেই সভ্যতার শিকড়কে দিনের পর দিন মজবুত করে রেখেছে বিদ্যাসাগরের জ্ঞানের দীপ্তি। আর তাই বিদ্যাসাগরকে প্রকৃত অর্থে সম্মান জানাতে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজ পূরণ করার অঙ্গীকার নিতে হবে আমাদেরকেই। এমন পশ্চিমবঙ্গ গড়ে তুলতে হবে যেখানে মুক্ত মেধার আনাগোনা থাকবে, যেখানে চরিত্রের গঠন হবে ও সাহসিকতা পুনর্জাগরিত হবে।
advertisement
(এই বক্তব্য লেখকের নিজস্ব মতামত)
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
Opinion: বিদ্যাসাগরের তোলা প্রশ্নগুলি আজও আমাদের নাড়া দেয়, তাঁর স্বপ্নের পশ্চিমবঙ্গ গড়তে হবে: সুকান্ত মজুমদার
Next Article
advertisement
West Bengal Weather Update: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ভ্রূকুটি ! পুজোর দিনগুলিতে কবে কবে বৃষ্টি হতে পারে? জেনে নিন
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ভ্রূকুটি ! পুজোর দিনগুলিতে কবে কবে বৃষ্টি হতে পারে? জেনে নিন
  • বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ভ্রূকুটি !

  • বৃষ্টি হবেই

  • পুজোর দিনগুলিতে কবে কবে বৃষ্টি হতে পারে?

VIEW MORE
advertisement
advertisement