Covid 19: খোঁজ মিলেছে করোনার নয়া ভ্যারিয়ান্ট ডেলমিক্রনের! ওমিক্রনের তুলনায় এটি কতটা আলাদা?
- Published by:Uddalak B
Last Updated:
Covid 19: ডেলমিক্রন করোনাভাইরাসের ডেল্টা এবং ওমিক্রন সংস্করণ একত্রিত হয়ে তৈরি হয়েছে। তাই এটি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য।
#কলকাতা: ইউরোপীয় দেশগুলিতে ওমিক্রন (Omicron) প্রজাতির ক্রমবর্ধমান কেস বিশ্ব জুড়ে কোভিডের (Covid-19) তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নতুন এই প্রজাতিটির প্রকৃতি বুঝতে এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তার মধ্যেই আরও একটি নতুন প্রজাতি সামনে এসেছে। ওই প্রজাতির নাম ডেলমিক্রন (Delmicron)। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই স্ট্রেনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) এবং ইউরোপে (Europe) কোভিড সুনামির জন্য দায়ী। ইতিমধ্যেই নতুন এই নাম নিয়ে শুরু হয়েছে আশঙ্কা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গুজবও। প্রশ্ন উঠেছে, এই ভাইরাস কি করোনাভাইরাসেরই নয়া প্রজাতি? ঠিক কতখানি ভয়ঙ্কর ডেলমিক্রন? আমরা এই প্রতিবেদনে সেটাই জানব।
ডেলমিক্রন আসলে কী?
ডেলমিক্রন হল ডেল্টা (Delta) এবং ওমিক্রন প্রজাতির সংমিশ্রণ। এটি আলফা, বিটা এবং অন্য প্রজাতির মতো করোনাভাইরাসের একটি নতুন রূপ নয়। এটি দু'টি বিদ্যমান স্ট্রেন- ডেল্টা এবং ওমিক্রনের সংমিশ্রণ। মহারাষ্ট্রের কোভিড-১৯-এর (COVID-19) টাস্ক ফোর্সের সদস্য শশাঙ্ক জোশী জানিয়ছেন, এটি ভাইরাসের নতুন কোনও প্রজাতি নয়। আসলে ব্রিটেন ও আমেরিকার একাধিক জায়গায় একই সঙ্গে করোনার ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট চোখ রাঙাচ্ছে। সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়া দু'টি ভাইরাসের দাপট একসঙ্গে বোঝাতেই ডেল্টা ও ওমিক্রনকে জুড়ে ডেলমিক্রন শব্দ জন্ম নিয়েছে। কোভিডের এই দ্বিগুণ রূপ পশ্চিমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ডেল্টা প্রজাতি চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করেছিল এবং প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী ছিল। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ নিয়েছে এই প্রজাতি। ডেলমিক্রনে গুরুতর সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও, সংক্রমণ-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী জটিলতাও থাকতে পারে। সেই জটিলতাগুলি হল-মাথা ঘোরা, পেশিতে ব্যথা এবং চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
advertisement
advertisement
এখনও পর্যন্ত যা তথ্য সামনে এসেছে, তাতে বলা হয়েছে ওমিক্রনে হালকা সংক্রমণ হচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কম। যদিও এটি মারাত্মক সংক্রমণযোগ্য। যাইহোক, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ওমিক্রন প্রজাতি টিকা নেওয়া ফলে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, বহু লোক টিকা নেওয়ার পরও এই প্রজাতিতে সংক্রমিত হচ্ছেন। ওমিক্রন সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে গলা ব্যথা, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে গন্ধ এবং স্বাদ চলে যাওয়ার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না।
advertisement
পরিসংখ্যান বলছে, গত মাসে মার্কিন মুলুকে ৯৯.৫ শতাংশই ডেল্টা (Delta) প্রজাতিতে আক্রান্ত। পাশাপাশি আবার আমেরিকায় নতুন করে সংক্রমিতদের মধ্যে ৭৩ শতাংশের শরীরেই মিলেছে ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) থেকে ছড়ানো এই ওমিক্রন প্রজাতি ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে ৮৯টি দেশে। এর মধ্যে আবার চলতি সপ্তাহেই আমেরিকার টেক্সাসে প্রথমবার ওমিক্রন আক্রান্তের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে ওমিক্রন আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সিডনির বাসিন্দা ৮০ বছরের এক রোগীর। তাঁর করোনার দু'টি টিকা নেওয়া ছিল বলে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। তারও আগে বিশ্বে প্রথম ইংল্যান্ডেই প্রাণ হারান ওমিক্রন সংক্রমিত ব্যক্তি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের শরীরেই পরপর থাবা বসাচ্ছে ডেল্টা এবং ওমিক্রন। তাই যে সমস্ত এলাকায় টিকাকরণের (Vaccinations) হার তুলনামূলক কম, সেখানেই এই প্রজাতি দু'টির সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
advertisement
ডেলমিক্রনের উপসর্গগুলি কী কী?
