Explained: বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুর পর শিরোনামে ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’, কতটা বিপজ্জনক এই রোগ?
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
Obstructive Sleep Apnea: অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA) হল এমন একটি রোগ, যার কারণে এক জন ব্যক্তির শ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঘুমের মধ্যে।
#নয়াদিল্লি: অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (OSA) হল এমন একটি রোগ, যার কারণে এক জন ব্যক্তির শ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঘুমের মধ্যে। এক কথায় বলতে গেলে ঘুমের সময় শ্বাসনালিতে অক্সিজেনের সঙ্কটই হল এই রোগের কারণ। অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণেই ঘুমের মধ্যে রোগীর হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে।
বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকার বাপি লাহিড়ি (৬৯) গত মঙ্গলবার রাতে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার জটিলতার কারণে মারা গেলেন। বিশ্ব জুড়ে এই রোগটির প্রভাব রয়েছে, অথচ এই রোগের চিকিৎসা হয় কম। রোগীর শরীরে ধরাও পরে কম এই রোগটি। অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে অনেকেই এই রোগটিকে বিশেষ ভাবে গ্ৰাহ্য করেন না।
advertisement
আরও পড়ুন- শরীর দুর্বল থাকলে বাড়তে পারে ব্লাড সুগার লেভেল, লাইফস্টাইল বদলান আজ থেকেই
ঘুমের মধ্যে বিকট শব্দে নাক ডাকার ব্যাপারটিকে নিছকই হাসি-ঠাট্টার ছলে উড়িয়ে দেন অনেকে। তাঁরা বুঝতে পারেন না জোরে নাক ডাকা কিছুক্ষণের বিরতিতে জোরে শব্দ করে ধড়ফড়িয়ে উঠে হাঁপিয়ে শ্বাস নিতে থাকার এই সমস্যা ক্রমশ বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।
advertisement
advertisement
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ওএসএ কী?
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রধান লক্ষণ জোরে নাক ডাকা। রাতে ঘুমের সময় নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাঁ করে শ্বাস নেওয়া। গলা শুকিয়ে যাওয়া, ধড়ফড় করে উঠে বসার লক্ষণও দেখা যায়। ওই রোগীরা সকালে কাজের মধ্যেও ঘুমে ঢুলে পড়েন। ঘুমের সময় গলা এবং উপরের শ্বাসনালীর পেশীগুলি মাঝে মাঝে শিথিল হয়ে যায় এবং শ্বাসনালী ব্লক করে।
advertisement
সাকেতের ম্যাক্স হাসপাতালের ব্রঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ নবীন কিশোর জানান, "এটি রোগটি সাধারণত স্থূল পুরুষদের মধ্যে ঘটে, মহিলারা এই রোগে কম আক্রান্ত হন। কোনও এক জন মোটা ব্যক্তির স্বরযন্ত্র এবং গলবিলের (গলার পেশী) উপর অতিরিক্ত চর্বি তৈরি হয়, যা ঘুমের মধ্যে তাঁদের শ্বাসনালী বন্ধ করে দিতে পারে। পেশীগুলি ঘুমের মধ্যে শিথিল হতে শুরু করে। শুষ্ক হয়ে যায় পেশীগুলি। জলের অভাব অনুভূত হয়। অক্সিজেন চলাচল করতে পারে না। তখনই ঘটে যায় মহাবিপদ।
advertisement
আরও পড়ুন- কোভিড সনাক্ত করতে নতুন উদ্যোগ! ভারতীয় বিজ্ঞানীরা তৈরি করছেন নতুন প্রযুক্তি
এই অবস্থায় কম অক্সিজেনের মাত্রার কারণে রোগীর হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের ছন্দ এবং অন্যান্য বিপাকীয় রোগের সৃষ্টি করে। রোগটি আরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আরো মেদবহুল করে তোলে অর্থাৎ স্থূলতা বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। তখন সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তোলে।
advertisement
বিশেষ করে গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এই রোগটি। ওএসএ আক্রান্ত ব্যক্তি গাড়ি চালানোর সময় ঘুমিয়ে পড়তে পারেন। তখনই ঘটতে পারে সড়ক দুর্ঘটনা।
আপনার কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
নাক ডাকা অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সব চেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু যাঁরা নাক ডাকেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই এই রোগটি সম্পর্কে কোনও ধারণাই থাকে না। ডাঃ কিশোর বলেন, "১০ জনের মধ্যে ৯ জন হয়তো ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন না। তবে ঘুম থেকে উঠার পরও সকালে অস্বস্তি বা ঘুম ঘুম বোধ করলে এবং দিনের বেলা খুব ঘুম পেলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিন। সেই সঙ্গে দ্রুত শরীরের মেদ ঝরানো শুরু করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস প্রয়োজন। "
advertisement
আপনি ঘুমানোর সময় নাক ডাকেন? আপনি কি ঘুম থেকে উঠে বা আপনার দিনের বেশির ভাগ সময়ে অবসাদগ্রস্ত থাকেন?
ঘুমিয়ে থাকার সময় দম বন্ধ হয়ে আসছে, এমনটা অনেক সময়ই ঘটে থাকে। আর উচ্চরক্তচাপ থাকলে তো কথাই নেই, এক্ষেত্রে বয়স যদি পঞ্চাশোর্ধ্ব হয় তা হলে ঝুঁকি রয়েছে ১০০ ভাগ।
এইমস যোধপুরের পালমোনারি এবং ঘুমের ওষুধের বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিষেক ট্যান্ডন একটি টুইটে বলেছেন, যদি সন্দেহ হয় যে, কারওর এই রোগটি রয়েছে, তা হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা খরচে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
কী ভাবে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা বা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে?
এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এই দেশে। কেবলমাত্র শরীরের ওজন হ্রাস করলেই এই রোগ থেকে কিছুটা হলেও নিস্তার পাওয়া সম্ভব। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং শরীরের ওজন কম হলে মেদ জমতে পারবে না।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শরীরের ওজন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছয়গুণ বেড়ে যায়। রোগীদের শরীরের ওজন ১০ শতাংশ কমে গেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ২০ শতাংশ কমে যায়, এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা। অ্যালকোহল বা মদ্যপান করলেও উপসর্গ বাড়ে এবং যাঁদের ওএসএ রয়েছে, তাঁদের এই সব এড়িয়ে চলা উচিত।
Location :
First Published :
February 19, 2022 1:32 PM IST