১৯২৬... সিমলা আর বাগবাজারের দুর্গাপুজোর হাত ধরেই সূচনা হল সর্বজনীন দুর্গোৎসবের
- Published by:Rukmini Mazumder
- news18 bangla
Last Updated:
তখনও পর্যন্ত দুর্গাপুজো ছিল একশ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ! গোটা বাঙালির নয়। দুর্গাপুজো বাঙালীর জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়, পুজো সর্বজনীন হওয়ার পর। প্রথমে বাড়ির পুজো, তারপর এল বারোয়ারি পুজো, সবশেষে সর্বজনীন।
#কলকাতা: সেকালের কলকাতায় বাবুদের বাড়িতে দুর্গাঠাকুর দেখার অধিকার, সুযোগ সবার ছিল না। কেবল অতিথিরা সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন। দারোয়ান দাঁড়িয়ে থাকত বাড়ির গেটে, হাতে চাবুক ! অতিথি ছাড়া আর কেউ বাড়ির মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলেই তাঁর কপালে জুটত দারোয়ানের হাতে চাবুক- পেটা! অথচ সাহেব সুবোদের জন্য ছিল আপ্যায়নের বিপুল ব্যবস্থা!
তখনও পর্যন্ত দুর্গাপুজো ছিল একশ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ! গোটা বাঙালির নয়। দুর্গাপুজো বাঙালীর জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়, পুজো সর্বজনীন হওয়ার পর। প্রথমে বাড়ির পুজো, তারপর এল বারোয়ারি পুজো, সবশেষে সর্বজনীন।
বারোয়ারি পুজোর পিছনে একটা গল্প রয়েছে। হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার জমিদার বিশাল করে দুর্গা পুজো করতেন! নিমন্ত্রিত থাকতেন সমাজের তাবড় তাবড় হনু-সাহেবরা! সাধারণ মানুষরা পুজোর ক'দিন জমিদার বাড়ির ধারেকাছে পর্যন্ত ঘেঁষতে পারতেন না! ওই গ্রামেই ছিল ১২জন বন্ধুর এক দল! বছরের পর বছর এই একই ঘটনা ঘটতে দেখে তাঁরা গেল বেজায় চটে! সালটা ছিল ১৭৯০! ১২জন বন্ধু ঠিক করলেন, তাঁরাই চাঁদা তুলে দুর্গাপুজো করবেন! পুজো হলও ! সাধারণ মানুষ মন ভরে দেবীর আরাধনা করলেন। সেই শুরু। প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো! ১২জন ইয়ার বা বন্ধু এই পুজো শুরু করেছিলেন, সেই থেকেই এই পুজোর নাম হল বারোয়ারি পুজো।
advertisement
advertisement
তবে, বারোয়ারি পুজো হয় মুষ্টিমেয় কয়েকজনের চাঁদার টাকায় কিন্তু সর্বজনীন দুর্গাপুজো হয় জনসাধারণের চাঁদার টাকায়। এই পুজোর পত্তন হয় কলকাতাতেই, ১৯২৬ সালে। সে'বছর সিমলা আর বাগবাজারে আয়োজিত হয়েছিল শহরের প্রথম সর্বজনীন দুর্গাপুজো।
সিমলা ব্যায়াম সমিতির অতীন্দ্রনাথ বোস ছিলেন সিমলার দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তা। প্রতিমা তৈরি করেছিলন কুমোরটুলির বিখ্যাত মৃতশিল্পী নিতাই পাল। প্রথম বছরে মূর্তিটি ছিল একচালার। ১৯৩৯ সাল থেকে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা চালের ব্যবস্থা হয়।বাগবাজারের দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৯১৮ বা ১৯ সালে। প্রথমে এটি ছিল বারোয়ারি পুজো। এই পুজো সূচনার ঘটনাও অনেকটা গুপ্তিপাড়ার ঘটনার মতোই। স্থানীয় কিছু যুবক এক ধনীলোকের বাড়িতে দুর্গাঠাকুর দেখতে গিয়ে অপমানিত হন। পরের বছর তাঁরা বারোয়ারি পুজো চালু করেন। সবার জন্য তাঁরা উন্মুক্ত করে দেন পুজোমণ্ডপের দ্বার। এই পুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন রামকালী মুখোপাধ্যায়, দীনেন চট্টোপাধ্যায়, নীলমণি ঘোষ, বটুকবিহারী চট্টোপাধ্যায়। পরে এই পুজোই পরিণত হয় সর্বজনীন দুর্গাপুজোয়।
advertisement
প্রথমদিকে সর্বজনীন পুজোয় বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন অনেক রক্ষণশীল পণ্ডিত। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন পণ্ডিত দীননাথ ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে।
Location :
First Published :
October 06, 2020 6:36 PM IST