Ukraine | Explained : সারি সারি মৃতদেহ, যুদ্ধের বীভৎস বাস্তব! ইউক্রেনের বুচায় যা হয়েছে, তা কি গণহত্যা?

Last Updated:

Ukraine | Explained : গত কয়েকদিনে সাংবাদিকরা অনেক মৃতদেহ কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন।

ইউক্রেনের বুচায় যা হয়েছে, তা কি গণহত্যা?
ইউক্রেনের বুচায় যা হয়েছে, তা কি গণহত্যা?
#নয়াদিল্লি: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের (Ukraine-Russia War) সবচেয়ে বীভৎস চিত্রটা দেখতে পাওয়া যাবে বুচা (Bucha) শহরে। এই শহর এখন যেন এক মৃত্যুপুরী। শহরে কাতারে-কাতারে মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। রাশিয়ার দখলকৃত শহর বুচায় গণকবর (Mass Grave) পাওয়া যায়। ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করে কবর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও রাস্তা থেকেও বহু মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। এই ঘটনা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর এই দৃশ্য দেখে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা বিশ্ব। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানী কিভের (Kyiv) আশেপাশের শহরগুলিতে কমপক্ষে ৪১০ জন অসামরিক মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। যেখানে রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত লড়াই করেছিল। এই এলাকায় লড়াই থামার পরই তার বীভৎস ছবিটা সামনে আসতে শুরু করেছে।
বুচায় গণহত্যা: ইউক্রেনের রাজধানীর কিভের উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বুচা শহর। যেখানে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে আনুমানিক ৩৬ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। সোমবার জেলেনস্কি যে শহরে গিয়েছিলেন সেখানে ৩০০টিরও বেশি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। কয়েকটি দেহ ছিল হাত-পা পিছমোড়া করে বাঁধা, কোনওটার মাথায় বুলেটের ক্ষতচিহ্ন। মার্চের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্রগুলি এখন প্রকাশ্যে আসছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে রাস্তায় পড়ে রয়েছে মৃতদেহের সারি। গত কয়েকদিনে সাংবাদিকরা অনেক মৃতদেহ কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। একটি গির্জার কম্পাউন্ডে অগভীর গণকবরে অনেকগুলি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে পাঁচটি মৃতদেহ তাদের হাত বাঁধা অবস্থায় শিশুদের স্যানিটোরিয়ামের বেসমেন্টে পাওয়া যায়। মনে করা হচ্ছে, হত্যার আগে ওই জায়গাতেই লোকজনের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল।
advertisement
এই গণহত্যার ছবি দেখে অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) সময়ের উদাহরণ টানছেন। কারণ সেই সময়ে এই অঞ্চলে বহু অসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল অ্যাডলফ হিটলারের (Adolf Hitler) বাহিনী। কিভের প্রথম যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় যুদ্ধের মধ্যে যখন রেড আর্মি (Red Army) ইউক্রেন থেকে জার্মানদের পিছনে ঠেলে দিতে শুরু করে, তখন ইউক্রেনের রাজধানী, বুচা সহ বিভিন্ন এলাকায় নিধনযজ্ঞ হয়েছিল। আনুমানিক ১৫ লাখ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল হিটলারের রেড আর্মি। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল ইহুদি। ঠিক একই রকমের চিত্র দেখা গিয়েছে বুচাতেও। সাইকেলের পাশে, ফুটপাতে এবং বাড়ির উঠোন এবং বাগানে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। ছবি ও ভিডিও থেকে এটা পরিষ্কার যে অসামরিক নাগরিকদের নির্বাচারে হত্যা করা হয়েছে।
advertisement
advertisement
বাসিন্দারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে (Human Rights Watch) বলেছেন যে রুশ সেনারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তাদের সম্পত্তি লুট করেছে। রাশিয়ান সশস্ত্র যানবাহনগুলি বাড়ি লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ। ৪ মার্চ বুচায় রাশিয়ান বাহিনী পাঁচজনকে গ্রেফতার করে এবং তাদের মধ্যে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন যে সেনারা পাঁচজনকে রাস্তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেছিল, তারপর একজনের মাথার পিছনে গুলি করেছিল।
advertisement
গণহত্যা না কি যুদ্ধাপরাধ?
ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয় এবং পশ্চিমারা বুচায় নৃশংসতার ঘটনাকে একই সঙ্গে গণহত্যা (Genocide) ও যুদ্ধাপরাধ (War Crimes) বলে অভিহিত করেছে। তবে, এই ঘটনা সেই সংজ্ঞাগুলির সঙ্গে খাপ খায় কি না তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা রাশিয়াকে যুদ্ধাপরাধের জন্য আগেই অভিযুক্ত করেছে। তারা অভিযোগ করেছে যে মারিউপোলের (Mariupol) একটি প্রসূতি হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে অসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল রাশিয়া। এছাড়াও বহু মানুষের আশ্রয় নেওয়া একটি থিয়েটারেও হামলা চালিয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin) যুদ্ধাপরাধী বলেছেন।
advertisement
যুদ্ধাপরাধকে জেনেভা কনভেনশনের (Geneva Conventions) গুরুতর লঙ্ঘন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক মানুষকে টার্গেট করা যুদ্ধাপরাধের সামিল। হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (International Criminal Court) ইতিমধ্যেই রাশিয়ার সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তটি তত্ত্বগতভাবে পুতিনকেও অভিযুক্ত করতে পারে। তবে রাশিয়ান আসামীদের বিচারের আওতায় আনা ও অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হবে। রাশিয়া আইসিসি-কে স্বীকৃতি দেয় না এবং সম্ভবত তদন্তে সহযোগিতা করবে না।
advertisement
১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রসংঘের 'গণহত্যা কনভেনশনে' বলা হয়েছে, একটি জাতি, জাতিগত, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কাজকে গণহত্যা বলা হবে। মানবতার বিরুদ্ধে সমস্ত অপরাধের মধ্যে গণহত্যাকে সবচেয়ে জঘন্য এবং সবচেয়ে গুরুতর হিসাবে দেখা হয়।
advertisement
রাটগার্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ জেনোসাইড অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ডিরেক্টর আলেকজান্ডার হিন্টন বলেছেন যে গণহত্যার অপরাধীরা একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করার বদলে একটি জনগণকে ধ্বংস করতে চায় এবং তারা পরিকল্পিত উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। হিন্টন বলেছেন যে তিনি রাশিয়ার ক্রিয়াকলাপকে এখনও গণহত্যা বলে বিশ্বাস করেন না, যদিও এটা যুদ্ধাপরাধ বলেই মনে হয়েছে।
জেনোসাইড ওয়াচের (Genocide Watch) চেয়ারম্যান গ্রেগরি স্ট্যান্টন অবশ্য বলেছেন যে রাশিয়া গণহত্যার অপরাধের পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। স্ট্যান্টন বলেছিলেন যে গণহত্যা হল একটি গোষ্ঠী অপরাধ, যা একটি রাষ্ট্র দ্বারা তার নিজের জনগণ বা অন্য রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, রাশিয়ানদের আংশিকভাবে একটি জাতি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার অভিপ্রায় রয়েছে এবং সেটি হল ইউক্রেনীয় গ্রুপ।
কোন ঘটনাকে গণহত্যা বলা হবে আর কোনটাকে হবে না, তা নিয়ে অতীতেও বিতর্ক হয়েছে। এই বিষয়ে মতামতের পার্থক্যও রয়েছে। আংশিকভাবে এই শব্দটি ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনীহাও রয়েছে কিছু ক্ষেত্রে। হলোকাস্টে ৬ মিলিয়নেরও বেশি ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে গণহত্যার আরও তিনটি উদাহরণ রয়েছে। সেগুলি হল-১৯১৫-২০ সালে অটোমান তুর্কিদের দ্বারা আর্মেনীয়দের গণহত্যা (Mass Killings Of Armenians By Ottoman Turks), ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় ৮ লাখ তুতসি এবং মধ্যপন্থী হুতুদের হত্যা (killings Of Tutsis And Moderate Hutus In Rwanda) এবং ১৯৫৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা গণহত্যা (Srebrenica Massacre)।
