#কলকাতা: রাজকুমারীর বিয়ে হল সাধারণ এক যুবকের সঙ্গে। না, কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। একদম বাস্তব। যা রুপোলি পর্দার কোনও কাহিনীকেও হার মানায়। ঘটনাটি জাপানের। জাপানের রাজকুমারী ম্যাকো (Mako) বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন তাঁর কলেজের বন্ধু কেই কোমুরের (Kei Komuro) সঙ্গে। গল্প হলেও সত্যি- খুব সাধারণ পরিবারের প্রেমিককে শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে বিয়ে করলেন রাজকুমারী। আর এখান থেকেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে সারা বিশ্বে। কেন না, সাধারণ পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করার জন্য রাজকুমারীকে ছাড়তে হয়েছে রাজপরিবার।
জানা গিয়েছে যে প্রথমে ম্যাকোর বাবার কাছ থেকে সম্মতি পাওয়া যায়নি। কিন্তু বর্তমানে সম্মতি পাওয়ায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন তাঁরা। এমনই জানা গিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে।
রাজপরিবারের সমস্ত সম্পত্তির মোহ ত্যাগ করে শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে বন্ধুকে বিয়ে করলেন ম্যাকো। প্রায় চার বছর আগে তাঁদের এনগেজমেন্ট হয়। এবং চলতি মাসের ২৬ তারিখ সেটি উদযাপন করেন তাঁরা। একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে নিজের বিয়ের কথা ঘোষণা করেন রাজকুমারী ম্যাকো। ইতিমধ্যে রাজপরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে সেই পরিবার ত্যাগ করেছেন। কারণ জাপানের নিয়ম অনুযায়ী, রাজবংশের কেউ সাধারণ কোনও যুবক বা যুবকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। যদিও কেউ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে রাজপরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করতে হয়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ! ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ কতদিন ভোগাতে পারে, জেনে নিন
জাপানের রাজপরিবারের জন্য কে এমন নিয়ম তৈরি করেছেন?
জাপানের রাজপরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, তারা হল সব থেকে পুরনো রাজতন্ত্র। বর্তমানে ওই রাজত্ব রয়েছে রাজা নারুহিতোর (Naruhito) উপর। তিনি ২০১৯ সালে রাজকার্য চালানোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জাপানের ১২৬তম রাজা তিনি। Nippon.com-এর তরফে জানা গিয়েছে যে, জাপানে বহু রাজতন্ত্র চলার কোনও প্রমাণ সেই ভাবে পাওয়া যায়নি। ৬৬০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে প্রথম রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রাজা জিন্মু (Jinmu)। এছাড়াও জাপানের রাজতন্ত্রে একটি নিয়ম তৈরি করা হয়েছে রাজপরিবারের তরফে। ওই নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র পুরুষরাই বংশানুক্রমে রাজার সিংহাসনে বসতে পারবেন। ১৯৪৭ সালের পর এই নিয়ম চালু করা হয়।
এছাড়াও আরও একটি নিয়ম চালু করা হয় রাজপরিবারের তরফে। তাতে বলা হয়, রাজপরিবারের কোনও মহিলা যদি কোনও সাধারণ পরিবারের কাউকে বিবাহ করে তাহলে সেক্ষেত্রে ওই মহিলাকে রাজপরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। এবং সেই নিয়ম অনুযায়ী ম্যাকোও রাজপরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করেন। সংবাদমাধ্যমের একটি তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে যে বর্তমানে জাপানের রাজপরিবারের সদস্যসংখ্যা হল ১৭। যার মধ্যে ১২ জন মহিলা এবং ৫ জন পুরুষ। ওই পাঁচজনের উপর রাজতন্ত্র চালিয়ে যাওয়ার সমস্ত দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমানে ওই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, ৬৭ বছর বয়সী নারুহিতো যিনি ম্যাকো-র কাকা, প্রিন্স হিতাচি (Prince Hitachi), তার ভাই, ম্যাকো-র ৫৫ বছর বয়সী বাবা, তাঁর নাম প্রিন্স আকিশিনো (Crown Prince Akishino), তাঁর ভাইপো এবং ম্যাকোর ভাই হিসাহিতো (Hisahito)।
আরও পড়ুন: ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে অ্যালকোহল! কেন জেনে নিন বিশদে!
পুরো রাজতন্ত্র পরিবর্তন করার কি কোনও চেষ্টা করা হয়েছে?
