মালগাড়িতে কাটা পড়েছিল পা! রোগীকে সাত দিন ঘোরাল কলকাতার ৫টি সরকারি হাসপাতাল
- Published by:Simli Raha
- news18 bangla
Last Updated:
ABHIJIT CHANDA
#মুরারই: বীরভূমের মুরারই এর বাসিন্দা জয়ন্ত রাজবংশী, একচল্লিশ বছর বয়স। হতদরিদ্র অবস্থা। বহু আশা নিয়ে কলকাতার উপকন্ঠে ডানকুনিতে এসেছিলেন। কোনও রকমে ঘর ভাড়া করে, ট্রাকে মাল উঠানামার কাজ করতেন। নিজে বহু কষ্ট করে কোনক্রমে কিছু টাকা গ্রামের বাড়িতে পাঠাতেন।
গত ১৮ই ডিসেম্বর, বুধবার রাতে ডানকুনি থেকে রেললাইন পার হওয়ার সময় অসাবধানতাবশত মালগাড়ির ধাক্কা খান জয়ন্ত ৷ ডান পা কাটা পড়ে। সেই অবস্থাতেই তাঁর প্রতিবেশীরা প্রথমে তাঁকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কলকাতা মেডিকেল কলেজে রেফার করে দেওয়া হয়। শীতের রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয় জয়ন্তকে। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়ন্ত শারীরিক অবস্থা দেখে তাঁকে ভর্তি করার কথা বলেন। এমার্জেন্সি টিকিটে অ্যাডমিশন লিখে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চিকিৎসকই আবার জয়ন্তের প্রতিবেশীদের বলেন, এখানে এই কাটা পায়ের অস্ত্রপচার হওয়া একপ্রকার অসম্ভব। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি বলেন। আবারও জয়ন্তকে নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁর প্রতিবেশীরা। সেখানেও বিপত্তি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা দেখে বলেন পরেরদিন আউটডোরে নিয়ে আসতে। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে জয়ন্তর। সেই অবস্থাতে আবার আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যায় যাওয়া হয় জয়ন্তকে। সেখানে চিকিৎসকরা দেখে বলেন আরজি করে এই কাটা পায়ের চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে তাঁকে। ১৯ তারিখ আবার এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়া হয় জয়ন্তকে। আবার সেখান থেকে তাঁকে বেড নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ।
advertisement
advertisement
এরপর তাঁকে যাওয়া হয় পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় । এরপর অনেক কষ্টে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ভর্তিও নেওয়া হয়। কুড়ি তারিখ দুপুরে তাঁর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের মেশিন খারাপ থাকার অজুহাতে তাঁকে সেখানে এক প্রকার চিকিৎসা না করে ফেলে রাখা হয় বলে অভিযোগ। জয়ন্তর প্রতিবেশী এবং কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী ছোটাছুটি শুরু করেন। অভিযোগ, বারবার বলেও জয়ন্তর পায়ের অস্ত্রোপচার করা হয় না। এই অবস্থাতে তাঁরা আবার তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর সেই থেকেই তাঁর ঠাঁই হয়েছে আরজিকর হাসপাতালে সার্জারি আউটডোরের সামনের গাছের তলা। কনকনে শীতে জয়ন্ত ও তাঁর হতভাগা স্ত্রী হাহুতাশ করছে সামান্য একটু চিকিৎসার জন্য। ডান পায়ের ব্যান্ডেজ খুললেই চূড়ান্ত দুর্গন্ধ। গোটা ডান পা পচে গিয়েছে। যন্ত্রণায় কাটা পাঁঠার মত ছটফট করছে জয়ন্ত। যা পরিস্থিতি তাঁকে বাঁচানো দুষ্কর। এই অবস্থাতেও আরজিকর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জয়ন্তর পরিবারের অভিযোগ, ভর্তি তো দূরঅস্ত, বারবার করে তাঁদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে জয়ন্তকে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি পুলিশ দিয়েও তাঁকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে যাতে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়।
advertisement
হতভাগ্য জয়ন্ত রাজবংশী মৃত্যুর দোরগোড়ায়। তাঁর পরিবার-পরিজন, তাঁরাও এই শহর কলকাতায় এসে পথভ্রষ্ট। কি করবে, কোথায় যাবে, কোনও কুল কিনারা পাচ্ছে না ।এই কি শহরের মানবিকতা! কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বহুদিন আগে লিখেছিলেন, ‘এ কলকাতার মাঝে আছে অন্য কলকাতা।’ গতির শহরে কেউ কি একটুও ফিরে তাকাবে না এই হতভাগ্য জয়ন্তর দিকে। বড়দিনের সান্তাক্লজ কি উঠে আসবে না জয়ন্ত রাজবংশীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য ! এতোটাই কি অমানবিক এই শহর, সেই প্রশ্নটা উঠে আসছে বড়দিনের উৎসবের সময়।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
December 25, 2019 5:59 PM IST