বাবু সমাজের দুর্গাপুজোয় হাজির হতেন সাহেবরা, গাওয়া হতো ‘গড সেভ দ্য কিং’

Last Updated:

কলকাতায় ব্রিটিশ শাসন কায়েমের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের অনুগ্রহপুষ্ট দেশী বাবুসমাজের পক্ষে দুর্গাপূজার মতো অনুষ্ঠানের অজুহাতে সাহেবকুলকে নিমন্ত্রণ করে এনে তাদের পানভোজন ও নৃত্যবিনোদনে আপ্যায়িত করার চেষ্টার মধ্যে হয়তো কিছু অস্বাভাবিকতা ছিলনা।

প্রতিবেদন: ঋত্বিক ঘোষ
#কলকাতা: কলকাতায় ব্রিটিশ শাসন কায়েমের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের অনুগ্রহপুষ্ট দেশী বাবুসমাজের পক্ষে দুর্গাপূজার মতো অনুষ্ঠানের অজুহাতে সাহেবকুলকে নিমন্ত্রণ করে এনে তাদের পানভোজন ও নৃত্যবিনোদনে আপ্যায়িত করার চেষ্টার মধ্যে হয়তো কিছু অস্বাভাবিকতা ছিলনা। তাই সংবাদপত্রের বিবরণেও স্বাভাবিক ভাবেই দেশী রাজা-জমিদারদের নিকেতনের দুর্গাপূজায় সাহেবসুবোদের আগমন, খানাপিনা, গানবাজনা, এমন কি, ‘গড সেভ দি কিং’ গাওয়ার পর্যন্ত বর্ণনা পাওয়া যায়।
advertisement
উদাহরণস্বরূপ বঙ্গদূত পত্রিকায় ১৮২৯ সালে “মহারাজা নবকৃষ্ণ বাহাদুরের দুই বাটীতে নবমীর রাত্রে শ্রীশ্রীযুত গভর্নর-জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক বাহাদুর ও প্রধান সেনাপতি শ্রীশ্রীযুতলর্ড কম্বরমীর ও প্রধান প্রধান সাহেবলোক”-দের আগমন ও “ নানা আমোদ ও নৃত্যগীতাদি দর্শন ও শ্রবণ করত অবস্থিতি করিয়া প্রীত হইয়া’ গমন করার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।[১০-১০-১৮২৯]
advertisement
এই বিবরণের দু’ বছর পরে ‘সমাচার দর্পণ’-এমহারাজ কালীকৃষ্ণের বাড়ির দুর্গাপূজার তিন রাত্রিতেই নানা উচ্চপদস্থ ‘ইংরেজ ও বিবিলোকের সমাগমে’র বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে লেখা হয়, “......অনন্তর মদ্য ইত্যাদি আহারীয় ও পেয় সামগ্রীর যথেষ্ট আয়োজন এবঞ্চ নট ও নটী ও কাশ্মীরী বালকখড়্গকর্মনিপুণ নানাবিধ তামাসা ছিল...।”[২২-১০-১৮৩১]
advertisement
‘সংবাদ প্রভাকর’ ১৮৬৩ সালেও ‘শোভাবাজারে স্বর্গীয় মহারাজ রাজকৃষ্ণ বাহাদুরের নিকেতনে’ নাচের সভায় “অনেকানেক ইংরাজ সম্ভ্রান্ত বিবি ও বিস্তর এতদ্দেশীয় মহৎ ও মান্যব্যক্তির” উপস্থিতির বিবরণদিয়েছে।শুধু দেশী খবরের কাগজগুলিই নয়, ইংরেজদের পত্রিকাতেও সেকালে দুর্গাপূজায় সাহেব-আপ্যায়নের বর্ণনা নেহাত কম নয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে নবকৃষ্ণ-ভবনে সস্ত্রীক বেন্টিঙ্ককে সোণার সিংহাসনে বসিয়ে ‘গড সেভ তি কিং’ সুরধ্বনি, বাইজিদের নৃত্যগীত ইত্যাদি দ্বারা আপ্যায়নের বিবরণের পর ‘হরকরা’ পত্রিকাটি সহর্ষে লিখেছিলঃ-“ A sight so pleasing and grand was hardly ever before witnessed , for it was never known that the rulers of the country had thus designed to honour their festivities with their presence…..” [১২-১০-১৮২৯]।
advertisement
জেন্টুদের বাড়ির উৎসবে সাহেব-সমাগম ও বাই-নাচের ছবি এঁকেছিলেন বিখ্যাত শিল্পী মিসেস এস সি বেলনোস। ভারতে জন্মগ্রহণ করে এখানেই বেড়ে ওঠা এই কন্যাকে অবশ্য সঠিক অর্থে ইয়োরোপীয় বলা না গেলেও তিনি খুব সম্ভব ছিলেন পর্তুগীজ বংশোদ্ভূতা। ১৮৩০ সালে প্রকাশিত তাঁর অ্যালবামের [‘Twenty Four Plates Illustrative of Hindu and European manners in Bengal’] এই ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি ও কার্পেট-শোভিত এক হলঘরে নাচছে এক সুরূপা নর্তকী, তার একপাশে নানা বাদ্যযন্ত্র সহ সুবেশ বাদ্যকরেরা দাঁড়িয়ে আছে, অন্য পাশে এক ইয়োরোপীয় অভ্যাগতের সঙ্গে আলাপ করছে এক সম্ভ্রান্ত ‘জেন্টু’ ও একজন শিখাধারী ভারতীয়।
advertisement
ছবিটিতে অবশ্য বিশেষ ভাবে দুর্গাপূজার কোনো অনুষঙ্গ দেখা যায়না। তবে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে এই ছবিটিতে যেমন দেখানো হয়েছে, রাধাকান্ত দেবের বাড়ির দুর্গোৎসবেই সে-ধরনের সমাবেশ হতো।
বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
বাবু সমাজের দুর্গাপুজোয় হাজির হতেন সাহেবরা, গাওয়া হতো ‘গড সেভ দ্য কিং’
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement