আবীর ঘোষাল, কলকাতা: অ্যাপ ক্যাবে এসি চালানো নিয়ে সমস্যা। করোনা আবহে প্রায় প্রতিদিনই এসি নিয়ে বিস্তর গন্ডগোল বেঁধেছিল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রচন্ড গরমে মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছেন তখনও এই একই অবস্থা শহর জুড়ে। খুব জোরাজুরি করলে গাড়িতে এসি চললেও তার সংখ্যা ভীষণ কম। ফলে জটিলতা অব্যাহত। বহু ক্ষেত্রেই যাত্রীদের অভিযোগ এসি চালাতে বলা হলেও, ক্যাব চালক তা শুনছেন না। ফলে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে তাদের যাতায়াত করা কার্যত বিফলে চলে যাচ্ছে (App Cab Problem)।
যাত্রীদের এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ চালকরা। তাদের বক্তব্য, যাত্রী চাইলেই এসি অন, না হলে অফ। করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা বারবার বলেছিলেন, এসি'র ছোঁয়াচ এড়িয়ে যেতে। আর সেটা ধরেই ক্যাবে বন্ধ এসি। কিন্তু করোনার প্রকোপ তো এখন নেই ৷ তাহলে কেন এসি চলছে না? কলকাতায় মূলত দুটি সংস্থা ক্যাব চালায় ওলা ও উবের। ওলা'র পক্ষ থেকে তাদের সমস্ত গাড়িতে চালকের আসন মোটা প্লাস্টিকের চাদরে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। যাতে চালকের সঙ্গে যাত্রীদের স্পর্শ না ঘটে। এই চাদর দিয়ে ঘিরতে গিয়ে গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা এসি ডাক্ট-এর ৩টি ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। মাত্র একটি এসি ডাক্ট দিয়ে এসি'র হাওয়া পাওয়া যেত। ৪টি এসি ডাক্টের মধ্যে যদি তিনটি এসি ডাক্ট দিয়ে হাওয়া পিছনের আসনে বসে থাকা যাত্রীর কাছে না পৌছয় তাহলে আরামদায়ক অনুভূতি মিলবে না। এখন অবশ্য সেই নিয়ম বা অবস্থা ক্যাবের মধ্যে নেই ৷
আরও পড়ুন-আজ থেকেই হাওয়া বদল, দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস কবে? জেনে নিন
ওলা ক্যাব চালক প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য বলছেন, "কোম্পানি থেকেই আমরা যে টাকা পাই সেটা দিয়ে এসি চালিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ায় লাভ নেই ৷ জ্বালানির যে ভাবে দাম বেড়েছে তাতে প্রতি কিমিতে ১৬-১৭ টাকায় আমাদের পক্ষে এসি চালানো সম্ভব নয়। কিলোমিটার পিছু আমাদের ২৪ টাকা অন্তত দেওয়া হোক। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। জানি এর ফলে প্রচন্ড অসুবিধা যাত্রীদের হচ্ছে। কিন্তু আমাদের লাভ নেই তাই এসি বন্ধ রাখছি।’’ তবে অনেক ক্যাব চালক বলছেন, বর্তমান তাপপ্রবাহের পরিস্থিতিতে যাত্রী চাইলেই তিনি এসি চালিয়ে দিচ্ছেন। তবে সেটা কম। প্রসেনজিতের কথায় যাত্রীরা অনেক সময় সাহায্য করছেন। তবে অনেকেই আমাদের কথা শুনতে চান না। ফলে গাড়ির মধ্যে একটা খিটিমিটি অবস্থা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন-চালক কোথায়? শোরগোল কলকাতা মেট্রো রেলে
একই অভিযোগ উবের চালক রাজা সরকারের। তিনি জানাচ্ছেন, " করোনার সময়ে ডাক্তাররা বারবার বলেছিলেন এসি না চালাতে। তাই চালাচ্ছিলাম না। কারণ গাড়ি একটা ছোট জায়গা। তাতে আবার এসি চালালে যদি আমার গায়ে ড্রপলেট এসে লাগে তাহলে তো আবার আমি আক্রান্ত হয়ে যাব। তাই এসি বন্ধ রাখছিলাম। এর পর দাম বাড়ল তেলের৷ আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হল। কোম্পানি তার লাভ বুঝে নিলেও আমাদের হাতে টাকা নেই৷ বহু ক্ষেত্রে পিক-আপে অনেক দূর হয়। তেলের দাম বাড়ানোর পরিপূরক টাকা আমরা পেলে আমাদের এসি চালাতে অসুবিধা নেই।" তবে যাত্রী জোড়াজুড়ি করলে তিনি এসি চালিয়ে দিচ্ছেন। তার গাড়িতে অবশ্য প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঘেরা নেই।
চালকদের অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত আছে অনলাইন ক্যাব অপারেটর গিল্ড। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘কোনও ক্যাব সংস্থা বা সরকার কিন্তু গাড়িতে এসি চালাতে বারণ করেনি। টিভিতে ডাক্তারদের কথা শুনে প্রথমে ভয় পাচ্ছিলেন চালকরা। আর এখন জ্বালানির দাম বাড়লেও টাকা বাড়েনি মালিক বা চালকের। ফলে বাড়তি খরচ আসবে কোথা থেকে। তাই এমন ঘটনা ঘটছে।’’
তবে এসি আর নন এসি এই দুইয়ের লড়াইয়ে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে যাত্রী ও গাড়ি চালকের মধ্যেই। এই অবস্থায় ইউনিয়নের তরফ থেকে রাজ্যকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ক্যাব বুকিংয়ের সময় এসি আর নন এসি এই দুটো অপশন দেওয়া হোক। তাহলে সমস্যা কিছুটা মিটবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: App Cab