EXCLUSIVE: গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে দুর্গাপুজোয় কলকাতার এক বনেদি বাড়ির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
- Published by:Siddhartha Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
কৃত্রিম জলস্রোতের মাধ্যমে গিরিশ ভবন প্রাঙ্গনেই বিসর্জন প্রক্রিয়া।
ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী, কলকাতা: ‘‘নির্মল-অবিরল গঙ্গা।’’ গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে কলকাতার একটি বনেদি বাড়ির পুজোয় এবার অভিনব উদ্যোগ। শিরোনামটা কিন্তু একটুও কষ্টকল্পনীয় নয়। দক্ষিণ কলকাতায় ইতিহাসের স্মৃতিজড়ানো একটি প্রাচীন দুর্গা দালান 'গিরিশ ভবন' নামে যা পরিচিত। আজ তা শিরোনামে নতুন করে উঠে এল তা বলাই যায়।
১৮৩২ খ্রীস্টাব্দে এই বনেদি বাড়ির পুজো শুরু হয়েছিল প্রখ্যাত গুড় ব্যবসায়ী শ্রী হরচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। তাঁর পুত্র গিরিশ মুখোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হয় বর্তমানের ঠাকুরদালানটি। গিরিশবাবু একসময় সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করতেন। কিন্তু সেই চাকরি ছেড়ে তিনি বিদ্যাসাগরের পরামর্শে ওকালতি পড়ে মুন্সিফের চাকরি নেন, পরে সেটিও ছেড়ে দিয়ে তিনি স্বাধীনভাবে ওকালতি শুরু করেন। শোনা যায়, গিরিশবাবু প্রতিমাসের জলপানি বা স্টাইপেন্ডের ৭ আনা পয়সা সঞ্চয় করে সেই পয়সায় বর্তমান ঠাকুরদালানটি ক্রয় করেন। বিদ্যাসাগরের বহু আলোচিত সম্পত্তির উইলেও এই গিরিশবাবুর স্বাক্ষর ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বাঙালির চোখের মণি উত্তমকুমারের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল এই ঠাকুরদালানেই। সেও এক ইতিহাস। পুজোর দিনগুলোতে সারারাত যাত্রাপালার আয়োজন হত আর অভিনয় থেকে শুরু করে যাবতীয় আয়োজনের দায়িত্বে থাকতেন উত্তমকুমার স্বয়ং।
advertisement
advertisement
১৯৭৫-এর পুজোয় শেষবার এই দালানে তিনি অভিনয় করেছিলেন।পুজোতে সেই সমারোহের ঐতিহ্য আজও বহন করে চলেছেন গিরিশ ভবনের সদস্যবৃন্দ। এবার ১৯০ বছরে পড়ল এই পুজো। কিন্তু সেই ঐতিহ্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে। আমরা সবাই জানি ‘গঙ্গা’ ভারতের জনজীবনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ নদী। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জলবাহী এই নদী গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হয়ে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সাগরে মিশেছে। ভারতবাসীর মনে একটি ধর্মীয় বিশ্বাস আছে, গঙ্গার পুণ্যতোয়া জলে দেহমনের সব কলুষ দূর হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় গঙ্গার জলই যেখানে দূষণে কলুষিত, সেই নদী মানুষের মঙ্গল করবে কী করে! বিভিন্ন স্থানে বাঁধের কারণে এমনিতেই এর প্রবাহমাত্রা কমে গিয়েছে তার ওপরে সীমাহীন দূষণে অচিরেই যে তার গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটবে তাতে আর সন্দেহ কী! সব পরিবেশপ্রেমীরা আজ গঙ্গার নির্মল ও অবিরল ধারা বজায় রাখতে কাজ করে চলেছেন। গঙ্গার বাধাহীন প্রবাহমানতার এই উদ্যোগে কলকাতার গিরিশ ভবনের সাবেকি পুজোও এবার শামিল। ১৮৩২ সাল থেকে ‘গিরিশ ভবনে’ আন্তরিক ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস দিয়ে মা দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে। কিন্ত এ বছর গিরিশ ভবনের মূর্তি নির্মাণে এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে মায়ের বিসর্জন যাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। যে কাঠামোয় প্রতিবার পুজো হয় এবারে তা পাল্টে ধাতুর ধাঁচা করা হয়েছে। প্রতিটি মূর্তি আলাদা ভাবে কাঠামো থেকে খুলে নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
advertisement

শাস্ত্রমতে দশমীর সকালে গঙ্গাজলে দর্পণ বিসর্জন হবে। কিন্তু এবার প্রতিবারের মত মূর্তিগুলি কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার জলে বিসর্জনের ব্যবস্থা না করে, গিরিশ ভবনের প্রাঙ্গণেই কৃত্রিম জলস্রোতের সাহায্য নেওয়া হবে। গলে যাওয়া মাটি সংরক্ষণ করে আগামী বছর পুনরায় ব্যবহার করা হবে প্রতিমা গড়ার কাজে। এর মূল উদ্দেশ্য হল গঙ্গার দূষণ রোধ করা। অর্থাৎ পুজোয় ধর্ম ও পরিবেশ সংরক্ষণ দুটিই একসঙ্গে পালিত হবে। গিরিশ ভবনে দুর্গা পুজোর উদ্যোক্তাদের তরফে অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গত দু'বছর করোনার কারণে নমো নমো করে পুজো হয়েছে। মূলত গঙ্গা দূষণ ঠেকাতেই আমরা এ বছর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি।রিডিউস, রিসাইকেল ও রিইউজ। অর্থাৎ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পুনর্রূপায়ন ও মাটি-সহ অন্যান্য সামগ্রীর আগামী বছর পুজোতে পুনর্ব্যবহার করা হবে।’’ পরিবেশরক্ষার তিনটি নীতিই এখানে সফল হবে বলে মনে করছেন শহরের পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘একটি বনেদি বাড়ির পুজোতে ধর্ম বিজ্ঞান ও পরিবেশ সংরক্ষণের এই অভিনব সংমিশ্রণ অন্য পুজোগুলোকেও গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে উদ্বুদ্ধ করবে।’’
advertisement
এভাবেই গঙ্গার নির্মল ও অবিরল ধারা বহমান থাকুক। আজ, রবিবার বিশ্ব নদী দিবস। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবার নদী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিনই গিরিশ ভবনের মতো অন্যান্য পুজোর আয়োজকরাও বিসর্জনের সময় গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে শপথ নিক। বলছেন পরিবেশবিদরা।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
September 25, 2022 6:49 AM IST