#কলকাতা: কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা থেকে সবে সামলে উঠেছে দেশবাসী। আর সেই আতঙ্কের মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। বাড়ছে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যেই জিমে অনেকে শরীরচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কের মধ্যে জিমে গিয়ে শরীরচর্চায় বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি। তাহলে জিমে যাওয়া কি উচিত নয়? তা নিয়েই দ্বিধা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বাইরে কি যাওয়া উচিত?
কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল জিম সহ বিভিন্ন ফিটনেস সেন্টার। দীর্ঘদিনের লকডাউন কাটিয়ে 'নিউ নর্মালে' মাত্র কয়েক মাস আগে ফের খুলেছে জিমের দরজা। আর তাতে খুশি হয়েছেন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন। কারণ দীর্ঘদিন মহামারীর দাপটে জিমমুখো হতে পারেননি ফিটনেসপ্রেমীরা। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়িতেই নিজেদের শরীর চর্চার রুটিন বজায় রাখতে হয়েছে৷ কিন্তু জিমে ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে জিম করতে অনেকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে অবশেষে জিম খুললেও একাধিক বিধিনিষেধ মেনে শরীরচর্চা করাও কিন্তু সহজ কাজ ছিল না। আর এখন যখন বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, সেখানে জিমে গিয়ে শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া ঠিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বিশ্ব জুড়ে করোনার তৃতীয় ঢেউতে ফের রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের কপালে। তাই এই পরিস্থিতিতে ঘাম ঝরাতে জিমে যাওয়া উচিত হবে কিনা তা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷
আরও পড়ুন: ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা সুরক্ষা না দিলে আমাদের কী করা উচিত?
ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত:
বেশ কয়েক মাস পরে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ নভেম্বর ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রথম একটি রিপোর্ট পেশ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৬ নভেম্বর ওমিক্রনকে করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এর পরই ওমিক্রন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব জুড়ে। একাধিক জায়গা থেকে আসতে শুরু করে ওমিক্রন আক্রান্তের হদিশ। আবার টিকার দু'টো ডোজ দেওয়া থাকলেও এই নতুন ভ্যারিয়ান্টকে আটকানো যাবে না বলেও প্রশ্ন উঠেছে। নতুন এই স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিনে ৩০টিরও বেশি মিউটেশন রয়েছে, যা আগের অন্য স্ট্রেইনের মতো নয়। ফলে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতাতে এই ভাইরাস আটকানো যাবে না বা তা কাজ করবে না। যার জন্য এটি এত তাড়াতাড়ি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত ওমিক্রনে আক্রান্তদের উপসর্গ দেখে কোভিডের এই নতুন প্রজাতি শরীরে মৃদু উপসর্গ সৃষ্টি করে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তবে হালকা উপসর্গ হলেও ওমিক্রন যে খুবই সংক্রমণযোগ্য তা বলাই বাহুল্য। শুধুমাত্র ভারতেই এখনও পর্যন্ত ২০০ জন ওমিক্রনে আক্রান্তকে সনাক্ত করা হয়েছে যা আগামী দিনে লকডাউন এবং বিধিনিষেধ আরোপের দিকেই নির্দেশ করছে। যদিও এবিষয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে যেভাবে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বর্তমানে সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিজের লক্ষণ বুঝে দ্রুত সতর্ক হয়ে যাওয়া এবং আক্রান্ত হলে নিজেকে আলাদা করে নেওয়া আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সব চেয়ে বড় বিষয় হল, আমাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিভিন্ন স্তর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যখন ওমিক্রনের মতো ভাইরাসটি একটি অত্যন্ত পরিবর্তিত, সংক্রামক ভ্যারিয়ান্ট তখন একেবারেই অবহেলা করা চলবে না।
আরও পড়ুন: রান পিছু ৯৭ হাজার টাকা রোজগার কোহলির, পূজারার ১ লক্ষ, বাকিরা কে কত পেলেন
জিমে যাওয়া কি নিরাপদ?
ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টের ভয়াবহতার মধ্যে বর্তমানে জিমে যাওয়ার চেয়ে বাড়িতে শরীরচর্চা করাই শ্রেয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু ওমিক্রন কোভিডের ডেল্টা প্রজাতির তুলনায় তিনগুণ বেশি সংক্রমণযোগ্য, তাই স্বাভাবিকভাবেই বিপুল পরিমাণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি, শীতকালে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে কারণ বাইরের আবহাওয়ায় তাপমাত্রা কম থাকায় ঘরের ভিতর শুষ্ক এবং আর্দ্র করে তোলে, যার ফলে আমাদের শ্লেষ্মা ঝিল্লি শুকিয়ে যায় বলে সংক্রমণের জন্য তা আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে, শীতকালে ঠান্ডা এবং ফ্লু হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সেক্ষেত্রে কোভিড পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং রোগীর শরীরে জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, জিম একটি বদ্ধ জায়গা হওয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, এক্সারসাইজ করার সময়ে বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরেন না, তাই সেই সময় সহজেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বিকল্প তাহলে কী?
জিমে গিয়ে ঘাম ঝরালেই ফিট থাকা যায় এমনটা নয়। আসলে নিজের পছন্দ মাফিক চেহারা পেতে একনিষ্ঠ এবং ধারাবাহিক শরীরচর্চা প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে লকডাউন চলাকালীন জিমে না গিয়েও আমরা সবাই ফিট থাকতে শিখেছি। অনলাইনে ক্লাস করে কিংবা ব্যক্তিগত ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে অথবা নিজেদের মতো করেই বাড়িতে ব্যায়াম করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম। তাই ওমিক্রন বাড়ার কারণে আপাতত সেই অভ্যাসকেই পুনরায় জীবনে স্থান দিতে পারি। তাই ওমিক্রনকে প্রতিরোধ করতে বাড়িতে শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে বাড়িতে শরীরের বডি ওয়েট এক্সারসাইজ, যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং এবং স্কিপিং করতে পারি আমরা। এলাকায় দূষণ না থাকলে হাঁটা, দৌড়ানো এবং সাইকেলও চালাতে পারি আমরা। কারণ নতুন ভ্যারিয়ান্ট যেভাবে চারদিকে বিস্তার লাভ করছে এবং যেহেতু এই প্রজাতির বিষয়ে এখনও বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি তাই জিমের মতো বদ্ধ জায়গায় সময় কাটানো রীতিমতো সমস্যার আমন্ত্রণ জানানোর মতো হতে পারে।
আরও পড়ুন: খোঁজ মিলেছে করোনার নয়া ভ্যারিয়ান্ট ডেলমিক্রনের! ওমিক্রনের তুলনায় এটি কতটা আলাদা?
সুরক্ষিত থাকতে কী করতে পারি আমরা?
বড়দিন থেকে নতুন বছরের শুভারম্ভের অনুষ্ঠান, সব মিলিয়ে চারিদিকে উৎসবের মরসুম চলতে থাকায় নিজেকে বাড়ির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যথেষ্ট কঠিন কাজ ঠিকই। কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউ আটকাতে একমাত্র এটিই কার্যকরী পন্থা৷ কারণ তথ্য অনুযায়ী করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ ওমিক্রন ভ্যারিয়ান্টে দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। তাই ওমিক্রনকে ঠেকাতে অবশ্যই সচেতনত হওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে শুধু জিমই নয়, রেস্তোরাঁ, কোনও অনুষ্ঠান, সিনেমা হলের মতো সমস্ত জনবহুল জায়গা এই মুহুর্তে না যাওয়াই উচিত। একই সঙ্গে, ঠিক মতো বায়ু চলাচল করতে পারে না এমন জায়গায় সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেশি রয়েছে৷ তাই ওমিক্রনের মোকাবিলায় সব সময় মাস্ক পড়তে হবে এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ একই সঙ্গে, কোভিড-১৯-এর কোনও উপসর্গ বুঝতে পারলে অবশ্যই সতর্ক হয়ে যেতে হবে এবং সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।