#কলকাতা: আড়াই বছর পর ফিরল সেই আতঙ্ক। মেট্রোর কাজ চলাকালীন বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের অন্তত ৮-১৮টি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে বহু পরিবার। তাঁদের অনেকেরই বর্তমান ঠিকানা ক্রিক রো-এর কিউ ইন হোটেলে।
২০১৯-এর পর মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, আর সমস্যা হবে না! নিয়মিত নজরদারি, পর্যবেক্ষণে রাখা হবে গোটা অঞ্চল! কিন্তু বুধবার থেকে ফের ফাটল-আতঙ্ক! একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরা পড়ার পরেই মেট্রোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ বাহিনী ও কলকাতা পুরসভার কর্মীরা মাইকে প্রচার করে ফাটল ধরা বাড়ির বাসিন্দাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। পরে এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু শুধুই এই অঞ্চলের বাসিন্দা নন, এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের দিনের সিংহভাগ সময়টাই এখানে কাটে। এই অঞ্চলের সঙ্গেই জড়িয়ে তাঁদের রুজিরুটি! কারও বা ব্যবসা, কারও বা দোকান রয়েছে! আজ তাঁরাও বাধ্য দোকান বন্ধ করতে! দোকানের ঝাঁপ ফেলা, সামনে ডাঁই করে রাখা জিনিসপত্র! হিদারাম ব্যানার্জি লেন-এ সোনার দোকান ছিল গণেশ চন্দ্র শীলের! আপাতত দোকান ঘরে তালা ঝুলছে! তাঁর ভাষায়, '' আমার দোকানে সোনার গয়না তৈরি হত। ফাটলের জন্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে! এখন কোথায় যাব জানি না! কোনও ঠিকানা নেই! গতরাত থেকে এই পরিস্থিতি। ২০১৯ সালে একই দুর্ভোগ হয়েছিল! আবার সেই দিন ফিরে এল!''
আরও পড়ুন: কদিন ধরেই কু ডাকছিল মন, বুধবার রাতে আঁতকে উঠল বউবাজার! কী ঘটেছিল ঠিক?
২০১৯ সালে ধর্মতলার দিক থেকে টিবিএম (টানেল বোরিং মেশিন) চণ্ডীকে শিয়ালদা অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার সময় বিপত্তি ঘটেছিল। সেবার মূলত ভূগর্ভস্থ জলাধরের দেয়াল ফেটেই বিপর্যয় ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে আতঙ্কের ধাক্কা সামলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর শিয়ালদহর দিক থেকে রওনা করা হয় টিবিএম উর্বিকে।
টিবিএম উর্বি বউবাজার পর্যন্ত গেলে টিবিএম চণ্ডীর মুখোমুখি অবস্থানে অল্প ব্যবধান রেখে শেষ করা হয় টিবিএম এর কাজ। ঠিক করা হয়েছিল বাকি কাজ টিবিএম এর সাহায্য ছাড়াই করা হবে। বউবাজার এ দুর্গা পিতুরি লেনে ধ্বসে যাওয়ার পরে দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাড়িগুলোর জায়গায় মেট্রোর তরফে তৈরি করা হয় একটি 40X10X25 মিটার সাইজের প্রকোষ্ঠ। মূলত টিবিএম তোলা এবং অন্যান্য অবশিষ্ট কাজের জন্যই বানানো হয় প্রকোষ্ঠটি। এই প্রকোষ্ঠ র নিচের অংশেই ছিল দুটি টিবিএম। ২০২১ এর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় টিবিএম এর যন্ত্রাংশ বের করার কাজ। গত ৩ সপ্তাহ আগে শেষ যন্ত্রাংশ বের করা হয় টিবিএম উর্বির। যদিও ভেতরের যন্ত্রাংশ বের করা হলেও ধাতব খোলকে রেখে দেওয়া হয় টানেলের মধ্যেই। তারপর থেকেই চলছিল দুই টিবিএম এর মাঝের অবশিষ্ট স্পর্শকাতর অংশটি কাটার কাজ। মেট্রো সূত্রে খবর এই কাজ সম্পূর্ণ করা গেলেই সম্পূর্ণ হত শিয়ালদা-ধর্মতলা মেট্রোর টানেলের কাজ। মাটি কেটে সিমেন্টের দেওয়াল ও মেঝে বানানোর কাজও চলছিল সমানভাবে। কিন্তু তাল কাটলো কলকাতায় ভারী বৃষ্টিপাত। যার ফলে (প্রাথমিক অনুমান), মাটির নিচের জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায়, জল উঠতে শুরু করে নীচ থেকে। ফাটল ধরে যায় সংলগ্ন ৫টি বাড়িতে। আশঙ্কাজনক অবস্থা থাকায় ফাঁকা করানো হয় আরও তিন চারটি বাড়িকে। ঘরছাড়া হন প্রায় ৮০-৯০ জন মানুষ।
আড়াই বছর পর ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে এল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে। ৯ নম্বর দুর্গা পিটুরী লেনের বাসিন্দা অমিত সেন জানান, "মেট্রো টানেলের বিপর্যয়ের জন্য আগের বারও প্রায় এক বছর হোটেলে ছিলাম, আবার একই পরিস্থিতি। মেট্রো চালু হওয়ার আগেই এত ঝামেলা, শুরু হলে কি হবে কে জানে।"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bowbazar Tragedy