'' আমার মানসিকতাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উপযোগী করে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায় ''
- Published by:Rukmini Mazumder
- news18 bangla
Last Updated:
চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ডাক পেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! তার আগে যা অভিনয় করেছেন, সবই মঞ্চে...
#কলকাতা: চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ডাক পেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! তার আগে যা অভিনয় করেছেন, সবই মঞ্চে! কম রিহার্সাল , ছোট ছোট শট-এ অভিনয়, তাড়াছা ফিল্মের শুটিং কাহিনীর ক্রমানুসারে হয় না, আগের দৃশ্য মধ্যে কি মধ্যের দৃশ্য পরে শুট হতে পারে, এর ফলে চরিত্রের ফিলিংস ব্যাহত হতে পারে... এইসব ভেবে ভয়ে বুক দুরুদুরু! সৌমিত্রের ভাষায়, '' এই সব আশঙ্কা কাটিয়ে দিয়ে আমার মানসিকতাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উপযোগী করে তুলেছিলেন আমার পরিচালক সত্যজিৎ রায়।''
শুরু হল 'অপুর সংসার'-এর শুটিং। তেমন কোনও একটা রিহার্সালের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু সত্যজিৎ রায় খুব ধীরে ধীরে এবং অনেকটা অলক্ষিতভাবেই সৌমিত্রকে অপুর চরিত্রের জন্য তৈরি করে নিয়েছিলেন। 'পথের পাঁচালি'র পরে সত্যজিৎ রায় যখন 'অপরাজিত'-র অপুর জন্য কিশোর অভিনেতা খুঁজছেন, তখন তাঁরই একজন সহকারী সৌমিত্রকে রায়ের কাছে হাজির করেছিলেন। কিন্তু অপুর জন্য সৌমিত্রর বয়সটা বেশি ছিল, তাই নির্বাচিত হননি। অনেক পরে সৌমিত্র জেনেছিলেন, ট্রিলজির তৃতীয় পর্বে যুবক অপুর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তখন থেকেই সত্যজিৎ তাঁর কথা ভেবে রেখেছিলেন।
advertisement
'অপুর সংসার' করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সৌমিত্রকে ডেকে পাঠালেন সত্যজিৎ। বললেন, বিভূতিভূষণের মূল উপন্যাসটা ঝালিয়ে নিতে। জানালেন ক্যামেরা টেস্ট ও ভয়েস টেস্ট-ও হবে! সৌমিত্রর ভাষায়, '' এই টেস্ট নেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে তখন বিশেষ কিছু ভাবিনি। মনে হয়েছিল সিনেমা তৈরি যে-দুটি যন্ত্রের ওপর প্রধানত নির্ভর করে, সে-দুটোর নিরিখে আমার উপযুক্ততা যাচাই করে নেওয়ার ইচ্ছেটা তো পরিচালকের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বহু পরে আমার মনে হয়েছে যে সত্যজিৎ রায়ের মতো শিল্পীর অভিজ্ঞ চোখকে ক্যামেরা টেস্ট-এর জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে হয়নি-- আমার ছবি ক্যামেরায় কেমন আসবে তা বোঝার জন্য! ভয়েস টেস্টের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা খাটে। আর সত্যিসত্যি যখন সত্যজিৎ রায় আমার ভয়েস টেস্ট নিলেন, তখন আসল শুটিং শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই এবং তার আগে আমি জেনেই নিয়েছি যে আমি ওই চরিত্রের মনোনীত অভিনেতা। তাও যে ক্যামেরা টেস্ট নিয়েছিলেন, তার কারণ, একজন নবাগত যাতে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে গিয়ে মানসিক অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে, ক্যামেরা যন্ত্রটার সঙ্গে তার যাতে একটা পরিচয় ঘটে, এই কথা ভেবেই। আমাকে চলচ্চিত্রের অভিনেতা হিসেবে প্রস্তুত করে নেওয়ার ওটা ছিল অন্যতম প্রক্রিয়া।''
