Tree Lover in Newtown: ভোর রাতে শাবল হাতে নিউটাউনে, অরণ্য বানানোর আশায় গাছ লাগিয়ে বেড়ান লক্ষ্মণ কাকা
- Published by:Teesta Barman
- news18 bangla
Last Updated:
কাকা বলেন, "লোকে তো কয় দেখি করোনায় উপকার, আমি তো এমনিই লাগাই গাছ, ভালোবাইস্যা। বাধা না থাইকলে তো এই জায়গাটারে জঙ্গল বানাইয়া ফ্যালাইতাম।"
#কলকাতা: নাগরিক 'যুগলপ্রসাদ'। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক' উপন্যাসের সেই 'যুগলপ্রসাদ'। তার প্রতিচ্ছবি যে কলকাতা শহরের নিউটাউনে বাড়িঘরের অরণ্যেও পাওয়া যেতে পারে, তা অবিশ্বাস্য লাগছে, তাই না?
লক্ষ্মণ কাকা। বয়সের গাছপাথর নেই। তাও ধরে নেওয়া যেতে পারে ৯০ কোঠায়। তাঁর আন্দাজ অনুযায়ী। সঠিক জন্ম সাল মনে রাখা সম্ভব নয়। নিউটাউনের সিই ব্লকের নির্মীয়মান বাড়িগুলির রক্ষাকর্তা তিনি। ইংরেজি পরিভাষায় যাকে বলে, কেয়ারটেকার। অনেক বছর ধরেই যখন যে বাড়ি তৈরি হয়, ডাক পড়ে এই 'কাকা'র। এই নামেই পরিচিত তিনি। নাম আর ক'জন জানেন! বিশ্বাসী বলে সুনাম আছে তাঁর। শহরের মানুষের কাছে এই 'বিশ্বাসী' শব্দের আসল অর্থ হল টাকাপয়সা বা সম্পত্তি চুরি করেন না যিনি।
advertisement
advertisement
এই বিশেষণের হয়তো এমনিতেই কোনও প্রয়োজন ছিল না। কারণ যে মানুষ গোটা পৃথিবীটাকে প্রাণে বাঁচানোর দায় ঘাড়ে নিয়েছেন, তার কাছে আর এই টাকা পয়সার কী মূল্য? কত আর রোজগার! বহু বছর ধরে বাড়তে বাড়তে এখন হয়তো আট হাজার টাকায় এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তাতেও মুখে হাসি যেন লেগেই থাকে। কিন্তু এতো নিউটাউন এর 'ঘর ঘর কি কাহানি'! তা হলে ইনি আলাদা কেন?
advertisement
এই রোজগারের অনেকটাই তাঁর চলে যায়, গাছের চারা, সার কিনতে। শুধু তাঁর ব্লকই নয়,এখানকার অনেক অংশ জুড়ে তিনি বন সৃজন করে চলেছেন আপন খেয়ালে। যেখানেই মাটি ফাঁকা দেখেন, পুঁতে ফেলেন গাছের চারা। কিন্তু জন্ম দিয়েই কাজ শেষ নয়। গাছগুলিকে বড় করে তোলাও যেন তাঁরই দায়িত্ব। একেবারে অপত্য স্নেহে তাদের দেখভাল করেন কাকা। গাছেদের পাহারাদার যেন।
advertisement
ভোর বেলায় তাঁকে দেখা যায় গাছে গাছে সার দিচ্ছেন। ফুল সবজি সব গাছেই তাঁর উৎসাহ। ভোর বেলা ফুল তুলে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন সেই ফুল। কখনও পয়সার বিনিময়ে, কখনও বা এমনিই। তাঁর ফসলের সবজিও একা খান না তিনি। পরিচিতদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দেন। যে বাড়ি যখন ডাকে, তখনই শাবল হাতে পৌঁছে যান তাঁদের বাড়িতে গাছ লাগাতে।
advertisement
এই অঞ্চলে যত সজনে গাছ আছে, তার ৯০ শতাংশই ওঁর লাগানো। সাপও নাকি তাঁকে চেনে, কামড়ায় না। সাপ তাড়ানোর উপায়ও তাঁর বাঁ হাতের খেল। দু'একটা শিকড় বাকড় জড়িয়ে কোনও গাছের তলায় পুঁতে রাখলেই নাকি সাপ সে দিকে পা বাড়ায় না। এ সব যদিও তাঁর বিশ্বাস।
সারা রাত জেগে বাড়ি পাহারা। তার পর ভোর হওয়ার আগেই বেরিয়ে পড়েন গাছেদের সঙ্গ দিতে। তাদের পরিচর্যা করতে। সদা ব্যস্ত মানুষটি দিনের বেলায় একটু ঘুমিয়ে নেন।
advertisement

ইয়াস ঝড়ের পরে তাঁকে দেখা গিয়েছে বাঁশ আর শাবল কাঁধে ইতিউতি ঘুরতে। আপাত ভাবে সন্দেহ জনক বটে। কিন্তু কাকা তখন পড়ে যাওয়া গাছকে সোজা করতে, মরণাপন্ন গাছকে বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
advertisement
সেই কবে এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। যখন যেখানে থেকেছেন, এ ভাবেই নিজের চারদিকে গাছেদের ডেকে এনেছেন। কেউ যে বাধা দেন না, তা নয়। তবে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের নিয়েই দিন কাটে। কোন খেদ নেই তাই। তাঁর সঙ্গ দিতে আবার এই এলাকার সিই ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণও করা হয়েছে সম্প্রতি। দেবদারু, পলাশ, জারুল, ইত্যাদি মোট ৫০টি গাছ লাগানো হয়েছে।
বন সৃজনের উপকারিতা জিজ্ঞাসা করলে কাকা বলেন, "লোকে তো কয় দেখি করোনায় উপকার, আমি তো এমনিই লাগাই গাছ, ভালোবাইস্যা। বাধা না থাইকলে তো এই জায়গাটারে জঙ্গল বানাইয়া ফ্যালাইতাম।"
আপনাদের মনে পড়ছে যুগলপ্রসাদকে? এই লক্ষ্মণ কাকারা যদি পাড়ায় পাড়ায় থাকতেন! কোথায় থাকত বিশ্ব উষ্ণায়ণ বা পরিবেশ দূষণের মতো শব্দগুলি, আতঙ্কগুলি?
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
Jul 26, 2022 11:55 PM IST






