লকডাউন: খিদে যাতে মালুম না হয়, দু’হাতে পেট চেপে ধরে ময়দানে শুয়ে থাকেন সঞ্জীব!

Last Updated:

কিন্তু লকডাউন হঠাৎ করে কেমন যেন সবকিছু ওলট-পালট করে দিল । খাবার হোটেলের কারিগর হিসেবে প্রতিদিন তিনশ টাকা করে আয় হত তাঁর। সঙ্গে তিন বেলা পেট ভরে খাবার দিত হোটেল মালিকই। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণার পর থেকে সেই হোটেলেও পড়েছে তালা। তাই এখন রোজগার তো বন্ধই, সেই সঙ্গে কলকাতায় কাজের তাগিদে ছুটে আসা সঞ্জীবের পেটেও পড়েছে কার্যত তালা।

VENKATESWAR  LAHIRI
#কলকাতা: চলছে লকডাউন। এর ফলে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষেরা আজ কর্মহীন। উপার্জন নেই। এমন অনেক শ্রমজীবী মানুষ আছেন, যাঁদের দিকে পেটের জ্বালা মেটানোর জন্য গোটা পরিবার তাকিয়ে থাকে । কেননা তাঁর ওপরই নির্ভরশীল গোটা পরিবার। যেমন সঞ্জীব মন্ডল। লকডাউনে কলকাতা শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একদিন চোখ গেল শহরের ফুসফুস, ময়দানের দিকে। নিস্তব্ধ ময়দানের গাছের নীচে ঝরে পড়া অজস্র শুকনো পাতার ওপর একাকী শুয়ে বসে থাকা মানুষটির কাছে যেতেই শুনলাম এক করুণ কাহিনী। যে কাহিনী বাকরুদ্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
advertisement
সত্যি লকডাউনে শুধু ছিপছিপে চেহারার এই সঞ্জীবই নয়, তাঁর মতো আরও  কতজনেরই না  আচমকা মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। গত দু'বছর আগে রোজগারের আশায় বিহারের দারভাঙ্গা থেকে কলকাতা এসেছিলেন সঞ্জীব। আনুমানিক তিরিশ বছর বয়সী সঞ্জীবের চোখে মুখে ছিল অনেক স্বপ্ন। প্রথমে নির্মাণ শিল্পের মজদুর হিসেবে বেশ কয়েক মাস কাজ করার পর, কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা নিউমার্কেট এলাকার একটি খাবার হোটেলে তন্দুরি রুটি আর হাত রুটি বানানোর কারিগর হিসেবে কাজে যোগ দেন। বাবা-মা, চার ভাই আর এক বোনের নুন আনতে পান্তা ফুরোনো অবস্থা সংসারে অন্যতম রোজগেরে সদস্য সঞ্জীব। নিজের পেট চালানোর পাশাপাশি  অর্থ সাহায্য করে পরিবারের পাশে  থাকতেন সঞ্জীব।
advertisement
advertisement
কিন্তু লকডাউন হঠাৎ করে কেমন যেন সবকিছু ওলট-পালট করে দিল ।  খাবার হোটেলের কারিগর হিসেবে প্রতিদিন তিনশ টাকা করে আয় হত তাঁর। সঙ্গে তিন বেলা পেট ভরে খাবার দিত হোটেল মালিকই। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণার পর থেকে সেই হোটেলেও  পড়েছে তালা। তাই এখন রোজগার তো বন্ধই, সেই সঙ্গে কলকাতায় কাজের তাগিদে ছুটে আসা সঞ্জীবের পেটেও পড়েছে কার্যত তালা। তিন বেলা তো দূর অস্ত,  এমন এক একটা দিন পার হচ্ছে হয়তো সেদিন এক বেলাও খাবার জুটছে না। বাড়ি যে ফিরবে তারও উপায় নেই। নিস্তব্ধ ময়দান চত্বরের গাছের ছায়ায় একাকী দিনের অধিকাংশ সময় ক্ষুধার্ত পেট চিপে শুয়ে থাকছে নিরুপায় সঞ্জীব।
advertisement
কার্যত অনাহারে কাটানো যুবকের সম্বল বলতে শুধুই বিশুদ্ধ বাতাস। ভিক্ষাবৃত্তির অভ্যেস নেই। তাই পেট ভরাতে কারও কাছে হাত পাততেও  সাহস হচ্ছে না তাঁর। গৃহবন্দি শহর। শুনশান রাস্তাঘাট। দোকানপাট থেকে অফিস কাছারি--- সবই বন্ধ। রাস্তায় নেই মানুষ। কার্যত অনাহারে দিন কাটছে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা সঞ্জীবের মতো আজ হয়তো অনেকেরই। তবে মাঝেমধ্যে পথচলতি মানুষের নজরে এলে মিলছে সামান্য খাবার। অভুক্ত, অসহায় সঞ্জীবের কাছে সেদিন সত্যি ব্যতিক্রমী দিন।
advertisement
