Brother Gaston Dayananda- মানবসেবার টানে ইউরোপ ছেড়ে হাওড়ায়! রইল ব্রাদার গ্যাস্টন দয়ানন্দের অসামান্য জীবন কাহিনী..
- Published by:Samarpita Banerjee
Last Updated:
ডোমিনিক ল্যাপেয়ারকে 'সিটি অফ জয়'-এর ফাদার কোভালস্কির মহান চরিত্র সৃষ্টি করতে যিনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনিই গ্যাস্টন দয়ানন্দ। কয়েক দশক ধরে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সকলের প্রিয় গ্যাস্টন দা।
#হাওড়া: বিশ্বজুড়ে চর্চা চলে আজও। উপন্যাস কিংবা সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র, আজ হাওড়ার গ্রামে। ফরাসি লেখক ডোমিনিক ল্যাপেয়ারের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস 'সিটি অফ জয়'-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ফাদার কোভালস্কি।
একজন চিকিৎসক যিনি আর্তের সেবায় নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। নিজ কর্ম, আত্মত্যাগ আর নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন আর্ত ও পীড়িত মানুষের ভগবান। ডোমিনিক ল্যাপেয়ারকে 'সিটি অফ জয়' লিখতে কিংবা ফাদার কোভালস্কির এই মহান চরিত্র সৃষ্টি করতে যিনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনি ব্রাদার গ্যাস্টন দয়ানন্দ, সকলের প্রিয় গ্যাস্টন দা।
advertisement
advertisement
আসলে রক্ত-মাংসের ব্রাদার গ্যাস্টন দয়ানন্দই 'সিটি অফ জয়'-এর ফাদার কোভালস্কি। গ্রামীণ হাওড়ার শ্যামপুরের গোহালপোতা গ্রামে গান্ধিভবনে দেখা মিলবে গ্যাস্টন দা'র। ইঁটের দেওয়াল আর খড়ের ছাউনির 'গান্ধিভবন'ই এখন তাঁর বাসস্থান। মানবসেবার টানে সুদূর ইউরোপ থেকে এদেশে এসেছিলেন, আর ফেরা হয়নি। এখানেই মন পড়ে গেছে গ্যাস্টন দা'র।
advertisement
সুইজারল্যান্ডের জেনিভায় ব্রাদার গ্যাস্টন দয়ানন্দের জন্ম। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ছোটো থেকেই মানবদরদী মন তাঁর। তাই মানুষের সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, মানব সেবার টানে ছুটে যান ফ্রান্স। তারপর ভারত।
সালটা ১৯৭২। বাংলা, বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কাজ শুরু করেন গ্যাস্টন দা। কখনো ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্তকে সেবা করা, আবার কখনো বা বন্যা কবলিত মানুষকে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, আবার কখনো বা বঞ্চিত মানুষকে নতুন করে স্বপ্ন দেখানো — এভাবেই চলে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লড়াই। হাওড়ার পিলখানায় কাজ করার সময় মানুষের সাথে মিশে যান গ্যাস্টন দা। এখানেই পরবর্তীকালে ভারতের নাগরিকত্বও গ্রহণ করে পাকাপাকি ভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন।
advertisement
পিলখানাতে থাকাকালীন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত মানুষের সেবা - শুশ্রুষার কাজ শুরু করে দিলেন। ১৯৭৮ সালের বন্যায় হাওড়া জেলার গ্রামীণের আমতা, উলুবেড়িয়া, বাগনান, উদয়নারায়ণপুর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নৌকা করে ত্রাণ এনে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ব্রাদার গ্যাস্টন দয়ানন্দ। পরে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য কাজ শুরু গ্যাস্টনের। বিবাহ বা সংসার না করে, তাঁর জীবন এভাবেই কয়েক দশক সময় ধরে মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন গ্যাস্টন দা।
advertisement
শ্যামপুরের গোহালপোতা গ্রামে তিনি তৈরি করেছেন 'ইন্টার রিলিজিয়াস সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট' বা 'আইকড' নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। অনেকটা শান্তিনিকেতনের আদলে গোহালপোতায় ৩০ বিঘার বেশি জমির উপর গড়ে উঠেছে ' আইকড' এর বিভিন্ন কর্মকান্ড। বৃদ্ধাশ্রম, অনাথ আশ্রম, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিশেষ আবাসস্থল, পোল্ট্রি ফার্ম, অজস্র দেশি-বিদেশি গাছ সহ আরও কত কী! আইকডের আশ্রয়স্থলে স্থান পেয়েছে ক'য়েকশো আশ্রয়হীন অসহায় শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এসব নিয়েই সুশোভিত আইকডের ক্যাম্পাস।
advertisement
সেই ক্যাম্পাসের এক চিলতে কুঁড়ে ঘরেই থাকেন বছর ছিয়াশির ব্রাদার গ্যাস্টন দয়ানন্দ। শরীরে বার্ধ্যকের ছাপ। কিন্তু মনে তাঁর অসম্ভব জোর। আর সেই অদম্য মানসিক শক্তিকে সম্বল করে, হুইল চেয়ারে বসেই নিজের বৃহৎ কর্মকাণ্ডের স্থল ঘুরে দেখেন।
দশকের পড় দশক জুড়ে তিনি কেবল আর্তের সেবাই করেননি, সুকেশী বাড়ুই, জন মেরি বাড়ুই, এম এ ওয়াহাব, সাবিত্রী পাল, গোপা ঘোষদের মতো তিনি তাঁর যোগ্য উত্তরসূরীদের তৈরি করেছেন। যাঁরা আজ অজস্র অসহায় মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তাঁর মতই। সকলের প্রিয় গ্যাস্টন দা আজীবন অকৃতদার থেকে এভাবেই গেয়ে চলেছেন মানুষের জয়গান — 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই'।
advertisement
Rakesh Maity
Location :
First Published :
May 26, 2022 11:50 AM IST