কলকাতা : দূষণহীন যান হিসেবে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বরাবরই বেশি। বিনা পয়সায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে তুলনা নেই সাইকেলের। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাইকেল চালানোর পরামর্শ দেন অনেকেই। অথচ এই এক ঢিলে তিন পাখি মারা যানটির চলার জন্য নাকি কলকাতায় রাস্তার অভাব রয়েছে। শুধু তাই নয় সাইকেল চালাতে গেলে পুলিশি হেনস্তার মুখে পড়তে হয়। এমনটাই অভিযোগ সাইকেল প্রেমীদের।
শনিবার বেশ কয়েকটি সাইকেল সংগঠনের পক্ষ থেকে কলকাতা পুলিশের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। 'বেঙ্গল লাভস সাইকেল' নামে একটি সংগঠনের তরফে এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, " আমরা কলকাতার নাগরিক। আমাদের জীবন জীবিকা ও জরুরি কাজে সাইকেল ব্যবহার করতে হয়। তাতে আমাদের যেমন খরচ ও সময়ের সাশ্রয় হয় তেমনি এই শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হয়। বিশেষ করে কলকাতা শহরের বায়ুদূষণ গুরুতর সমস্য। রাস্তা ব্যবহারকারী হিসেবে সাইকেল একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং জাতীয় নীতিতে স্বীকৃত। সাইকেল চালানোকে উৎসাহিত করতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার নানা ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে সচেষ্ট। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের রোজগার কমেছে এবং সংক্রমণ ঠেকাতেও অনেক মানুষ নতুন করে সাইকেলে উৎসাহিত হচ্ছেন। ’’
প্রেস বিবৃতিতে আরও বলা হযেছে, " ইদানীং কলকাতার রাস্তায় মহিলাদের বেশি বেশি করে সাইকেল চালাতে দেখা যাচ্ছে। এই রকম সামাজিক পরিমণ্ডলে আমরা আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে রাস্তায় সাইকেল চালকদের সাথে সহযোগিতা করুন। কোনও রাস্তায় যদি সাইকেল চালানো নিষেধ থাকে তবে সাইকেল চালকদের বিকল্প রাস্তার উল্লেখ করুন। কোনওভাবেই যেন তাদের হেনস্থা বা জুলুমের শিকার না হতে হয়। এই সমস্যাটিকে নগর পরিকল্পনার সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করার আর্জি জানাচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমাদের সাইকেল সমাজের পক্ষ থেকে সর্বতোভাবে সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।"
আরও পড়ুন : মাঝপথে যাত্রী ওঠানামা নয়, বিমানবন্দর- হাওড়ার মধ্যে শুরু সরকারি এসি বাস পরিষেবা
পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য চেষ্টা করে চলেছে রাজ্য। ডিজেলচালিত বাসের বদলে ব্যটারিচালিত বাস চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ট্রামের পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে ট্রলি চালানোর চিন্তা ভাবনা চলছে। একই সঙ্গে পেট্রো পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলেও সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। সময়ের অভাবে শরীর চর্চা করতে না পারা মানুষের কাছে সাইকেল চালানোটা রথ দেখা কলা বেচার মতো। সেই জায়গায় সাইকেলকে আরও বেশি ব্যবহার। ব্যবহারের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করার দাবি জানাচ্ছে সাইকেলপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন : ১.৫ কোটি টাকার সোনা উদ্ধার কলকাতায়!
শতঞ্জীব গুপ্ত বলেন, "সাইকেল শুধুমাত্র একটি স্বাস্থ্যকর, সাশ্রয়কারী বাহনই নয়। দারিদ্র ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূর করা সহ অসংখ্য আর্থ-সামাজিক ভূমিকা রয়েছে সাইকেলের । গবেষণায় দেখা গিয়েছে শহরের ছোট ছোট দূরত্বে সাইকেলের যাতায়াতকে প্রশাসনিকভাবে অগ্রাধিকার দিলে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি, আমাদের দেশের জাতীয় নগর-পরিবহণ নীতি-সহ কেন্দ্র বা রাজ্যনিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশে বারবার সাইকেলকে শহরের যাতায়াতে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে। মহামান্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে ‘কে এম ডি এ’ কম্প্রিহেনসিভ বাইসাইকেল প্ল্যান_ বানিয়েছে । এমনকি বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় কলকাতার জন্য নতুন করে যে কম্প্রিহেনসিভ মোবিলিটি প্ল্যান বানানো হবে, তাতেও স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাইকেল-প্রায়োরিটি নেটওয়ার্ক বানানোর জন্য। কিন্তু এতসব সুপারিশ, পরিকল্পনা ইত্যাদির বিপরীতদিকে কলকাতায় সাইকেল চালাতে গিয়ে বিভিন্ন সময় জরিমানা ও হেনস্থার মুখে পড়ছেন আরোহীরা। সাইকেলকে উৎসাহ দেওয়া তো দূরের কথা - এই নীতি সাইকেল চালানোকে নিরুতসাহিত করছে। শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয় আজকের পৃথিবীর নিরিখে এটা শহরের কাছে লজ্জার। আপাতত কলকাতা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, রাস্তায় সাইকেল চালকদের সাথে সহযোগিতা করুন। কোনও রাস্তায় যদি সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ থাকে তবে বিকল্প রাস্তার উল্লেখ করুন, প্রচার করুন। একবিন্দু দূষণ না ছড়িয়ে, কার্বন নিঃসরণ না করে সাইকেল আরোহীরা আসলে শহরের বায়ুদূষণ রোধে অংশগ্রহন শুধু নয় সাহায্য করছেন জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধেও।"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।