আন্তর্জাতিক মহল ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: কিভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো (Vitali Klitschko) বলেছেন যে বুচা এবং অন্যান্য শহরতলিতে যা ঘটেছে, সেটাই শুধুমাত্র গণহত্যা হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। রবিবার প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন যে রাশিয়ার এই সামরিক পদক্ষেপ ছিল গণহত্যা, সমগ্র জাতি এবং জনগণকে নির্মূল করাই রাশিয়ার উদ্দেশ্য।
ইউক্রেনের সমস্ত পশ্চিমা মিত্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিল (Council of the European Union), ন্যাটো (NATO) এবং রাষ্ট্রসংঘ (United Nations) বুচায় গণহত্যার তীব্র নিন্দা করেছে। আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর দাবির সঙ্গে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, ডেনমার্ক এবং সুইডেন কয়েক ডজন রাশিয়ান কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে এবং সুইডিশ প্রসিকিউটররা ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।
যদিও রাশিয়া তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ক্রেমলিন বলেছে যে বুচার রাস্তায় মৃতদেহের যে সমস্ত ছবি সাংবাদিকরা তুলেছে, তা রুশ বাহিনী শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে ছিল না। তাদের আরও দাবি, রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে হেয় করার জন্য এটি একটি ভয়াবহ জালিয়াতি। কূটনৈতিক বহিষ্কারকে অদূরদর্শীতা বলে অভিহিত করেছে মস্কো। তারা পাল্টা একই রকমের পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া: বুচা গণহত্যা নিয়ে মুখ খুলেছে ভারতও (India)। ইউক্রেনের বুচা শহরে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে ভারত স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি (T. S. Tirumurti) বলেন, "কাউন্সিল শেষবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার পর থেকে ইউক্রেনের পরিস্থিতির কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়নি। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেই সঙ্গে এর মানবিক পরিণতিও হয়েছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের বুচায় নাগরিকদের গণহত্যার যে খবর পাওয়া গিয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা করছি এবং স্বাধীন তদন্তের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছি। প্রতিনিয়ত যে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে ভারত। পরিস্থিতির প্রভাব ইউক্রেন বা রাশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা বিশ্বে পৌঁছে যাচ্ছে। ক্রমাগত খাদ্য ও শক্তির দাম বাড়ছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। যখন নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়, তখন কূটনীতিই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়।"
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
Ukraine | Explained : সারি সারি মৃতদেহ, যুদ্ধের বীভৎস বাস্তব! ইউক্রেনের বুচায় যা হয়েছে, তা কি গণহত্যা?
Next Article
advertisement
ছোট্ট প্রতিমা, বর্ধমানের শিল্পীর তৈরি দুর্গা মূর্তি পাড়ি দিল কানাডায়!
ছোট্ট প্রতিমা, বর্ধমানের শিল্পীর তৈরি দুর্গা মূর্তি পাড়ি দিল কানাডায়!
  • বর্ধমানের শিল্পীর তৈরি দুর্গা প্রতিমা পাড়ি জমালো সুদূর কানাডায়। ফাইবার দিয়ে তৈরি ছোট্ট সাবেকি  একচালার দুর্গা প্রতিমা। পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশে। এর আগে শিল্পী নরওয়েতে লক্ষ্মী ও সরস্বতী এবং আমেরিকায় শিবের মূর্তি পাঠিয়েছিলেন। এই প্রথম বিদেশে দুর্গা প্রতিমা পাঠালেন তিনি।

VIEW MORE
advertisement
advertisement