EXPLAINED: ওমিক্রন আতঙ্কের মাঝেই সাফল্যের নতুন দিশা, ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টকে প্রতিহত করতে গাছ থেকে তৈরি হল অ্যান্টিভাইরাল!
- Published by:Piya Banerjee
Last Updated:
EXPLAINED: সব রকম ভ্যারিয়ান্টকে একেবারে প্রতিহত করতে পারে, এমন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
#নয়াদিল্লি: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনও পুরোপুরি ভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার এদিকে, ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরেও অনেকেই কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এটাই এখন ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। আসলে ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়ান্ট এসে উপস্থিত হচ্ছে। তার জন্য রোগের উপসর্গ এবং ধরনও বদলে যাচ্ছে। কোনও কোনও ভ্যারিয়ান্টের দাপটে এই রোগ হয়ে উঠছে আরও ভয়াবহ। তাই সব রকম ভ্যারিয়ান্টকে একেবারে প্রতিহত করতে পারে, এমন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টায় নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
আমরা দেখেছি, চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ এসেছিল কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। সেই সময় গোটা দেশেই একটা অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মহামারীর একটা ভয়াল রূপ দেখেছিল গোটা দেশ। কোথাও হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার, কোথাও বা অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। রোজকার খবরে সেই সময় এমন চিত্রই ফুটে উঠতে দেখা গিয়েছিল। আর করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিছনে দায়ী ছিল সার্স-সিওভি-২ (SARS-COV-2) ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট।
advertisement
এই ভ্যারিয়ান্ট কতটা ক্ষতি করতে পারে, তা আমরা মোটামুটি সকলেই জেনে গিয়েছি। কিন্তু গভীর চিন্তার বিষয় হল যে, এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট বহু থেরাপির কার্যকারিতাও নষ্ট করে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বহু ক্ষেত্রেই কোভিড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও কমিয়ে এনেছে বিপজ্জনক এই ভ্যারিয়ান্ট (Varient)। অর্থাৎ করোনা ভ্যাকসিনও এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টকে (Delta Varient) প্রতিরোধ করতে পারছে না। কারণ ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষজন। সেইটাই এখন উদ্বেগের কারণ। তাই এখন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাতে নষ্ট না-হয়, তার জন্য বুস্টার শট আনার কথা ভাবনা-চিন্তা চলছে।
advertisement
advertisement
আসলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর থেকে সক্রিয় ভাবে কোভিড নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আর যেহেতু এর পিছনে হাত রয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের, তাই ভাইরাসের এই নতুন রূপের প্রকোপের সঙ্গে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই গাছের অংশ থেকে উৎপন্ন একটি অ্যান্টিভাইরাল নিয়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই অ্যান্টিভাইরাল যদি পরীক্ষায় সফল ভাবে উতরে যায়, তা হলে ডেল্টা-সহ অন্যান্য ভ্যারিয়ান্টের সঙ্গে এটা লড়াই করতে সক্ষম হবে।
advertisement
ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট কেন এত উদ্বেগজনক?
ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার পিছনে একমাত্র কারণ হিসেবে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টকেই দায়ী করা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে দিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। প্রচণ্ড সংক্রামক এই ভ্যারিয়ান্টের দাপটে কাবু গোটা বিশ্বই। তাই ব্রিটেনের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন বিজ্ঞানী এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের উপর নজর রাখছেন। তাতে দেখা গিয়েছে যে, অন্যান্য স্ট্রেনের তুলনায় এই ভ্যারিয়ান্টেরই ভাইরাল কমপ্লিকেশন রয়েছে। প্রচণ্ড রকম সংক্রামক এই ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টই বারবার সংক্রমণের জন্য এবং ভয়াবহ সমস্ত কেসের জন্য দায়ী।আবার ডেল্টার সঙ্গে সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের অন্য দুই ভ্যারিয়ান্টের কো-ইনফেকশনের (Co-infection) কারণে বাকি দুই ভ্যারিয়ান্টেরও জটিলতা বেড়ে গিয়েছে।
advertisement
গবেষণা থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গিয়েছে?
