প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ: রাজ্য ও পর্ষদের দায়সারা মনোভাবে ক্রুদ্ধ হাইকোর্ট

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ফের আদালতে ভর্ৎসিত রাজ্য ও পর্ষদ ৷

  • Last Updated :
  • Share this:

    #কলকাতা: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ফের আদালতে ভর্ৎসিত রাজ্য ও পর্ষদ ৷ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হলফনামা জমা না দেওয়ায় রাজ্য ও পর্ষদের মনোভাবে রুষ্ট হাইকোর্ট ৷

    প্রাথমিক শিক্ষক পদে টাকার বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় সময়ে হলফনামা না দেওয়ায় অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য ও পর্ষদের এমন দায়সারা মনোভাবে বৃহস্পতিবার অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নির্ধারিত সময়ে কেন হলফনামা দেওয়া হবে না?’

    মামলার ফাঁসে আটকে লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যত ৷ নিয়োগ প্রক্রিয়া চললেও মামলার রায়ের উপর নির্ভর করবে চাকরিপ্রাপ্তদের ভবিষ্যৎ, তা আগেই জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷

    চাকরিপ্রাপক ও চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই রাজ্য ও পর্ষদকে হলফনামা দেওয়ার শেষ সুযোগ দিল হাইকোর্ট ৷ ২৮ এপ্রিলের মধ্যে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

    প্যানেলে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তো আগেই ছিল, টাকা নিয়ে শিক্ষক পদে চাকরি বিক্রির অভিযোগও ওঠে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৷ বুধবার হাইকোর্টে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের অভিযোগ করেন, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক শিক্ষক পদে প্রার্থী নিয়োগ চলছে ৷

    এই অভিযোগ পর্ষদ অস্বীকার করলে হাইকোর্ট প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে হলফনামা জমা দিতে বলে ৷

    মামলার ভিত্তিতে হাইকোর্টের জারি করা নোটিশের উত্তরে আদালতে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ পত্রে আদালতের শর্ত মানা হয়নি বলে স্বীকারোক্তি করে পর্ষদ ৷ এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মামলার রায়ের উপর নির্ভর করবে প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্যপদে নিযুক্ত শিক্ষকদের ভবিষ্যত ৷

    প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি হাইকোর্টে নির্দেশ ৷ এই অভিযোগে ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোনও অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ না দিলেও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সচিব সহ বেশ কয়েকজন পর্ষদ আধিকারিককে আদালত অবমাননার জবাব চেয়ে নোটিস পাঠায় ৷ সেই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতেই স্বীকারোক্তি পর্ষদের ৷

    ২০১৬ সালে ২০ অক্টোবর পুজোর ছুটির অবকাশ বেঞ্চ বিচারক দীপঙ্কর দত্ত ও সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় টেট মামলার শুনানিতে একটি নির্দেশ দেন ৷ কেস নম্বর WB 24882 WBof2016 ৷ সেই নির্দেশে বলা হয়, ‘হাইকোর্টে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জনস্বার্থ মামলা বিচারাধীন ৷ মামলার ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করবে শিক্ষকদের নিয়োগ ৷ তাই নিয়োগপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে মামলার কথা ৷’ রাজ্যে ইতিমধ্যেই নিযুক্ত ২৭ হাজারের বেশি প্রাথমিক শিক্ষক ৷ কিন্তু তাদের কারোরই নিয়োগপত্রে উল্লেখ নেই কোর্টের নির্দেশের ৷ হাইকোর্টের নজরে এই বিষয়টি আনেন মামলাকারী রীতা হালদার ৷ এর ভিত্তিতেই পর্ষদ সভাপতি মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সচিব সহ পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিস ধরিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পর্ষদের জবাব তলব করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷ উত্তর যথাযথ না হলে আদালত অবমাননার মামলার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় ৷

    সবমিলিয়ে ফের আশঙ্কায় প্রাথমিকের মেধাতালিকায় নাম থাকা প্রায় ৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক ৷ চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে টেট পরীক্ষার ফল ঘোষণার পাশাপাশি পর্ষদ সভাপতি পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ঘোষণা করেন আগামী এক মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১১,৩০০ জন টেট উত্তীর্ণ সহ মোট ৪১,৬২৮ জন টেট উত্তীর্ণকে শিক্ষক শিক্ষিকা হিসাবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিয়োগ করা হবে।

    অন্যদিকে, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে উঠছে একের পর এক অভিযোগ ৷ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ১০ জেলার ১৫০ জন প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা ৷ বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মামলাকারীদের আবেদন শুনে মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন ৷

    দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্যানেল প্রকাশে এমন ঢাক গুড়গুড় অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উৎকন্ঠিত চাকরিপ্রার্থীরা ৷ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই অস্বচ্ছতার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বহু টেট উত্তীর্ণ ৷ এবার পর্ষদের প্যানেল প্রকাশ করা নিয়ে গড়িমসি সহ একাধিক প্রশ্ন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ১০ জেলার প্রশিক্ষিত প্রার্থীরা ৷

    পর্ষদের এমন খামখেয়ালিপনায় বিপাকে প্রাথমিকে ইতিমধ্যেই নিযুক্ত শিক্ষক এবং চাকরিপ্রার্থীরা ৷ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের একাধিক মামলা ৷ আগামী ১২ এপ্রিল রয়েছে প্রাথমিক টেটে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি ৷ সব মিলিয়ে মামলার ফাঁসে আটক প্রাথমিক শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ ৷

    First published:

    Tags: Calcutta High Court, Primary teacher appointment problem, Primary Teacher Recruitment, Teachers Recruitment