Australia Durga Puja 2022|| উৎসবে ফের মাতবে প্রবাসী বাঙালিরা, পারথের আকাশে এখন শুধুই পুজোর গন্ধ

Last Updated:

Probasi Bengalis from Australia Perth prepared for Durga Puja 2022: পারথের বৃহত্তর বাঙালি পরিবারের তরফ থেকে আমার দেশের সবাইকে জানাই শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা। সবার পুজো খুব ভাল কাটুক। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। লিখছেন ইপ্সিতা মজুমদার।

#অস্ট্রেলিয়া, পারথ: “বাজলো তোমার আলোর বেণু
মাতলো রে ভুবন"....
পৃথিবীর কোণায় কোণায় আজ এই সুর সমস্বরে সমোচ্চারিত। ধরণী আবার সুস্থ হয়েছে। ফিরেছে নিজের তালে, সেই তালেই পড়ছে ঢাকের কাঠি। বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে উমার সঙ্গে সঙ্গে তাই সবার বাড়ি ফেরার পালা। দীর্ঘ দু’বছরের মহামারীর করাল থাবা থেকে মুক্তি। নিশ্চল হয়ে থাকা উড়োজাহাজের ডানায় ভর করে আবার প্রবাসীদের পুজোতে বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড়।
advertisement
advertisement
সারা পৃথিবীর গতিপথ দু’বছর হয়ত অবরুদ্ধ ছিল না, কিন্তু, ওয়েস্ট্রার্ন  অস্ট্রেলিয়ায় যাতায়াত স্বাভাবিক হয়েছে এপ্রিল, ২০২২ থেকেই। অর্থাৎ, এই পাঁচ মাস আগে। কেউ কেউ এতদিন পরে বর্ডার খোলার আনন্দে সেই সময়েই ছুটে গিয়েছেন দেশে, আবার কেউ কেউ তখন থেকেই পুজোর জন্য টিকিট কেটে পাঁচ মাস ধরে অপেক্ষা করছেন। অতএব, এ বছর পুজোটা আমাদের অস্ট্রেলিয়াবাসীর জন্য খুব একটা সাধারণ তো একেবারেই নয়।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ওয়ারেন হেস্টিংস আসতেন, সাবেকিয়ানা-ইতিহাসে ঠাসা গড়িয়ার বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো
পারথ খুব ছোট্ট একটা শহর। পশ্চিম-অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী। সিডনি, মেলবোর্ন বা অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরগুলোর একদম উল্টোদিকে। তাই হয়ত পারথকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে আইসোলেটেড, নিরিবিলি, বিচ্ছিন্ন শহর। কিন্তু তাতেও এখানে বাঙালিদের সমাবেশ কম নয়। আর বাঙালি মানে আমাদের সর্বকালের সেরা উৎসব হবে না তা কী হয়?সর্বসাকুল্যে ২৪ লক্ষ জনসংখ্যার পারথে বাঙালি মাথাগুলোর আদমশুমারি হয় এই পুজোর সময়।
advertisement
আরও পড়ুনঃ পালকি চড়ে স্নানে যায় কলাবউ, প্রাচীন রীতিতেই পুজো চলছে মালদহের সেন বাড়িতে
গত দু’বছরে সেই সংখ্যা আরও বেশি বোঝা গিয়েছে। এই কিছুদিন আগে এখানে একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, বলছিলেন, ওনার দেশের বাড়িতে প্রতি বছর দুর্গাপুজো হয়, গত দু’বছর তিনি যেতে পারেননি। ভীষণ অসহায় লাগছিল। দু’বছর এখানে পুজো কমিটিগুলির পুজোতেও গিয়েছেন। কিন্তু, তাতেও যেন কোথাও ফাঁক রয়ে যেত। অগত্যা, বাড়িতে ছবি দিয়েই পুজো শুরু করেন। দেশের মত সব নিয়ম মেনে, নিজের মত করে যতটা পারেন। সেরকমই, কেউ হয়ত কোনও কমিটির পুরোনো প্রতিমাকে নিজের বাড়িতে স্থাপন করে নিষ্ঠাভরে দেবী আরাধনায় মেতেছেন। এ ভাবেই হয়ত, কেউ বিদেশের মাটিতে নতুন ভাবে রোপণ করেন নিজেদের শিকড়।
advertisement
আরও পড়ুনঃ প্রতিপদেই জ্বলে ওঠে রাজ রাজেশ্বরীর হোমকুণ্ড, বনেদিয়ানায় ঠাসা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস
প্রথমে এখানে একটি প্রধান পুজো কমিটি ছিল, যেটার নাম বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (বা.ও.য়া)। এখন পুজোর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যার মধ্যে অন্যতম- ‘প্রবাসী বাঙালি পুজো কমিটি’, ‘বাংলাদেশি পুজো কমিটি’। এমনকি শুধুমাত্র বাঙালি নয়, উৎসবপ্রেমি সব ভারতীয়রাও মাতেন এই উৎসবে, তাদের পুজো কমিটি ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়ান্স অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া’। এ ছাড়া, একান্ত ঘরোয়া পুজো তো আছেই। সবটাই এই ক’দিনের আনন্দকে আরও একটু চেটেপুটে নেওয়ার ছুতো।
