'বেতন দেয় না ৬ মাস, না খেয়ে আছি...' তিউনিশিয়ায় আটকে ৪৮ ভারতীয় শ্রমিক! করলেন ফেরানোর অনুরোধ
- Published by:Tias Banerjee
Last Updated:
তিউনিশিয়ায় আটকে থাকা ঝাড়খণ্ডের ৪৮ শ্রমিক প্রিম পাওয়ার কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন; ভারতীয় দূতাবাস ও সরকার উদ্ধার প্রচেষ্টায়।
তিউনিশিয়ায় আটকে রয়েছেন ভারতের অন্তত আটচল্লিশ জন শ্রমিক। ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জেলা—হজারি বাগ, গিরিডি ও বোকারো থেকে যাওয়া এই শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ভালো বেতনের চাকরি ও সুরক্ষিত পরিবেশে কাজের সুযোগের। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা পৌঁছেছেন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে, যেখানে দিনের পর দিন না খেয়ে, টাকাহীন অবস্থায় বেঁচে আছেন বিদেশের মাটিতে।
এই শ্রমিকদের অভিযোগ, দিল্লি-ভিত্তিক একটি বেসরকারি নিয়োগ সংস্থা তাঁদের বিদেশে পাঠায়। সংস্থাটি দাবি করেছিল যে তিউনিশিয়ায় বিদ্যুৎ পরিবহণের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সমিশন লাইন বসানোর প্রকল্পে তাঁদের কাজ থাকবে। কিন্তু তিউনিশিয়ায় পৌঁছে তাঁরা বুঝতে পারেন, বাস্তবে কাজের পরিবেশ একেবারেই অন্যরকম। প্রতিদিন বারো ঘণ্টা পর্যন্ত পরিশ্রম করানো হচ্ছে তাঁদের দিয়ে, অথচ মাসের পর মাস ধরে কোনও বেতন দেওয়া হয়নি। কেউ প্রতিবাদ করলে বা দেশে ফিরতে চাইলেই তাঁদের জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
advertisement
advertisement
আটকে থাকা শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তিন থেকে ছয় মাস ধরে তাঁদের কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। ফলে এখন খাবার কেনারও সামর্থ্য তাঁদের নেই। মোবাইলে রিচার্জ করার টাকা না থাকায় পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। একাধিক ভিডিও বার্তায় তাঁরা ভারতীয় দূতাবাস ও ঝাড়খণ্ড সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, যেন দ্রুত তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। ভিডিও বার্তায় এক শ্রমিকের কণ্ঠে শোনা যায়—“আমরা না খেয়ে আছি। আমাদের বেতন দেয়নি। বাড়িতে কথা বলতে পারছি না। দয়া করে আমাদের ফিরিয়ে নিন।”
advertisement
ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে ঝাড়খণ্ড সরকার। রাজ্যের শ্রম দফতর বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে এবং আটকে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। শ্রম দফতরের মাইগ্র্যান্ট কন্ট্রোল সেলের প্রধান শিখা লাকরা জানিয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই তিউনিশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে। ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাঁদের নিরাপদে দেশে ফেরানোর জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
advertisement
এই ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন সমাজকর্মী সিকন্দর আলি। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে গিরিডির এক শ্রমিক সঞ্জয় কুমার তাঁর কাছে ভিডিও বার্তা পাঠান। তিনি সেই বার্তাটি শ্রম দফতর ও সাংবাদিকদের কাছে পাঠান এবং পরে তা মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছায়।
শ্রমিকদের পাঠানো হয়েছিল দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে, যেটি একটি বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। প্রকল্পটি ছিল উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ পরিবহণ লাইন বসানোর কাজের জন্য। সংস্থাটির নাম প্রিম পাওয়ার কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। অভিযোগ উঠেছে, সংস্থাটি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আটকে রেখেছে।
advertisement
এখন ভারতীয় দূতাবাস, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক একযোগে কাজ করছে তাঁদের উদ্ধারের জন্য। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, আটকে থাকা শ্রমিকদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য তিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে এবং দ্রুতই তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
তিউনিশিয়ার মরুভূমির মতো কঠিন পরিস্থিতিতে এই শ্রমিকরা এখন কেবল একটি আশার প্রতীক্ষায়—যেন আবার নিজেদের দেশে ফিরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
International
First Published :
November 01, 2025 9:53 AM IST

