Explained: প্রতি মাসে আয় হবে লাখ লাখ টাকা, জেনে নিন ডিম বিক্রি থেকে আয়ের খুঁটিনাটি!
- Published by:Dolon Chattopadhyay
Last Updated:
পোলট্রি বিশেষজ্ঞ এমএইচ জিলানি (Dr MH Jilani) ডিম ব্যবসার খরচ এবং আয়ের সম্পূর্ণ অঙ্কটি ব্যাখ্যা করছেন।
#কলকাতা: করোনা মহামারী (Covid-19) সারা বিশ্বে একটি কাল হিসাবে এসেছিল। এই মহামারীতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয় আন্তর্জাতিক অর্থনীতির। যার প্রভাব পড়ে ভারতেও। কয়েক লাখ লোকের চাকরি চলে যায়, ব্যবসা নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেকে বেকার হয়ে পড়ে। পাশাপাশি, এই মহামারী আমাদের একটি চরম শিক্ষাও দিয়েছে। আর তা হল, এটি জীবন সম্পর্কে চিন্তা করার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে যে চাকরির আশা ছেড়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মাধ্যমেই জীবনকে ভালো ভাবে উপভোগ করা যায়।
কেন্দ্রের মোদি সরকারও (Narendra Modi) দেশবাসীকে স্বাবলম্বী করার দিকেও মনোনিবেশ করছে। চাকরি খোঁজার বদলে মানুষের উচিত নিজের ব্যবসা করা এবং অন্যদেরও কর্মসংস্থান দেওয়া। সরকার সব চেয়ে বড় জোর দিয়েছে কৃষি খাতের উপর। কারণ, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কৃষি খাতে নতুন কিছু করার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা আজ এমন কিছু ব্যবসা সম্পর্কে জানব, যা ভালো এবং নিয়মিত আয়ের উৎস হতে পারে। এখানে লেয়ার বার্ড ফার্মিং ব্যবসা অর্থাৎ ডিম ব্যবসা (Poultry Farm Business) সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
advertisement
advertisement
পোলট্রি বিশেষজ্ঞ এমএইচ জিলানি (Dr MH Jilani) ডিম ব্যবসার খরচ এবং আয়ের সম্পূর্ণ অঙ্কটি ব্যাখ্যা করছেন। জিলানি পন্থনগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুরগি প্রজননে পিএইচডি করেছেন। ডিগ্রি এবং পোলট্রি সেক্টরে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।
ভারতে ডিমের চাহিদা (Egg Business in India): এমএইচ জিলানি ব্যাখ্যা করেছেন যে ভারতে সারা বছর ডিম খাওয়া হয়, কারণ ডিম পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এখানে সব সময় ডিমের চাহিদা থাকে। অতএব, হাঁস-মুরগি খামার সংক্রান্ত যে কোনও ব্যবসা রমরমিয়ে চলতে থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ডিমের বাজার পুরোদমে গরম থাকে। জুলাই এবং অগাস্ট মাসেও ডিমের চাহিদা রয়েছে, কিন্তু আজকাল কিছুটা কমেছে।
advertisement
ডিম ব্যবসা থেকে আয় (Income from Egg Business): এমএইচ জিলানি বলেছেন যে একটি ডিম তৈরি করতে প্রায় সাড়ে তিন টাকা খরচ হয় এবং এটি বাজারে সাড়ে চার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অর্থাৎ একটি ডিম থেকে সরাসরি এক টাকা লাভ আসছে। যদি ১০ হাজার মুরগির খামার করা হয়, তাহলে খামার শুরু করার ৪ মাস দৈনিক প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করা যাবে। এভাবে মাসে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে।
advertisement
বিনিয়োগ (Investment): পোলট্রি ফার্ম জমানো টাকা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তবে, এখন সরকারি সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক বিনিয়োগের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। তাতে সুদে ছাড় পাওয়া যায়। ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ব্যাঙ্ক পোলট্রি চাষের ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ দেয়।
ডিম উৎপাদন (Egg Production): জিলানির মতে, একটি মুরগির বাচ্চা থেকে ডিম পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি ১৬ সপ্তাহ সময় নেয়। কিন্তু, একটি মুরগি ২৫ সপ্তাহ পর থেকে প্রচুর পরিমাণে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি মুরগি থেকে ৩৬০টি ডিম পাওয়া যায়। ধরা যাক, মুরগির আয়ু সাধারণত ২-৩ বছর, কিন্তু এর বাণিজ্যিক জীবন প্রায় ৭২ সপ্তাহ। অর্থাৎ একটি মুরগি থেকে ৭২ সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম পাওয়া যায়।
advertisement