কয়েকদিন আগে কিয়োদো নিউজ (Kyodo News) নামে জাপানের একটি সংবাদমাধ্যম একটি ভোট করে। সেখানে জাপানের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা রাজতন্ত্রে মহিলাদের দেখতে চান। কারণ মহিলারা যদি রাজতন্ত্র চালানোর কাজে নিযুক্ত হন তাহলে তা রাজপরিবারের মহিলা ও শিশুদের ক্ষেত্রে বড়সড় সাফল্য হিসেবে ধরা হবে। সমীক্ষার বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ, একবার রাজপরিবারের অন্দরে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল এবং সেখানে রাজার আসনে মহিলাদের বসানো নিয়ে প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে পরিবারে এক পুত্রসন্তানের জন্মের পর সেই আলোচনা আর এগোয়নি। প্রায় চার দশক পর কোনও ছেলের জন্ম হয়েছিল জাপানের রাজপরিবারে। এমনকী, রাজপরিবারের মহিলাদের সাধারণ পরিবারের পুরুষদের সঙ্গে বিবাহ করার বিষয়ে সেই ভাবে আর কোনও আলোচনা হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি প্যানেল গঠিত হয়েছিল । সেই আলোচনায় রাজতন্ত্রে মহিলাদের নিয়ে আসার জন্য একাধিক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ( Fumio Kishida) এবিষয়ে চূড়ান্ত বিরোধিতা করেন। এবং রাজতন্ত্রে মহিলাদের নিয়ে আসা বিষয়ে তিনি রাজি ছিলেন না।
রাজকুমারী ম্যাকোর এই সাধারণ পরিবারের সন্তানকে বিয়ে করার প্রসঙ্গে জাপানের সাধারণ মানুষের কী বক্তব্য?
জানা গিয়েছে ২০১২ সালে ম্যাকো এবং কোমুরোর মধ্যে পরিচয় হয়। ২০১২ সালে সর্বপ্রথম জাপানের একটি কলেজে তাঁদের পরিচয় হয়। মায়ের কাছেই বড় হয়েছেন কোমুরো। অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল না। জানা গিয়েছে, কোমুরোর স্কুল ও কলেজে পড়াশোনার খরচের অধিকাংশ বহন করেছিলেন কোমুরোর মায়ের প্রাক্তন প্রেমিক। টোকিও পর্যটনশিল্পে বিভিন্ন কাজ করতেন কোমুরো। এবং তার মাধ্যমেই অর্থ উপার্জন করতেন তিনি।
২০১৭ সালে ম্যাকো এবং কোমুরোর মধ্যে এনগেজমেন্ট হয়। এবং তার পরের বছর, ২০১৮ সালে তাঁরা বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু, ম্যাকোর বাবা প্রিন্স আকিশিনো কোনও সম্মতি দেননি। এর পর ২০২০ সালে তাঁর কাছ থেকে সম্মতি আদায় করা সম্ভব হয়েছে এবং বিবাহ ন্ধনে আবদ্ধ হলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়? কোনও মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা থাকে? জানুন বিশদে
বর্তমান পরিস্থিতি কী?
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গিয়েছে, কুমোরো এবং ম্যাকো বর্তমানে আমেরিকা চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। কারণ সেখানকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সেখানে ইতিমধ্যে একটি চাকরি জোগাড় করেছেন তিনি। বর্তমানে সেখানে আইন সংক্রান্ত বিষয় ওই সংস্থায় কাজ করছেন তিনি। ম্যাকো আর্ট মিউজিয়ামের উপর পড়াশোনা করেছেন। তবে বর্তমানে তাঁর অন্য কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কি না সেই বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। তবে তিনি এটা জানিয়েছেন যে, তাঁকে রাজপরিবার ছাড়তে হবে। কারণ সেটাই ওই পরিবারের নিয়ম। পরিবার ছাড়ার পর টোকিওতে কোনও একটি বাড়িতে থাকছেন তাঁরা আপাতত ভাবে। পাশাপাশি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাঁর নামের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে তিনি নাম পরিবর্তন করবেন। এবং নতুন নাম দিয়ে তিনি পাসপোর্টের আবেদন করবেন।
এই বিষয়ে ABC নিউজে জাপানের হিউম্যান রাইট কমিশনের সেক্রেটারি কাজুকো ইতো (Kazuko Ito) জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে যদি রাজপরিবারের সদস্যরা ম্যাকোকে বের করে দেয় তাহলে তা ম্যাকোর পক্ষে ভালো। কারণ এই প্রথম রাজপরিবারের কোনও মহিলা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে পারবেন। কোনও নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে না তাঁকে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Japan, Royal Family, Royal Wedding