EXPLAINED: ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কেন অনেকের শরীরে কোভিড আক্রমণ করছে?
- Published by:Raima Chakraborty
Last Updated:
করোনা ভ্যাকসিন নিয়ও অনেকেই ফের করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। (Coronavirus)
#কলকাতা: এই দেশে প্রায় দেড় বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও নির্মূল করা সম্ভব হয়নি করোনাভাইরাস (Coronavirus)। এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে নিয়মিত ভাবে। তবে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে ভ্যাকসিন। জোর কদমে দেশ জুড়ে চলছে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে টিকাকরণ করানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন গণটিকাকরণ প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে। কারণ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একমাত্র হাতিয়ার করোনা ভ্যাকসিন।
করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পর অনেকেই তা নিতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন সেই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়েও। এখন অবশ্য সময় পরিবর্তন হয়েছে। ভ্যাকসিন সেন্টার লম্বা লাইন চোখে পড়ছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া? যে বিষয়গুলির দিকে নজর দেওয়া দরকার
কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন নিয়ও অনেকেই ফের করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর পরে একাধিক প্রশ্ন জেগেছে সাধারণ মানুষের মনে। সমস্ত কিছুর উত্তর রইল এই প্রতিবেদনে-
advertisement
advertisement
কেন ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকেই কোভিডে ফের আক্রান্ত হচ্ছেন?
বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে এসেছে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এটাও ঠিক করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যে বাড়ে তাও প্রমাণিত। কিন্তু তার পরও কেন কোভিডে আক্রান্ত হতে হচ্ছে অনেককে? মূলত ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে ওঠে না, তার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। সেই সময়ের মধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দ্বিতীয়ত, কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর সেই ডোজের কার্যক্ষমতা কমে আসে এবং তখন তার জন্য প্রয়োজন হয় বুস্টার ডোজ বা সেকেন্ড ডোজের। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে শুধুমাত্র ওই দু'টি কারণ রয়েছে এমনটা নয়। এর পিছনে আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যে খুব একটা বেশি এমনটাও নয়।
advertisement
সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ওই রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ০.২ শতাংশ। যার অর্থ প্রতি ৫০০ জন করোনা ভ্যাকসিন নিলে তার মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১ জন। যা অত্যন্ত নগণ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ধরনের সংক্রমণের ঘটনা কেন ঘটছে?
advertisement
সংখ্যায় অত্যন্ত কম হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাঁদের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ উপসর্গ দেখা গিয়েছে। এমনকী তাঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করে না। হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন যেমন কমে, তেমনই মৃত্যুর হারও কমে আসে দেশে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে কোনও ব্যক্তি করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।
advertisement
নিজের রূপ পরিবর্তন করে বার বার ফিরে আসছে করোনা। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু বার বার রূপ পরিবর্তন করছে বা অন্য ভাবে বলতে গেলে ভ্যারিয়ান্ট পরিবর্তন করছে, তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোন পর্যায়ে আছে কোভিড ১৯? আর কতদিন থাকতে পারে? জানুন বিশদে
বিগত আট মাস ধরে গোটা দেশ ব্যাপী টিকাকরণ চলছে। যাঁদের মধ্যে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি ছিল তাঁরা সব থেকে আগে পাচ্ছেন। ভ্যাকসিন দেওয়ার শুরুতে বয়স্ক ব্যক্তিদের সব থেকে আগে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। এবং বর্তমানে ১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলকেই ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যাঁরা সব থেকে প্রথমে ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বর্তমানে ফের করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেছেন, যেহেতু বর্তমানে করোনা অনেক রূপ পরিবর্তন করে ফিরে এসেছে তাই প্রথমের দিকে নেওয়া ভ্যাকসিন বর্তমান ভ্যারিয়ান্টের বিরুদ্ধে কাজ না-ও করতে পারে। যার ফলে বর্তমানে কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি এটাও দেখা গিয়েছে, একবার ভ্যাকসিন নিলেই যে কোভিড থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি মিলবে এমনটা ভাবার কারণ নেই। ভ্যাকসিনের মেয়াদকাল গড়ে ৬ থেকে ৮ মাস। অর্থাৎ একবার ভ্যাকসিন নিলে ৬ থেকে ৮ মাস করোনার ভয়ঙ্কর আক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব। তবে গবেষণায় এটাও পাওয়া গিয়েছে, আগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কেউ ভ্যাকসিন নিলে তাঁর শরীরে হাইব্রিড ইমিউনিটি তৈরি হবে। এবং সেই ব্যক্তি দীর্ঘকালীন মেয়াদে কোভিডের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারেন। যেহেতু সর্বপ্রথমে যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি তাই অনেকেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা ফের আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ তাঁদের সব থেকে প্রথমে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল।
advertisement
কোন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন-
করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করে কোন ধরনের ভ্যাকসিন নেওয়া হচ্ছে তার উপর। কারণ, প্রতিটি ভ্যাকসিনের কার্যক্ষমতা সমান নয়। কোনও কোনও ভ্যাকসিন বেশি কার্যকরী এবং কোনও ভ্যাকসিন তুলনামূলক কম কার্যকরী। যেমন উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মডার্না (Moderna) বা ফাইজারের (Pfizer) ভ্যাকসিন ৯৫ শতাংশ কার্যকরী। সেখানে জনসন অ্যান্ড জনসনের (Johnson & Johnson) ভ্যাকসিন ৬০ শতাংশ কার্যকরী। এবং কোভিশিল্ড (Covishield) করোনা ভাইরাসের আক্রমণ রুখতে ৭০ শতাংশ কার্যকরী।
advertisement
ভ্যারিয়ান্টের পরিবর্তন-
ইতিমধ্যে বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট (Delta Variant) এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি ক্ষমতাশালী তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও ওই ভ্যারিয়ান্টের মাধ্যমে অনেকে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তবে সেক্ষেত্রে খুব একটা মারাত্মক প্রভাব তাঁদের শরীরে দেখা যায়নি।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা-
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কার শরীরে কেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে তার উপরেও নির্ভর করছে ফের করোনা আক্রমণের আশঙ্কা। পাশাপাশি বয়সের উপরেও তা নির্ভর করে। অনেকের অতীতে কোনও জটিল রোগ থাকলে তার ক্ষেত্রে করোনা আক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
করোনা প্রতিহত করতে ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা যেমন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন তেমনই তাঁদের বক্তব্য সঠিক আহার গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এবং একই সঙ্গে ধূমপানও সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ ধূমপানের প্রবণতা থাকলে করোনা থেকে সেরে উঠতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। পাশাপাশি নিজে সচেতন থাকার ও আশেপাশের মানুষকে সচেতন রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Location :
First Published :
September 24, 2021 6:46 PM IST