ভিক্টোরিয়া ময়দান সহ শহরের অনেক দু:স্থ অভুক্ত মানুষদের মুখে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার  কাজে এখন অনেকেই  শপথ নিয়েছেন। রেশন কার্ড থাকুক বা না থাকুক প্রত্যেককে রেশন সামগ্রী দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফেও। কিন্তু সঞ্জীব আজও রাজপথের দিকেই তাকিয়ে থাকে এই ভেবে যে, এই হয়তো এল কোনও সহৃদয়  মানুষ তাঁর পেটের জ্বালা ঘোঁচাতে। প্রতিদিন খাবার পাও? প্রতিবেদকর এই প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ থমকে থেকে সঞ্জীবের জবাব, 'এখনও তো পাইনি। মাঝে মাঝে পাই'। বেশিরভাগ দিনই যে জোটেনা  তা সঞ্জীবের সঙ্গে কথা বলেই স্পষ্ট।  সকাল গড়িয়ে দুপুর,  দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে , সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত ---  কবে, কে, কখন তাঁর কাছে অন্নদাতা হিসেবে হাজির হবেন তা জানে না সঞ্জীবও। তবুও দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
advertisement
বিশ্ব তথা দেশজুড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। অনেক মৃত্যুর ঘটনাও সামনে আসছে। তবুও করোনা মোকাবিলায় রাতদিন এক করে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জারি রয়েছে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।  পরিস্থিতি যাতে নাগালের বাইরে চলে না যায় সেজন্য দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। ব্যতিক্রম নয় শহর কলকাতা। সামাজিক দূরত্ব বজায়, গৃহবন্দি হয়ে থাকাই এই সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রধান পথ। তবুও অনেকেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি বেপরোয়াভাবে নামছেন রাস্তায়। লকডাউনের  জেরে সবচেয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন কিছু অসহায় মানুষ। যাঁদের ঠিকানা পথ  অথবা  C/O ফুটপাথ। এমন অনেক গরীব-দুঃস্থ মানুষ আছেন যাঁরা অভুক্ত অবস্থায় দিন গুজরান করছেন। বর্তমান সময়ে সমাজের বন্ধু হিসেবে সেই সমস্ত অনেক মানুষজনের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। তবে সঞ্জীব মন্ডলের মত ব্যতিক্রম ছবিও আছে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম সহ অনেকেই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে যেমন করে পারছেন যুদ্ধে সামিল হয়েছেন। আর সেই যুদ্ধের বাহিনীতে ঠিক পেছনের সারিতে সাধারণ মানুষ। কেউ নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন। কেউ আবার লড়ছেন এক কঠিন বাস্তবের সঙ্গে। যেমন সঞ্জীব  মন্ডল। যার লড়াই কবে শেষ হবে? উত্তর দেবে সময়ই। 'সামাজিক দূরত্ব' পালনে  আর পাঁচজনের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। ময়দান চত্বরের  ধারে কাছে কেউ নেই। শুধু আছে অসংখ্য গাছ আর প্রকৃতি।  তবুও সমাজের চোখে আজ সঞ্জীব 'ব্রাত্য'। আচমকা ভেঙে  চুরমার হয়ে যাওয়া তাঁর সব স্বপ্ন এখন পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটির মত।
Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷  News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে  ক্লিক করুন এখানে ৷ 
view comments
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
লকডাউন: খিদে যাতে মালুম না হয়, দু’হাতে পেট চেপে ধরে ময়দানে শুয়ে থাকেন সঞ্জীব!
Next Article
advertisement
Weather Update: ২৫ ডিসেম্বর থেকেই বড় বদল আবহাওয়ায়! আরও নামবে পারদ, কনকনে ঠান্ডা, ঘন কুয়াশার সতর্কতা বঙ্গে
২৫ ডিসেম্বর থেকেই বড় বদল আবহাওয়ায়! আরও নামবে পারদ, কনকনে ঠান্ডা, ঘন কুয়াশার সতর্কতা
  • দক্ষিণবঙ্গে বুধবার পর্যন্ত এবং উত্তরবঙ্গে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুয়াশার সতর্কতা

  • সকালে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পরে পরিষ্কার আকাশ

  • কুয়াশার কারণে দিনভর শীতের অনুভূতি

VIEW MORE
advertisement
advertisement