ডেলমিক্রন করোনাভাইরাসের ডেল্টা এবং ওমিক্রন সংস্করণ একত্রিত হয়ে তৈরি হয়েছে। তাই এটি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য। গুরুতর জটিলতার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। এর প্রকৃতি সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। যতদূর জানা গিয়েছে, তাতে ডেল্টা এবং ওমিক্রনের মতো ডেলমিক্রনের সংক্রমণে কমবেশি একই উপসর্গ দেখা যায়। সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে-জ্বর, একটানা কাশি, গন্ধ বা স্বাদের অনুভূতিতে ক্ষতি বা পরিবর্তন, মাথাব্যথা, সর্দি, গলা ব্যথা ইত্যাদি।
advertisement
ভারতে ডেলমিক্রন:
প্রশ্ন হল ডেলমিক্রন কি ভারতেও জাঁকিয়ে বসতে পারে? বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমানে এ দেশে ডেল্টার দাপট বেশি। সেই স্থান ধীরে ধীরে দখলের চেষ্টা করছে নয়া 'ওমিক্রন'। আমাদের দেশে দেশে ওমিক্রন প্রজাতিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত দেশে এই প্রজাতিতে কমপক্ষে ৬০০ জন আক্রান্ত। ক্রিসমাস ও নববর্ষের সমাবেশের কারণে আগামী দিনে এই সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে এখনও ডেলমিক্রন কেস রিপোর্ট করা হয়নি। তবে দু'টি ভাইরাস একইসঙ্গে দাপিয়ে ব্যাটিং করবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে উৎসবের মরসুমে প্রত্যেককে সতর্ক থাকারই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ভারতে ওমিক্রন প্রজাতি কীভাবে আচরণ করবে, তা এখনও দেখা যায়নি। কেউ কেউ এমনও বিশ্বাস করেন যে ওমিক্রন ডেল্টার মতো ভারতকে প্রভাবিত করতে পারবে না। ঠিক কী হবে? তা সময়ই বলতে পারবে।
advertisement
আরও পড়ুন: Over Weight, Hairfall,রয়েছে লুকনো উপসর্গও, ভয়ঙ্কর এই রোগ নয় তো
মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি:
টিকা নেওয়া হোক বা না হোক, বর্তমানে সবাই ওমিক্রন সংক্রমণ প্রবণ। নতুন প্রজাতিটি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য এবং টিকা প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে পারে। এটা বিবেচনা করে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, মাস্ক (Mask) পরতে হবে। অন্য লোকেদের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (Centers for Disease Control and Prevention) মতে, "কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেশি এমন এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। ভিড়ের মধ্যে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সম্পূর্ণ টিকা নেয়নি, এমন লোকজনের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সামাজিক সমাবেশে 'না' বলুন: শীতকাল মানেই মিঠে রোদ গায়ে মেখে বেড়াবার সময়, প্রিয়জনদের নিয়ে ছুটি কাটানোর সময়। তবে, এসব এখনই না করা ভাল। এটি নজর করা গুরুত্বপূর্ণ যে ওমিক্রন প্রজাতি লুকিয়ে আছে এবং দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সামাজিক জমায়েত এড়াতে ভুলবেন না, বাড়িতে পার্টি দেবেন না। ভিড় এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
advertisement
প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বুস্টার শট-র ভূমিকা:
বিশ্বজুড়ে কোভিড সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় টিকার বুস্টার ডোজ (Vaccine Boosters) দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় শুরু হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরুও করে দিয়েছে। যার ফলে বুস্টার ডোজের চাহিদা বেড়েছে। ফাইজার-বায়োএনটেক (Pfizer-BioNTech) এবং মডার্না (Moderna)-র মতো টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি সম্প্রতি ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে তাদের টিকা ও বুস্টার ডোজের কার্যকারিতা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করেছে। গত বুধবার, মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের (Joe Biden) প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা অ্যান্থনি ফাউচি (Anthony Fauci) বলেছেন যে নতুন তথ্যে জানা গিয়েছে যে বুস্টার শটগুলি ওমিক্রন প্রজাতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং তাই টিকার আপডেটের প্রয়োজন নেই। ভারতে এখনও বুস্টার টিকা ব্যবহারে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে, এটি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা শুরু হয়েছে।
Location :
First Published :
December 28, 2021 11:25 AM IST