বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ফায়দা না বুমেরাং? সংশয়ে দু'পক্ষই
Last Updated:
নাগরিকত্বের সুফল প্রশাসনিক ভাবে ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে দলের কর্মীদের যে প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচারবুদ্ধির দরকার, তা রাজ্যে বিজেপির কর্মীদের কাছে প্রত্যাশা করা যায় না।
Arup Dutta
#কলকাতা: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আজ পেশ হল লোকসভায়। কিন্তু বিলকে ঘিরে সংশয় ঘুচছে না রাজ্যে বিজেপি-তৃণমূল শিবিরে। সংশয় বলতে এই বিল পাশ হলে রাজনৈতিক ফায়দা কি একচেটিয়া বিজেপিই তুলবে? না কি এই বিল কার্যত বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে এ রাজ্যের পদ্ম শিবিরে?
আশঙ্কা যে রয়েছে তার প্রমাণ, সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের মত জেলায় দলের সাংগঠনিক বৈঠক করতে গিয়ে সুব্রত বক্সি বলেন, 'সাম্প্রতিক তিনটি উপ নির্বাচনে আমরা NRC-র সুফল পেয়েছি। কিন্তু, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের পর পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে তা জানি না।' রাজনৈতিক মহলের মতে, করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জের ভোটে এনআরসি যে বড় সহায়ক হয়েছে তৃণমূলের তা স্পষ্ট। কিন্তু, নাগরিকত্ব বিল পাশের পর এই বিলকে হাতিয়ার করে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে ব্যাপক মেরুকরণ করতে চাইবে বিজেপি। সেই ঝড়ের মোকাবিলা করে রাজনৈতিক ভাবে বিজেপিকে কতটা কোনঠাসা করা যাবে তার ওপর নির্ভর করবে তৃণমূলের ভবিষ্যত্।
advertisement
advertisement
ঘাসফুল শিবিরও মনে করে, বিজেপির মোকাবিলা করতে শুধু সংখ্যালঘু ভোট দিয়ে আর ভোট বৈতরণী পার করা যাবে না। রাজ্য রাজনীতির সমীকরণের পাশাপাশি, পৃথক কৌশল দরকার। সেই লক্ষ্যেই ইতিমধ্যে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম প্রভাবিত আসনের সংখ্যা প্রায় ১২০-র বেশি। শতাংশের বিচারে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট। কিন্তু, বাকি ৭০ শতাংশ ভোট বিজেপি ঝুলিতে গেলে যুদ্ধ জেতা কঠিন। সে কারণে সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ ভোটের সিংহভাগ ভোট যে ঝুলিতে টানতে পারবে, শিকে ছিঁড়বে তারই। বিল পাশকে ঘিরে বাইরে উচ্ছ্বাস দেখালেও আশঙ্কা কাটেনি বিজেপির অন্দরে। কারন, একাধিক।
advertisement
রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের মতে, আসলে বিল নিয়ে দলের তৃণমূল স্তরে বিভ্রান্তি কাটানো কঠিন। দলের সংগঠনে যাদের কাজ এই বিলকে রাজনৈতিক ভাবে তুলে ধরে প্রচার করা তারাই কম বেশি বিভ্রান্ত। তা ছাড়া, রাজ্যে বিজেপিকে আটকাতে বাকি সব দলই এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের আশঙ্কা ছড়াচ্ছে। তৃণমূল ছাড়া বাকি প্রধান বিরোধী দলগুলি যদি কোনও এলাকায় সবাই একটি করেও সভা করে, তার মোকাবিলায় একা বিজেপিকে অন্তত তিনটি সভা করতে হবে। সেটা কি সম্ভব?
advertisement
নাগরিকত্বের সুফল প্রশাসনিক ভাবে ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে দলের কর্মীদের যে প্রশিক্ষণ ও রাজনৈতিক জ্ঞান, বিচারবুদ্ধির দরকার, তা রাজ্যে বিজেপির কর্মীদের কাছে প্রত্যাশা করা যায় না। আবার, রাজনৈতিক কর্মীর অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্য দল থেকে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা এখনও ব্রাত্য সংগঠনে। আরএসএস নিয়ন্ত্রিত বিজেপির সংগঠন তাদের জায়গা দিতে নারাজ। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, বিজেপিতে যোগ দিলেও তাঁরা দলের সংগঠনে কোনও জায়গা পাবেন না।
advertisement
ফলে, ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যেও হতাশা তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের হতাশাজনক ফলাফলের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উঠে এসেছে সেই তথ্য। বিশেষ করে, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কেন্দ্র খড়গপুরের হারের একটা বড় কারণ দলের একটা বড় অংশের কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা বা বসে যাওয়া। এর সঙ্গে রয়েছে দলের ওপর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীদ্বন্দ। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এসব সমস্যা কাটিয়ে রাজ্যে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই বিলের প্রচারে সামিল করার মত নেতৃত্ব আপাতত খুঁজে পাওয়া কঠিন। ফলে, নাগরিকত্ব বিল পাশ হলেও তার সুফল কতটা ঘরে তুলতে পারবে তা নিয়ে আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
December 09, 2019 9:51 PM IST