Independence Day: ‘এ তো আমার কানু নয়’, অন্য বিপ্লবীকে বাঁচাতে নিথর সন্তানকে দেখে কান্না চেপে বলেন কানাইলালের মা

Last Updated:

কানাইলাল ভট্টাচার্যের (Kanailal Bhattacharjee) জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের মজিলপুরে। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও মা কাত্যায়নী দেবী। ছোটবেলা থেকেই স্বদেশী বই পড়া ছিল তাঁর নেশা।

জয়নগর : ২৭ জুলাই, ১৯৩১ ।  অন্যান্য দিনের মতো আলিপুর জজ কোর্টে লোকে লোকারণ্য। বিচারকের আসনে বসে ‘অর্ডার অর্ডার’ বলছেন বিচারক গ্যালিক সাহেব। কিছুদিন আগেই  বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত  ও বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন তিনিই।
হঠাৎ-ই সবাইকে অবাক করে ৩৮ বোরের একটা কোল্ট জুপিটার রিভলবার গর্জে উঠল। দর্শক আসন থেকে একটি গুলি ধেয়ে এল গ্যালিকের দিকে।  এক গুলিতেই প্রাণ হারালেন তিনি। রে রে করে এল ইংরেজ পুলিশের দল। গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিল সেই সাহসী  যুবকের শরীর। যার পকেটের রিভলবারটা গর্জে উঠেছিল কোর্ট রুমে।
পালানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি যুবক। যেন পরিণতি জেনেও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে এসেছেন। ঘৃণ্য ব্রিটিশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ এড়াতে  তত ক্ষণে ওই যুবক মুখে পুরে দিয়েছে পটাশিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুল।
advertisement
advertisement
হাসিমুখে চিরঘুমে ঘুমিয়ে পড়েছেন। যুবকের পকেট হাতড়ে পাওয়া গেল একটি চিরকুট। তাতে লেখা, "ধ্বংস হও ,দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও। - বিমল গুপ্ত।"
ব্রিটিশ পুলিশেরা ভাবল যাক ,এই বিমল গুপ্ত লোকটা এতো দিনে মরল তাহলে। কিন্তু কে এই বিমল গুপ্ত ? তিনি বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের মন্ত্রশিষ্য। লবণ আইন অমান্য আন্দোলনের সময় জেলাশাসক জেমস পেডি সাহেব, দিঘা সমুদ্রতীরে সত্যাগ্রহীদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিলেন। তারই প্রতিশোধ নিতে দীনেশ গুপ্তের নির্দেশে পেডি সাহেবকে হত্যা করেন বিমল গুপ্ত। তাই তাঁকে খুঁজে পাওয়ার জন্য তখন হন্যে হয়ে ঘুরছিল ব্রিটিশ পুলিশ। অবশেষে এই চিরকুট দেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ইংরেজ শাসকরা।
advertisement
কিন্তু মজার বিষয়, ইংরেজ পুলিশ কখনওই বিমল গুপ্তকে সামনে থেকে দেখেনি। বিমল গুপ্ত তখন আত্মগোপন করে ঝড়িয়ার কয়লাখনিতে ছোট একটি চাকরি করছেন।
তাহলে কে এই যুবক ?  পুলিশকে বোকা বানিয়ে  বিমল গুপ্তের ছদ্মনামে যিনি আত্মবলিদান দিলেন? তিনি বাংলার বীর সন্তান বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য।
advertisement
কানাইলাল ভট্টাচার্যের (Kanailal Bhattacharjee) জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগরের মজিলপুরে। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও মা কাত্যায়নী দেবী। ছোটবেলা থেকেই স্বদেশী বই পড়া ছিল তাঁর নেশা। তিনি  মজিলপুর জে এম ট্রেনিং স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৩১ সালে জয়নগর-মজিলপুর ব্যায়াম সমিতির সভ্য পদে যোগদান করেন এবং মন্মথ ঘোষ ও বিপ্লবী সুনীল চট্টোপাধ্যায় হাত ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীক্ষা নেন।
advertisement
শোনা যায়, বিপ্লবী সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তিনি গ্যালিক হত্যা অভিযানে গিয়েছিলেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে দেশের জন্য শহিদ হন। কানাইলাল ভট্টাচার্যের মা-ও ছিলেন স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত এক মহীয়সী। দেশের স্বাধীনতার জন্য সন্তানকে বিসর্জন দিতে দু-বার ভাবেননি তিনি। এমনকি, শনাক্তকরণের সময় কানাইলালের দেহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাঁর মা বলেন -"এ তো আমার কানু নয়।"
advertisement
কানাইলাল হলেন সেই ব্যক্তি যিনি ত্যাগের বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে।
ঐতিহাসিক রাইটার্স অভিযানে বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্ত নিহত হন ৷ দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।  ব্রিটিশ বিচারক আর আর গ্যালিক সেই আদেশনামায় সই করেছিলেন। এর পর গ্যালিক-নিধনের মতো গুরু দায়িত্ব পালনের কাজে যোগ্যতম ব্যক্তি হিসেবে বেছে নেওয়া হয় কানাইলাল ভট্টাচার্যকে।
advertisement
তিনি ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। খুব অল্প বয়সেই স্বাধীনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ৷ তাঁর আত্মবলিদানের স্মরণে পরবর্তীকালে আলিপুর বেকার রোডের নাম বদলে রাখা হয় বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য রোড। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জয়নগর-মজিলপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নামও এই বীর শহিদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্রোঞ্জের একটি আবক্ষমূর্তি মজিলপুর দত্ত বাজারে স্থাপন করা হয়েছে।
কানাইলালের মতো ক্ষণজন্মারা কোনও স্বীকৃতির প্রত্যাশা অবশ্য করতেন না ৷ জন্মভূমিকে স্বাধীন করতে অন্য বিপ্লবীর পরিচয়েও প্রাণ দিতে ছিলেন দ্বিধাহীন ৷ বিশ্বাস করতেন, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি ৷
প্রতিবেদন: রুদ্রনারায়ণ রায়
বাংলা খবর/ খবর/ফিচার/
Independence Day: ‘এ তো আমার কানু নয়’, অন্য বিপ্লবীকে বাঁচাতে নিথর সন্তানকে দেখে কান্না চেপে বলেন কানাইলালের মা
Next Article
advertisement
SSC-তে এ বছর হিন্দির শূন্যপদ কত জানেন? ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীর এত ভিড় কেন, জানা গেল কারণ!
SSC-তে এ বছর হিন্দির শূন্যপদ কত জানেন? ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীর এত ভিড় কেন, জানা গেল কারণ!
  • রাজ্যের এসএসসি পরীক্ষায় হিন্দি মাধ্যমের ২২৫১ শূন্যপদে ভিনরাজ্যের ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন.

  • হিন্দি মাধ্যমের শূন্যপদ পূরণের জন্য ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীদের ভিড় স্বাভাবিক বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ.

  • হিন্দি মাধ্যমের শিক্ষক নিয়োগে ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে.

VIEW MORE
advertisement
advertisement