advertisement
advertisement
ক্যামেরার সামনে অভিনয় আর সিনেমার শুটিং পদ্ধতির সঙ্গে খানিকটা পরিচিত করাতে সত্যজিৎ সৌমিত্রকে তাঁর দুটি ছবি 'পরশ পাথর' ও 'জলসাঘর'-এর সেটে আসতে বলেছিলেন। 'অপুর সংসার'-এর শুটিং শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে তিনি সৌমিত্রকে 'অপুর সংসার'-এর চিত্রনাট্যর একটি খসড়া দিয়েছিলেন, সঙ্গে ফুলস্ক্যাপ কাগজে 'অপু' চরিত্রের একটি ধারণা ও অপু-অপর্ণার সম্পর্ক নিয়ে দু পাতার একটি নোট।
advertisement
অপুর বাঁশি বাজানোর দৃশ্য থাকবে ছবিতে। সুরটা নাহয় সত্যি সত্যি অভিনেতা না বাজালেও চলবে, কিন্তু বাঁশি বাজানো না জানলে বাঁশির ফুঁ এবং আঙুলের টিপ থেকে ধরা পড়ে যাবে, অভিনেতা বাঁশি বাজাতে জানেন না! কাজেই বাঁশি বাজানো শিখতে গৌর গোস্বামীর কাছে নাঁড়া বাঁধলেন সৌমিত্র।
ছবিতে পুলুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন স্বপন মুখোপাধ্যায়। সৌমিত্র আর তিনি যাতে স্বচ্ছন্দে অভিনয় করতে পারেন, তার জন্য শুটিং-এর আগে দু-একটি দৃশ্যের থিয়েটারের মতো করেই রিহার্সালের ব্যবস্থা করেছিলেন রায় । যেমন টালা ইয়ার্ডে অপু ও পুলু থিয়েটার দেখে বাড়ি ফেরার দৃশ্যটি, যেখানে অপু 'বসুন্ধরা' কবিতা আবৃত্তি করছে আর যে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটি লিখছে, তা নিয়ে পুলুকে বলছে! এই দৃশ্যটি শুটের সময়ও বেশি শট-এ ভাগ করেননি সত্যজিৎ রায়। ইন্ডিয়া ল্যাব-এর স্কোরিং থিয়েটারে অনেকটা জায়গা ছিল। সেইখানেই সৌমিত্র আর স্বপন মুখোপাধ্যায় একদিন বহুক্ষণ ধরে হাঁটতে হাঁটতে রিহার্সাল দিয়েছিলেন, আসল শুটিং-টা হয়েছিল টালা রেলওয়ে ইয়ার্ডে।
advertisement
দৃশ্যটি শুট করার জন্য সত্যজিৎ রেলওয়ে পুশ-ট্রলি ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ট্রলি থেকে মনমতো ক্লোজ-আপ নিতে পারেননি। তখনও জুম লেন্স আসেনি। তাই স্টুডিওর ফ্লোরেই সৌমিত্রর ক্লোজ শট নিয়েছিলেন, ক্যামেরা স্টুডিও ট্রলিতে বসিয়ে। সৌমিত্রর ভাষায়, '' যখন আমি হাঁটতে হাঁটতে সংলাপ বলছি, তখন যাকে উদ্দেশ্য করে বলছি, সেই অভিনেতা পাশে নেই। আগে বাস্তবিক পরিবেশে মাস্টার শট হয়ে গেছে। এখন স্টুডিওতে আলো করে ক্লোজ শট হচ্ছে। আমার মতো নবাগত এই সব কাজ করতে করতেই শিখতে আরম্ভ করেছিল যে, সিনেমার অভিনেতাকে সিনেমা-মাধ্যমের বৈশিষ্ট্যকে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে মেনে নিয়েই অভিনয় করতে হয়।''
advertisement
তথ্য ঋণ:
অভিনয়: মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্রে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
(শতবর্ষে চলচ্চিত্র)
Location :
First Published :
October 10, 2020 4:41 PM IST