#কলকাতা : - আমফানের জেরে রাজ্যে ক্ষতির নয়া খতিয়ান দিল নবান্ন। প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল ক্ষতির পরিমাণ আশি হাজার কোটি টাকা। শনিবার দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষে নবান্নের তরফে জানানো হল, রাজ্যে আমফানে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা।
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের যুগ্ম সচিব অনুজ শর্মা নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নবান্নে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে টানা প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্তারা। রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা , স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিপর্যয় মোকাবিলা এবং আরও বেশ কিছু দপ্তরের সচিবরাও বৈঠকে অংশ নেন।
নবান্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, প্রত্যুত্তরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে তারা যে উদ্বিগ্ন সে কথা জানিয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তাদের দাবি কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের তরফে।
গত দুদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিনে পৌঁছে সাত সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল আমফান ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। কথা বলেন বাসিন্দাদের সঙ্গেও। ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের পক্ষ থেকে নবান্নের বৈঠকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে যে দাবি করা হয়েছে তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা যা পর্যবেক্ষন করলেন তার সঙ্গে গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করে আগামী সোমবারই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করা হবে। বিশেষ করে উত্তর এবং দক্ষিণ 24 পরগনার কোথায় কোথায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। কী কী ক্ষতি হয়েছে। কতটা অসহায় অবস্থায় রয়েছেন সেখানকার মানুষজন। ত্রাণ বন্টন সহ পূর্ণাঙ্গ খুঁটিনাটি বিষয় সেই রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে রাজ্যে বিপুল ক্ষতির কথা আগেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য প্রশাসনের সদর দপ্তর নবান্ন থেকে জারি করা এক লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে আমফানে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসেব দিয়ে বলা হয়, এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মোট ক্ষতির আর্থিক পরিমান এক লক্ষ দু হাজার চারশো বিয়াল্লিশ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাড়ে আঠাশ লক্ষেরও বেশি। যার আর্থিক মূল্য ২৮,৬৫০ কোটি টাকা। কৃষিজমি ক্ষতি হয়েছে ১৭ লক্ষ হেক্টর। যার আর্থিক মূল্য ১৫৮৬০ কোটি টাকা। বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১.৫৮ লক্ষ হেক্টর। যার আর্থিক মূল্য 1১০৩৩ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ৩২৩০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিদ্যুতের সাব স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৭৩ টি এবং ঝড়ের ঝাপটায় বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। ১৪৬৪০ টি স্কুল এবং ৩০১ টি কলেজের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭৯৩ কোটি টাকা। রাজ্যে মোট ৫৯৩৫ টি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২৭০ কোটি টাকা। ১১৯২ টি পানীয় জলের প্রকল্পে ক্ষতি হয়েছে ২০৬০কোটি টাকা। রাজ্যজুড়ে১২৬৭৮ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৪২ কোটি টাকা।
আমফানের তাণ্ডবে শিল্পক্ষেত্রেও বিপুল ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারি রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৬৭৯০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ১৬ টি ক্ষেত্রে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসেব মোতাবেক রাজ্য সরকারের তৈরি করা এই পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্টই শনিবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের হাতে তুলে দেওয়া হয় রাজ্যের তরফে।
VENKATESWAR LAHIRI
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Amphan, Amphan destruction, Amphan landfall, Cyclone Amphan, Super Cyclone Amphan