Samaresh Majumdar: হৃদি ভেসে যাওয়া তিস্তা আর করলানদীর স্রোত বয়ে চলে তাঁর সাতকাহনের উত্তরাধিকারে
- Published by:Arpita Roy Chowdhury
- news18 bangla
Last Updated:
Samaresh Majumdar: অলকানন্দার বদলে তাঁর হৃদি ভেসে যায় উত্তরবঙ্গের তিস্তা আর করলানদীর স্রোতে৷ পরম যত্নে পাঠকের হৃদমাঝারেও সেই জলতরঙ্গ বপন করেছিলেন সমরেশ মজুমদার৷
মাধবীলতা নিছক কোমল ফুল নয়৷ বরং তাঁর কলমে বিপ্লবের আর এক নাম মাধবীলতা৷ যাঁর জীবনসংগ্রামের কাছে ফিকে হয়ে যায় দিন বদলের জন্য অনিমেষের লড়াইও৷ ভাস্বর হয়ে ওঠার আগে সেই সংগ্রামী কলমের সলতে পাকানোর পর্ব শুরু হয়েছিল জলপাইগুড়ির চা-বাগানের সবুজ আভায়৷ অলকানন্দার বদলে তাঁর হৃদি ভেসে যায় উত্তরবঙ্গের তিস্তা আর করলানদীর স্রোতে৷ পরম যত্নে পাঠকের হৃদমাঝারেও সেই জলতরঙ্গ বপন করেছিলেন সমরেশ মজুমদার৷
১৯৪৪-এর এক বসন্তদিনে, ১০ মার্চ তাঁর জন্ম জলপাইগুড়ির গয়েরকাটা চা বাগানে৷ জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে পাশ করার পর বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে৷ এর পর স্নাতকোত্তর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সদ্য স্বাধীন হওয়া জন্মভূমিকে নানা বিক্ষোভ আঁচে উত্তপ্ত হতে দেখার মাঝেই তাঁর বড় হওয়া৷ সেই আঁচের ওম গায়ে মেখেছিলেন তিনি নিজেও৷ নিজে যতটা আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি নিজের কলমকে অবগাহন করিয়েছিলেন সেই অগ্নিভ দোয়াতে৷
advertisement
১৯৭৯-৮০ সালে ধারাবাহিক পর্বে দেশ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘উত্তরাধিকার’ উপন্যাস৷ তার এক দশক আগে স্তিমিত হয়েছে নকশাল আন্দোলন৷ তবে এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট আরও অনেক বেশি বিস্তৃত৷ ১৯৪৭ থেকে খাদ্য আন্দোলনের পশ্চিমবঙ্গ ছিল এই উপন্যাসের পটভূমি। নিজেই পরবর্তীতে বার বার বলেছেন কী করে সাধারণ মানুষ কংগ্রেস সম্পর্কে মোহমুক্ত হচ্ছে, অথচ বিরোধীরা দলবদ্ধ হতে পারছে না, তা কিশোর অনিমেষের চোখ দিয়ে দেখাতে চেয়েছিলেন। আন্দোলনে উত্তাল কলকাতায় পা দিয়ে পুলিশের গুলিতে অনিমেষের আহত হওয়ার পর উপন্যাস শেষ করেছিলেন৷ কিন্তু পাঠকদের দাবিতে তাঁকে এই প্রেক্ষাপট নিয়ে আবার ফিরে আসতে হয়েছিল৷ লিখেছিলেন ‘কালবেলা’ এবং ‘কালপুরুষ’৷ বাংলা সাহিত্যে কালজয়ী ট্রিলজির মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর এই কলমচারণা৷
advertisement
advertisement
আরও পড়ুন : চলে গেলেন কালবেলা, সাতকাহন-এর স্রষ্টা সমরেশ মজুমদার
ট্রিলজির দৌলতে ভূয়সী জনপ্রিয়তা এলেও তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়েছিল আরও বেশ কিছু বছর আগে৷ ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর ছোটগল্প ‘দৌড়’৷ তিনি উত্তরবঙ্গ ছেড়ে চলে এলেও বরেন্দ্রভূমি কিন্তু তাঁকে ছেড়ে যায়নি৷ বার বার লেখালেখিতে উঠে এসেছে বাংলার উত্তর অংশের কথা৷ তাঁর ট্রিলজির আঁতুড়ভূমি তো বটেই৷ সমরেশ মজুমদারের ‘সাতকাহন’ এবং কিশোরপাঠ্য গোয়েন্দা অর্জুন সিরিজেও উত্তরবঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷
advertisement
ছোটগল্প, উপন্যাস, কিশোরসাহিত্য থেকে ভ্রমণকাহিনি-তাঁর অনায়াস গতিতে ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্যের শাখাপ্রশাখা৷ পাঠকদের মননের সঙ্গী হয়েছে ‘গর্ভধারিণী’, ‘সিংহবাহিনী’, ‘মৌষলকাল’, ‘দিন যায় হাত যায়’, ‘বুনো হাঁস’, ‘তেরো পার্বণ’, ‘স্বপ্নের বাজার’, ‘আট কুঠুরি নয় দরজা’, ‘কলকাতায় নবকুমার’, ‘অগ্নিরথ’-এর মতো সৃষ্টি৷ তাঁর গোয়েন্দা অর্জুনও কিন্তু নতুন ধারা সূচিত করেছিল বাংলা সাহিত্যে৷ সদ্য তরুণ অর্জুনের কোনও সহকারী ছিল না৷ বরং সে নিজেই অমল সোমের শিষ্য, কিন্তু আবার কাহিনির প্রধান চরিত্রও ৷ সহকারী বিহীন এই গোয়েন্দার সঙ্গে অভিযানে রঙিন মাত্রা যোগ করত মেজর-এর চরিত্রটি৷ হু ডান ইট বা অপরাধী কে-এই ছকের বাইরে থ্রিলারের স্বাদ এনে দিয়েছিল গোয়েন্দা অর্জুনের লক্ষ্যভেদ৷ ছুটির দুপুরে ‘লাইটার’, ‘একমুখী রুদ্রাক্ষ’, ‘অর্জুন বেরিয়ে এল’, ‘হিসেবে ভুল ছিল’ গল্পগুলির রোমাঞ্চ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ্য কিশোর পাঠক পাঠিকাদের কাছে৷
advertisement
আরও পড়ুন : আমায় কতটা স্নেহ করতেন, প্রমাণ পেয়েছিলাম ওই দিন, সমরেশ-প্রয়াণে ‘শূন্য’ হলেন জয় গোস্বামী
সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ আজীবন বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন তিনি ৷ ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন সমরেশ। ‘কলকাতায় নবকুমার’-এর জন্য ২০০৯ সালে বঙ্কিম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল তাঁকে। তবে তিনি নিজে মনে করতেন পাঠকদের ভাললাগা এবং ভালবাসাই তাঁর শ্রেষ্ঠ ভূষণ৷ সেই পাঠকমহলকে রিক্ত করে বৈশাখী দহনবেলায় চলে গেলেন সমরেশ মজুমদার৷ আর কোনও দীপাবলির কাহন লিখবে না তাঁর কলম৷
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
Kolkata,West Bengal
First Published :
May 08, 2023 8:54 PM IST