কলকাতা: প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে জলকষ্টে দক্ষিণ কলকাতার একাংশের বাসিন্দারা। টালিগঞ্জ এলাকার বাঁশদ্রোনী ও কুঁদঘাটে মিষ্টি জলের সঙ্কটে ভুগছেন বাসিন্দারা। কলকাতা পুরসভার ১১২ ১১৩, ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই সঙ্কট। জলাধার তৈরি হলে সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হতে পারে। গড়িয়া স্টেশনের কাছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি হলে টালিগঞ্জ এলাকার পানীয় জলের স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতা পুরসভা ও কেইআইআইপির প্রজেক্ট ওয়ার্কে দুটি জলাধারের কাজ থমকে আছে। জল সঙ্কটের কথা স্বীকার করলেন ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ মন্ডল। জলের গাড়ি পাঠিয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে, বৃষ্টি না হলে জলের চাহিদা কমবে না ততদিন সঙ্কট থাকবে বলেই জানান তিনি। বাঁশদ্রোনী ও কুঁদঘাট এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা পুরসভার পাইপ লাইনে যে জল পান, তা পান করার অযোগ্য তাই বাধ্য হয়ে জল কিনে খেতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিযোগের কথা স্বীকার কাউন্সিলরের। যতদিন জলাধারের কাজ শেষ না হচ্ছে ততদিন এই সমস্যা থাকবে বলে জানান তিনি।
জল সমস্যা সমাধানে দক্ষিণ আনন্দ পল্লিতে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, গত দু’বছর ধরে সেই কাজ বন্ধ। স্থানীয় সুভাষ সংঘের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দালাল বলেন, জলধর তৈরিতে আমাদের ক্লাবের জমিও আমরা দিয়েছি। কিন্তু কাজ বন্ধ আছে কেন, আমরা জানি না। যদি জলাধার তৈরি হতো তাহলে এই এলাকার পানীয় জলের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। পুরসভার জল এলেও তা পানের যোগ্য নয়। মিষ্টি পানীয় জলের অভাব রয়েছে কুদঘাট এলাকার বেশ কিছু জায়গায়। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রায়ই তাঁদের জল কিনে খেতে হয়।
পুরসভা সূত্রের খবর, নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে পুরসভার টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কাজ। ২০১৯ সালে যে সংস্থা কাজ শুরু করেছিল সেই সংস্থাকে বদল করা হয়েছে ২০২২ সালে। তবুও সমস্যার সমাধান হয়নি। ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘অনেক জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এই পাম্পিং স্টেশনের কাজ বন্ধ বলে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ হয় এখানে। তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়। মিষ্টি জলের অভাব রয়েছে।
১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আনন্দ পল্লি, ঢালিপাড়া, আনন্দ পল্লি, নতুন পল্লি, দীনেশ পল্লি সহ টালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত এই এলাকার প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চলে গভীর নলকূপের জল সরবরাহ হয়। এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল কিনতে এসেছিলেন বিশ্বনাথ মন্ডল। তিনি বলেন, নিয়মিত জল কিনে খেতে হয়। জলপ্রকল্পের কাজ কেন বন্ধ তা কেউ জানে না।
এই ওয়ার্ডের একটা অংশে পার্শ্ববর্তী ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রফুল্ল পার্ক এলাকার বুস্টার পাম্পিং স্টেশন থেকে পানীয় জল সরবরাহ হয়। গঙ্গা পল্লি, নিউ টালিগঞ্জ, বিষ্ণু পল্লি, শ্রী পল্লি, সাহা পাড়া, অরবিন্দ পার্ক, পেয়ারা বাগান অঞ্চলের বাসিন্দারা সেই জল পান। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। জলের চাপ সবসময় কম থাকে। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র দহনের পাশাপাশি এ অঞ্চলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের হাহাকার।
জানা গিয়েছে, ১৪২ নম্বর এবং ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা নতুন পল্লিতে আরো একটি বুস্টার পাম্পিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে নতুন পল্লি, মনসাতলা, উদয়াচল, বাগানপাড়া অঞ্চলের পানীয় জলের সমস্যা মেটাবে।
এই দুই জলাধার এর কাজ সম্পন্ন হলেও যে পানীয় জলের সমস্যা সম্পূর্ণ মিটে যাবে এমনটা নয়। কারণ এখানে মিষ্টি জলের সোর্স শুধুমাত্র গার্ডেন রিচ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে। কিন্তু সেখান থেকে জল সরবরাহের পরিমাণ নির্দিষ্ট। তাই নতুন করে মিষ্টি জলের জন্য পুরসভা গড়িয়া স্টেশন এর কাছে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নতুন করে তৈরি করা হবে।
আরও পড়ুন, ঘর ঠান্ডা-বিদ্যুতের বিলও কম! এই মেশিন একবার লাগালে ২৫ বছর আরামে থাকতে পারবেন
আরও পড়ুন, আপাতত পার্লামেন্টে ফিরছেন না রাহুল গান্ধি! সুরাত দায়েরা আদালতে খারিজ আর্জি
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, আরো বছর দুয়েক লাগবে এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হতে। এই ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর জন্য খিদিরপুর থেকে গঙ্গার জল নিয়ে যাওয়া হবে পাইপে করে। গড়িয়া ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হলে সোনারপুর এবং টালিগঞ্জ এলাকার জন্য পানীয় জলের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Kolkata Municipality