ব্রিটেনের ওই গবেষকরা একটা গবেষণা চালিয়েছেন। তাতে দেখা গিয়েছে যে, উদ্ভিজ্জ বা গাছ থেকে তৈরি অ্যান্টিভাইরাল মারাত্মক কার্যকরী। ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের কার্যকারিতা এবং রোগের ভয়াবহতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে সক্ষম। সম্প্রতি এক ধরনের নভেল সাধারণ অ্যান্টিভাইরাল (Antiviral) ওষুধ আবিষ্কার করা হয়েছে। এটার নাম থ্যাপসাইগার্জিন বা টিজি (Thapsigargin)। এটি মূল সার্স-সিওভি-২ ভাইরাস এবং ডেল্টা-সহ এর নতুন ভ্যারিয়ান্টগুলির কার্যকারিতাও অনেকটাই কমিয়ে আনতে সফল।
advertisement
ওই বিজ্ঞানী দলটির আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গাছ থেকে তৈরি ওই অ্যান্টিভাইরাল (Plant-derived Antiviral)-এর খুব অল্প ডোজই সার্স-সিওভি-২-সহ তিন প্রধান হিউম্যান রেসপিরেটরি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
সাম্প্রতিক গবেষণা প্রসঙ্গে ভিরুলেন্স জার্নালে আলোচনা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে যে, সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের আলফা, বিটা এবং ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শুধু তা-ই নয়, একই সময়ে কোষ দুটো ভ্যারিয়ান্টের আক্রমণের কবলে পড়তে পারে। এই ধরনের নতুন গঠিত হওয়া ভ্যারিয়ান্ট প্রতিরোধ করতে টিজি কতটা কার্যকর, সেই বিষয়েও জানতে চেয়েছেন বিজ্ঞানীদের ওই দলটি।
advertisement
ওই তিন ভ্যারিয়ান্টের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টই সব থেকে বেশি হারে সংখ্যায় বেড়েছে এবং তা সরাসরি আশেপাশের কোষগুলিতেও অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় আলফা ভ্যারিয়ান্টের তুলনায় এই ভ্যারিয়ান্ট প্রায় চার গুণ হারে এবং বিটা ভ্যারিয়ান্টের তুলনায় নয় গুণ হারে বেড়ে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সহ-সংক্রমিত ভ্যারিয়ান্টগুলিকেও বাড়িয়ে দিতে পারে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। আলফা ও ডেল্টা অথবা আলফা ও বিটা একসঙ্গে মিলে যে ক্ষতি করতে পারে, তা সিঙ্গল ভ্যারিয়ান্ট সংক্রমণের তুলনায় অনেক গুণ বেশি।
কোভিডের ঝুঁকির সঙ্গে লড়াই করতে অ্যান্টিভাইরাল কী ভাবে সহায়তা করে?
অ্যান্টিভাইরাল পিল বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের শরীরকে ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা দেয়। গবেষকরা দাবি করছেন, এই অ্যান্টিভাইরাল পিলগুলি দারুণ ভাবে কাজ করবে এবং যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। আর প্রতিরোধ করার জন্যও এটা দারুণ ভাবে কাজ করবে। এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে নতুন ভ্যারিয়ান্টের দাপটে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে আসছে বলে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেরই বিশ্বাস, এই ধরনের অ্যান্টিভাইরাল অত্যন্ত সহজলভ্য এবং কোভিড ১৯-এর ঝুঁকি অনেকটাই নামিয়ে আনতে পারবে।
গাছ থেকে তৈরি টিজি নামের এই অ্যান্টিভাইরালের মাধ্যমে চিকিৎসায় সার্স-সিওভি-২ ভাইরাসের সমস্ত রকম ভ্যারিয়ান্ট প্রতিহত হতে পারে। এই টিজি-র একটা সিঙ্গল প্রি-ইনফেকশন প্রাইমিং ডোজ কার্যকরী ভাবে সমস্ত রকম সিঙ্গল ভ্যারিয়ান্ট সংক্রমণ প্রতিরোধ তো করতে পারেই, সেই সঙ্গে প্রতিটি কো-ইনফেকশনকেও ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত রুখে দিতে পারে।
এই গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং সায়েন্সের প্রফেসর কিন চাও চ্যাং। তাঁর বক্তব্য, “ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের আধিপত্য সম্পর্কে আমাদের এই নতুন গবেষণায় নানান রকম তথ্য উঠে এসেছে। যা আমাদের আরও ভালো অন্তদৃষ্টির বিষয়ে অনেকটা সাহায্য করেছে। আমরা আগেই বলেছি যে, এই ভ্যারিয়ান্ট সব থেকে বেশি সংক্রামক এবং অন্যান্যা ভ্যারিয়ান্টের সঙ্গে মিলে কো-ইনফেকশন সৃষ্টি করে। কিন্তু টিজি এই সমস্ত কিছুকে প্রতিরোধ করতে দারুণ ভাবে কার্যকর।”
Location :
First Published :
December 16, 2021 2:50 PM IST