Drone: ড্রোন আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত সরকার, জেনে নিন বিশদে!
- Published by:Uddalak B
Last Updated:
Drone: কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্যই ড্রোন আমদানি করা যাবে।
#নয়াদিল্লি: প্রযুক্তির মজাই এই- তা আমাদের ক্রমশ অভ্যস্ত করে তোলে। যে প্রযুক্তির কথা কিছু দিন আগেও ছিল কল্পনার অতীত, তা যখন হাতের নাগালে এসে যায়, তখন ক্রমশ তার প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে আমাদের। এরকমই একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হল ড্রোন (Drone)। প্রথম যখন তা দেশের বাজারে আসে কয়েক বছর আগে, তখনও যন্ত্রটি নিয়ে খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা ছিল না অনেকেরই। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ড্রোনের ব্যবহার হয়ে উঠেছে সুদূরপ্রসারী, বর্তমানে প্রশাসনিক ক্ষেত্র থেকে বিনোদন- সর্বত্রই এর অগাধ ব্যবহার।
আর এই ব্যবহারের প্রশ্নেই আসে চাহিদা এবং জোগানের পারস্পরিক সম্পর্কের দিকটি। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের এই দেশ যান্ত্রিক শিল্প এবং প্রযুক্তিতে উন্নতি করতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনও অনেক পথ পাড়ি দেওয়া বাকি, সেই দিক থেকেই উঠে আসে যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশের বিদেশ থেকে আমদানির বিষয়টি। কিন্তু সরকারের আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প সেই ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। কিন্তু শুধুমাত্র কি এই কারণেই সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ড্রোনের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হল?
advertisement
কেন্দ্রের ঘোষণা
advertisement
কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্যই ড্রোন আমদানি করা যাবে। ড্রোন আমদানিতে কঠোর বিধি-নিষেধ জারি করল কেন্দ্রীয় সরকার। সাধারণের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ জারি হয়েছে। মূলত ভারতে ড্রোন তৈরির উপর জোর দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য ড্রোন আমদানিতে ছাড় দেওয়া হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রেও অনুমতি নিয়েই তবে ড্রোন আমদানি করা যাবে। অন্য সব ক্ষেত্রে ড্রোন আমদানির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে ড্রোন তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। এর মূল কারণ, এদেশে আরও নতুন নতুন আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন উৎপাদন করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে দেশের সরকার। দেশের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী দিনে ভারত থেকে ড্রোন রফতানি করার। ইদানিংকালে কোনও রকম কারণ ছাড়াই বহু মানুষ ড্রোন ব্যবহার করছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আশঙ্কা এতে দেশের এবং রাজ্যগুলি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে জোর দিয়েছে ভারত সরকার।
advertisement
বুধবার এ বিষয়ে অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, "ড্রোন তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানির উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।" যদিও ড্রোন আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল। এবিষয়ে ওই মন্ত্রক থেকে একটি নির্দেশিকা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, "ড্রোন আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ছাড় দেওয়া হয়েছে R&D, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রগুলিতে।"
advertisement
কী ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে?
প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং গবেষণা ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আমদানি করা ড্রোনগুলি বাদ দিয়ে কমপ্লিট বিল্ট আপ (CBU), কমপ্লিট নকড ডাউন (CKD), সেমি নকড ডাউন (SKD) পদ্ধতিতে যে কোনও ড্রোন আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এবার থেকে কেউ ড্রোন আমদানি করতে চাইলে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে ড্রোন আমদানি করতে পারবেন।
advertisement
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ড্রোনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করা। বিআইএস (BIS) রিসার্চ অনুসারে, ভারতে রয়েছে FY22 মানের উন্নত ড্রোন প্রায় ২৮.৫ বিলিয়ন মূল্যের। যা বিশ্বমানের ড্রোন বাজারের প্রায় ৪.২৫ শতাংশ।
কে এখনও ড্রোন আমদানি করতে পারে?
সরকারী সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার স্বীকৃত গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে ড্রোন আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হবে। তারা বৈদেশিক বাণিজ্য মহানির্দেশকের দফতর থেকে আমদানির অনুমোদন পাওয়ার পরেই ড্রোন আমদানি করতে পারবে। যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শের পরে সরবরাহ করা হবে। গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ড্রোন আমদানি করতে চাইলেও নির্মাতারা করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্র অবশ্য স্পষ্ট করেছে যে ড্রোনের উপাদান আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। সরকার বিজ্ঞপ্তিতে বার বার উল্লেখ করেছেনিষেধাজ্ঞাটি ড্রোনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারি প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কোনও রকম ভুল বোঝাবুঝি যাতে না হয় তার জন্য সবরকম ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
advertisement
গত বাজেটেই ড্রোন নিয়ে বিশেষ ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman)। তিনি ড্রোন শক্তি প্রকল্প (Drone Shakti Scheme) ঘোষণা করেন। আর তার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ড্রোন আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ওই নির্দেশিকা কার্যকর করা হবে।
advertisement
পিএলআই স্কিম
এর আগে ড্রোন এবং ড্রোনের যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করার জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ একটি পিএলআই (PLI) স্কিম অনুমোদন করেছিল ভারত সরকার। এবং ড্রোন সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিরও পরিবর্তন করা হয়। ড্রোন সার্টিফিকেশন স্কিম ছাড়াও ডিজিট্যাল স্কাই প্ল্যাটফর্মেরও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতে ড্রোন উৎপাদন এবং সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নিয়মগুলি সহজ করার জন্য ১২০ কোটি টাকার প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) প্রকল্পের একটি পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয়েছে৷
সরকারের অনুমান ড্রোনগুলির জন্য পিএলআই প্রকল্পটি ভারতের ড্রোন উৎপাদন খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবে। সেইসঙ্গে দশ হাজার নতুন সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এই প্রকল্পটির ফলে আনুমানিক ৬০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯০০ কোটি টাকা মুনাফা করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
ডিজিটাল স্কাই প্ল্যাটফর্ম
গত বছরের অগাস্ট মাস থেকেই ড্রোন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সম্মতি এবং খরচ উভয়ই কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সিভিল এভিয়েশন মিনিস্ট্রি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশনের (DGCA) ডিজিটাল স্কাই প্ল্যাটফর্মে ভারতের একটি আকাশসীমার মানচিত্রও চালু করেছে। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অনুমতি ছাড়া যারা ড্রোন আকাশে ওড়াবে তাঁদের সনাক্ত করা হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে দেশের সবকটি রাজ্যের জন্য। অনুমতি ছাড়া ড্রোন ব্যবহার করলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে।
ডিজিটাল স্কাই প্ল্যাটফর্মে ড্রোনের রেজিস্ট্রেশন করা যাবে অনলাইনে। অনুমোদনপ্রাপ্ত ড্রোন স্কুলে পরীক্ষা করা হবে ড্রোনগুলির। ড্রোনের ট্রেনিং নিয়ে অনলাইনে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যাবে।
ড্রোন সংক্রান্ত এই নয়া নির্দেশাবলী নিয়ে ট্যুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘোষণা ভারতের ড্রোন সেক্টরের জন্য একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এই নয়া আইন তৈরি হয়েছে। অনুমোদন, নথির প্রয়োজনীয়তা সহ একাধিক বিষয়ে অনেক বাধা কমিয়ে দেওয়া হল। এর ফলে আবিষ্কার ও বাণিজ্যে অনেক নতুন সম্ভাবনা খুলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
view commentsLocation :
First Published :
February 11, 2022 4:11 PM IST