#কলকাতা: সে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশো বছর আগের কথা। তখন কলকাতা নামক তিলোত্তমা নগরীর অস্তিত্বই ছিল না। সুতানুটি,গোবিন্দ পুরের মত কয়েকটি গ্রাম ছিল। সমস্ত এলাকা জঙ্গলাকীর্ণ,হিংস্র জন্তুদের বাস ছিল। সে সময়ে কুমোরটুলি গঙ্গার ধারে বেত বন ছিল। কথিত আছে, একবার হিমালয়ের এক সন্ন্যাসী স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওখানে আসেন।
সেই সন্ন্যাসীর নাম কালী বড় তপস্বী , ওখানে এসে ওই বনে মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন বলে প্রচলিত।তার পর ইংরেজ আমলে,এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়।সাড়ে পাঁচশো বছর এর আগে এই সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু সিদ্ধিলাভ করে এই পীঠস্থান তৈরি হয়েছিল বলেই,এই মন্দিরের নাম সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বার বার এখানে এসেছিলেন।এটাকে অনেকে ডাকাতিয়া কালীবাড়িও বলে।
কথিত আছে জমিদার মিত্তিরদের লেঠেলরা লুঠ করতে যাওয়ার আগে ও পরে এখানে পুজো দিত।সেই সময় থেকেই এখানে নরবলি হত। শেষ একশো বছর আগে মহিষবলি হয়েছে এখানে। নাট্য আচার্য গিরিশ ঘোষও এখানে আসতেন। গিরিশ ঘোষ তাঁর নাটকের আগে, পাণ্ডুলিপি মায়ের চরণে রেখে পুজো দিয়ে যেতেন। রামকৃষ্ণ দেব গিরিশ ঘোষকে প্রথম এনেছিলেন এই মন্দিরে , ইতিহাস বলছিলেন রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মন্দিরের সেবক।
হুগলী নদীর তীরে বেতবনের ভেতরে সেই মন্দিরের দৃশ্য আজ শুধু মাত্র গল্প।সামনে দিয়ে রবীন্দ্র সরণী,মাঝে মাঝে ঝম্ঝম্ শব্দে ট্রাম যায়।গাড়ি সশব্দে ধেয়ে যায়।শিয়ালের ডাক আর পাওয়া যায়না। উত্তর কলকাতার বেড়ে ওঠা,জঙ্গল সরিয়ে কংক্রিটের জামা পরার সমস্ত ইতিহাসের সাক্ষী এই মন্দির।পুরনো দিনের মন্দিরের কোনো ইতিহাস ঘাঁটলে হয়তো , কতো ডাকাতের ইতিহাস জানা যাবে।কত মনীষীর কৃতিত্ব হয়তো এখনও অব্যক্ত রয়েছে এখানে।
কালী মানে শক্তি।এই শক্তি পুজো এক সময় শাক্তরা করত।আজ হিন্দুরা সমস্ত দেব দেবীকে পুজো করে।একসময় ঘন জঙ্গলে এই দেবীর মূর্তির পুজো হত।সেই সময়ে হিংস্র জানোয়ারের ভয়ে মশাল জ্বেলে এবং বোম ফাটিয়ে যেত সবাই। আজ সেই জঙ্গল নেই।মায়ের স্থান হয়েছে কংক্রিটের জঙ্গলে। নিয়ম করে প্রচুর মানুষ আসেন এখানে পুজো দিতে, ও তাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য।সবাইয়ের বিশ্বাস মায়ের দয়া আছে,মানব জাতির প্রতি।