Jalpaiguri: কাঁচামালের ব্যবসা করেই সংসারের হাল ধরেছেন এমএ পাস ছাত্র
Last Updated:
সকল স্বপ্ন পূর্ণতা পায় না। তা সত্ত্বেও স্বপ্নকে বুকে আগলে রেখেই এগিয়ে চলা জীবনের বৈশিষ্ট্য। স্বপ্ন পূরণ না হলেও জীবন কখনো থমকে থাকে না তাই জীবন সংগ্রামে সমস্ত বাধা অতিক্রম করেই চলে যায় আপন খেয়ালে।
জলপাইগুড়ি: সকল স্বপ্ন পূর্ণতা পায় না। তা সত্ত্বেও স্বপ্নকে বুকে আগলে রেখেই এগিয়ে চলা জীবনের বৈশিষ্ট্য। স্বপ্ন পূরণ না হলেও জীবন কখনো থমকে থাকে না তাই জীবন সংগ্রামে সমস্ত বাধা অতিক্রম করেই চলে যায় আপন খেয়ালে। এমনই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন ময়নাগুড়ির এক এমএ বিএড পাশ করা এক যুবকের স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষা লাভ করে একটা ভালো সরকারি চাকরি করার । কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে ময়নাগুড়ির বছর ৩৪'র যুবকের । উচ্চশিক্ষা লাভ করেও সরকারি চাকরি না মেলায় কাঁচামালের ব্যবসা করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন ময়নাগুড়ির ওই যুবক তপন মহন্ত। তার কথায় , সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও ডিগ্রি অর্জন করতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তার । স্বপ্ন ছিল একটা ভালো সরকারি চাকরি করার । কিন্তু বহু প্রচেষ্টা ও প্রতিক্ষার পরেও সরকারি চাকরি না মেলায় এখন সরকারি চাকরির প্রতি তার বিতৃষ্ণা এসেছে । তাই তিনি আর সরকারি চাকরি করতে চান না । জীবন-জীবিকার পাথেয় হিসেবে শাকপাতার ব্যবসাকেই এখন বেছে নিয়েছেন তিনি । ময়নাগুড়ি ব্লকের চূড়াভান্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের ধারাইকুড়ি এলাকায় তপন মহন্তের বাড়ি । তিনি একজন ক্ষুদ্র চাষির ঘরের ছেলে । দারিদ্রতাকে নিত্যসঙ্গী করেই তাকে শিক্ষা লাভ করতে হয়েছে । গ্রাম্য হাটে বাজারে শাকপাতা বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন তপনবাবু । এভাবেই তিনি সান্মানিক ভূগোল সাবজেক্ট নিয়ে ২০১০ সালে গ্রাজুয়েশন এবং ২০১২ সালে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন ।
এরপর স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রাজস্থানের যোধপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৪ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি । ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বসেন । এই একবারই তিনি এসএসসি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান । কিন্তু সেইবার ভাগ্য তার সাথ দেয়নি । আশা ছিল পরবর্তীতে ভাগ্য সাথ দেবে । কিন্তু তার অভিযোগ সরকারি নিয়োগ বন্ধ থাকায় সেই সুযোগ আর হয়নি তপনবাবুর । স্কুল শিক্ষকতা ছাড়াও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি । কিন্তু তাতেও সফলতা আসেনি । তপনবাবুর অভিযোগ , একে সরকারী নিয়োগ কম ছিল , অপরদিকে সরকারি নিয়োগে দুর্নীতি তার চাকরী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । তাই যে শাকপাতার ব্যবসার উপর ভর করে তিনি শিক্ষা লাভ করেছিলেন শেষমেশ সেই শাকপাতার ব্যবসাকেই তার জীবন জীবিকার প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি ।
advertisement
advertisement
পারিবারিক প্রয়োজনে কয়েক বছর আগে বিয়েও করেছেন তপনবাবু । এখন তার স্ত্রী ছাড়াও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে । তপনবাবুর কথায় , গ্রামের বেশিরভাগ যুবক-যুবতি সরকারি চাকরির আশায় শিক্ষা অর্জন করেন । শিক্ষার ডিগ্রি অর্জন করতে গ্রামের অনেকেই পরিবারের দু'বেলার দু'মুঠো অন্নের যোগানদাতা ফসলি জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দেন অথবা বন্ধক রাখেন । ছেলে বা মেয়ে চাকরি পেয়ে সেই সম্পদ আবার ফিরিয়ে আনবে এই আশায় বুক বাঁধেন অনেক বাবা-মা । কিন্তু খুব কমসংখ্যক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ।
advertisement
আরও পড়ুনঃ মাদক ও প্রতারণার বিরুদ্ধে রেল পুলিশের অভিযান, সচেতন করা হল যাত্রীদের
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষিত যুবক যুবতিদের সেই সরকারি চাকরির স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় । বর্তমান সময়ে এর জন্য সরকারি নিয়োগে সরকারের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন তপনবাবু । তপনবাবু বলেন , ' উচ্চ শিক্ষা লাভ করে একটা সরকারি চাকরি করার অবশ্যই স্বপ্ন ছিল । কিন্তু তা হয়নি । তাই শাকপাতার ব্যবসাই করছি । আর এই ব্যবসা আমার নতুন নয় । স্কুল জীবনে মূলত শিক্ষার খরচ জোগানোর জন্য শাকপাতা বিক্রি করতাম । কিন্তু শিক্ষা লাভ করে ভালো চাকরি না পাওয়ায় এখন এই ব্যবসাটাই আমার জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন । আমি সরকারী চাকরি পাইনি জন্য আমার শিক্ষালাভ ব্যর্থ হয়েছে এটা আমি ভাবি না ।'
advertisement
Geetashree Mukherjee
view commentsLocation :
First Published :
May 27, 2022 7:31 PM IST