মুরগির বাচ্চা কেনা (Poultry Farm Chicks): ডিম দেওয়া মুরগির বাচ্চা কিনতে এখন ৪২ টাকা মতো খরচ হচ্ছে। একটি ভালো মানের ছানার ওজন ৩৫ গ্রামের বেশি হওয়া উচিত। এছাড়াও সব সময় নির্ভরযোগ্য কম্পানির কাছ থেকে ছানা কিনতে হবে। একটি মুরগি ৪ মাস হওয়া পর্যন্ত মোট ৩ কেজি খাবার খায়। ৪ মাস পর অর্থাৎ ১৬ সপ্তাহ পরে ডিম দেওয়া শুরু করে।
advertisement
পোলট্রির খাবারের দাম (Poultry Feed Price): ডিম পাড়ার সময় একটি মুরগি প্রতি দিন গড়ে ১১০ গ্রাম খাবার খায়। বাজারে ভালো মানের মুরগির খাবার পাওয়া যায়, যার দাম প্রতি কেজি ২২ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বাচ্চা থেকে ডিম দেওয়া পর্যন্ত একটি মুরগির পেছনে প্রায় দেড়শো টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাচ্চার দাম, খাবার এবং অন্যান্য খরচ।
advertisement
খাঁচায় মুরগি পালন (Poultry Cage Farming): ড. জিলানি ব্যাখ্যা করেছেন যে খাঁচা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক একর জমিতে মুরগির খামার শুরু করা যেতে পারে। একটি মুরগি বাড়াতে ০.৮ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। এক একর জমিতে তৈরির খাঁচার খরচ প্রতি বর্গফুটে সাড়ে তিনশো টাকা। মেঝে থেকে ৮-১০ ইঞ্চি উপরে ডিম পাড়ার বাক্স রাখতে হবে। ডিম পাড়ার বাক্সে ৩-৪ ইঞ্চি পুরু লিটার ব্যবহার করতে হবে, যাতে ডিম ভেঙে না যায়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর লিটার পরিবর্তন করতে হবে। মুরগির খামার জনবসতি থেকে একটু দূরে হলে ভালো হয়। কারণ, মুরগির খামার থেকে দুর্গন্ধ হয়। খামারের অবস্থান নির্বাচন করার সময় পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে খেয়াল রাখা আবশ্যক। এটাও দেখতে হবে যাতে অন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেন থাকে।
ডিম বিক্রি (Sell of Eggs): একবার মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করলে তখন রোজই কয়েক হাজার ডিম বিক্রি করতে হবে। তাই কাদের ডিম বিক্রি করা হবে তা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে। সরাসরি উপভোক্তাদের কাছেও বিক্রি করা যায়। আবার স্থানীয় হোটেল, রেস্তোরাঁতেও সাপ্লাই করা যেতে পারে। এরা একসঙ্গে অনেক ডিম নেয়, তাই একটু ছাড় দিয়ে একসঙ্গে অনেক ডিম বিক্রি করা যাতে পারে।
শ্রমিক (Laborer): মুরগির সংখ্যার উপর শ্রমিকের সংখ্যা নির্ভর করে, অল্প মুরগি দিয়ে শুরু করলে একজনের পক্ষেই তা সামলানো যায়। তবে খামার বড় হলে অতিরিক্ত শ্রমিকের দরকার হবে।
মুরগির রোগ (Poultry Disease): হাঁস -মুরগি পালনের কাজে পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যে কোনও রোগের আক্রমণে মুরগি সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। এতে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়। অতএব, খামারের ভিতরে এবং বাইরে রোগ প্রতিরোধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। এমএইচ জিলানি বলেন, মুরগিকে রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য জৈব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য পোলট্রি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বায়ো-সিকিউরিটি মানে পোলট্রি ফার্মের ভিতরে বা বাইরে রোগ ছড়াবে না, তার জন্য ফার্মে জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা করতে হবে। খামারে ঢোকা বা বের হওয়ার সময় স্নান করা উচিত। ফর্মের ভিতরে যাওয়ার জন্য আলাদা কাপড় থাকতে হবে। মুরগির খাবারের পাত্র সপ্তাহে একদিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও জলের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। মুরগিকে সব সময় বিশুদ্ধ পানীয় জল খাওয়াতে হবে। গরমের সময় অবশ্যই ঠাণ্ডা বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা উচিত। জলের সঙ্গে অনেক সময় জীবাণুনাশক মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
খামারের ভিতরে মুরগির যত্ন নেওয়া ব্যক্তির চুল এবং নখ ছোট রাখতে হবে। খামারের মেশিন এবং অন্যান্য জিনিসগুলিতে সময়ে সময়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও মুরগিকে সময়ে সময়ে টিকা দিতে হবে।
Location :
First Published :
October 08, 2021 12:14 PM IST