advertisement
আরও পড়ুনঃ রাজবাড়িতে থেকে ৬০০ বছরের পুজো দেখুন, নাড়াজোল রাজবাড়ির ইতিহাসের সাক্ষী হোন
প্রবাসে পুজো পঞ্জিকা মতে সম্ভব হয় না। পুজোর আশেপাশের কোনও এক সপ্তাহান্তে পুজোর দিন ঠিক করা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যেয় ষষ্ঠী, শনিবার সকালে সপ্তমী, শনিবার সন্ধ্যেয় অষ্টমী, রবিবার সকালে নবমী এবং দশমী।পুজো সপ্তাহের মাঝে পড়লে ছুটি পাওয়া যায় না, আর যেহেতু এখানে ‘জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ’ সবটাই নিজেদের করতে হয়, তাই সবসময় সম্ভব হয়না পুজোর দিনক্ষণ মেনে চলা। দেশে গেলে পুজোর সময় পরার জন্য শাড়ি, পাঞ্জাবি গুছিয়ে আনতে হয় মনে করে। সারা বছর জমিয়ে রাখা সেই শাড়ি, পাঞ্জাবি তোলা থাকে এই দু'টো দিনের জন্য। আর যদি কেউ দেশ থেকে আনতে না পারেন তাহলে অনলাইনে শাড়ি-পাঞ্জাবি শপিং থেকে কুরিয়রের পেছনে ধাওয়া করে বাগাদে হয় পুজোর সাজ। পুজোর ফুলে পদ্ম পাওয়া যায় না, কখনও কখনও লোকাল অর্কিড দিয়েও পুজো সারতে হয়।
advertisement
বাঙালি পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ভুরিভোজ। তারও অভাব নেই এখানে। তবে এখানে ঠাকুর, জোগানদারের বালাই নেই। আবেগে ভেসে রীতিমত শাড়ি মেকআপ করেও কেউ কেউ হেঁসেলে ঢুকে খুন্তি নাড়েন। রান্না না হলে খাবে কী লোকে? আর সে রান্না কমপক্ষে দু’শো তিনশো জনের। ভোগের খিচুড়ি, লাবড়া, টমেটো-খেজুরের চাটনি থেকে শুরু করে দশমীর সন্ধ্যায় ভাত-পাঁঠার মাংসের ঝোল, পাত পেড়ে খায় পারথের বৃহত্তর বাঙালি পরিবার। তবে রান্নার দায়ভার মূলত পুরুষদের দায়িত্বে। পাঞ্জাবি পরে ম্যানেজ করাটা সহজ।
আমাদের এখানে আমেরিকার মত নামজাদা বাঙালি শিল্পীরা আসেন না প্রোগ্রাম করতে। বরং কয়েকমাস ধরে আমাদের নিজেদের মধ্যেই রিহার্সাল চলে পুজোর ‘সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’র আয়োজনে। ঠিক যেমন পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলে হয়, খানিকটা তেমন। সেখানে নামজাদা শিল্পীর চাকচিক্য না থাকতে পারে, কিন্তু থাকে পাড়ার মুখচেনা ছেলে বা মেয়েটার হঠাৎ একদিনের শিল্পী হওয়ার গল্প। এখানে ধুনুচি নাচ হয় কিন্তু আগুন ছাড়া (ফায়ার আলার্ম বেজে যাবে যে)। সন্ধিপুজোর আরতি ইলেকট্রিক টুনি দিয়ে সারতে হয়। এখানে আমাদের ঢাকি আসে না, তবে ঢাক আছে। সেখানে তালে তালে নিজেরাই নিজেদের মত বাজানো ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন’। সিঁদুর খেলায় মাতেন সকলে। এখানে ভাসান হয় না মূর্তির। দশমীর পরে একটা কার্টনে করে মূর্তি তুলে রেখে দেওয়া হয়, পরের বছরের জন্য।
দু’বছরে অনেক কিছুই পালটে গিয়েছে। ভাটা পড়েছে অনেক আনন্দের স্রোতে। ভিড় উপচে পড়েনি কলকাতার পুজো মণ্ডপে। শুধু ভাটা পড়েনি, বাঙালির এই মহোৎসবের স্পিরিটে। কখনও হয়ত তা চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, কখনও তা ছড়িয়ে পড়েছে চরম সাবধানতার ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেও পুজোর আড্ডায়। দুরুদুরু বুকে আমরা শুধু প্রহর গুনেছি, এই ঝড় থামার এবং আমরা পেরেছি। সব মন্দের মধ্যেও ভাল থাকতে শিখে গিয়েছি সকলে। পারথের বৃহত্তর বাঙালি পরিবারের তরফ থেকে সব্বাইকে জানাই শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা। সবার পুজো খুব ভাল কাটুক। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ইপ্সিতা মজুমদার
বাংলা খবর/ খবর/বিদেশ/
Australia Durga Puja 2022|| উৎসবে ফের মাতবে প্রবাসী বাঙালিরা, পারথের আকাশে এখন শুধুই পুজোর গন্ধ
Next Article
advertisement
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! তারপরেই, এই এলাকার পুজোর থিম দেখলে অবাক হবেন!
পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ক্লাব এর সদস্যর এক আত্মীয়র! অন্যরকম থিম এই এলাকায়
VIEW MORE
advertisement
advertisement