EXPLAINED: China: সামনেই বড় ইভেন্ট, কিন্তু ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হচ্ছে চিনে! কী ঘটছে?

Last Updated:

China: আকাশ এখনও হয়নি পরিষ্কার, অলিম্পিকের আগে চিনের পরিবেশ দূষণ এবং করোনা সংক্রমণ ভাবাচ্ছে আয়োজকদের!

সমস্যার মুখে চিন
সমস্যার মুখে চিন
#নয়াদিল্লি: বেশি দিন আগের কথাও নয়। দিন কয়েক আগেই গুগল ক্রোম (Google Chrome) ব্রাউজার খুললে চোখে পড়ছিল এক অভিনব গুগল ডুডল (Google Doodle)। সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল মেঘমুক্ত আকাশের নিচে বরফে মোড়া এক নিসর্গের ছবি। আর তারই মাঝে উইন্টার গেমে মজে থাকতে দেখা গিয়েছিল হরেক প্রাণীদের। বুঝে নিতে অসুবিধা নেই, গুগল ডুডলের এই আয়োজন বেজিংয়ে অলিম্পিকের শীতকালীন ক্রীড়ানুষ্ঠান ঘিরে।
কিন্তু হলে কী হবে! লাগামছাড়া করোনার আতঙ্কে ভুগছে উইন্টার অলিম্পিক (Winter Olympic)। গত কয়েকদিনে দিনে শুধু বেজিংয়ে প্রচুর মানুষ কোভিড (Covid 19) আক্রান্ত হয়েছেন। যে তালিকায় আমজনতা থেকে শুরু করে রয়েছেন অ্যাথলিটরা। বেজিংয়ের বাতাস এখনও দূষণ মুক্ত নয়, তবে বিগত বছরগুলির তুলনায় পরিমাপযোগ্য ভাবে ভাল, কয়েকদিন আগেও দূষণের ধোঁয়ায় আশেপাশের বহুতলগুলিকে ঝাপসা দেখাত। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কঠিন করে তুলছিল সেই দূষণ। ঘরের বাইরে বেরোতে পারতেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। বাইরে বেরোলে দূষণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য মাস্ক পরেছিলেন প্রত্যেকে। বেজিংয়ের নীল আকাশ দূষণে কালো হয়ে থাকত।
advertisement
অথচ চলতি মাসে এখানে অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। এই অবস্থায় পরিবেশবিদরা দেখছেন, বেজিংয়ের নীল আকাশ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। দূষণের মাত্রা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিগত আড়াই বছর ধরে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে বেজিং সংলগ্ন এলাকার পরিবেশ এবং প্রকৃতি। শহরের এই দমবন্ধ করা বায়ু দূষণকে এয়ারপোক্যালিপস বলে অভিহিত করেছেন পরিবেশবিদরা। যদিও অনেকেই মনে করেন পর্যটকদের ভয় দেখানোর জন্য পরিবেশ দূষণ এবং আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। যার জন্য দায়ী করা হয়েছিল পরিবেশবিদ এবং আবহাওয়াবিদদের।
advertisement
advertisement
বেজিংয়ের বাতাস দূষণ মুক্ত হতে এখনো অনেক সময় লাগবে। অতীতেও এই শহরের ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দূষণ ২০১৬ সালেও খবরের শিরোনামে এসেছিল। যখন ফেসবুকের (Facebook) সিইও মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zukerberg) তাঁর মুখে হাসি নিয়ে তিয়ানানমেন স্কোয়ারে দূষণের কুয়াশায় জগিং করার একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি দেখে মনে করেন মার্ক জুকারবার্গ চিনের দূষিত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছেন।
advertisement
তবুও এই মাসের বেজিং গেমসে ক্রীড়াবিদদের জন্য শহরের চারপাশের পাহাড়, প্রকৃতি, বাতাস যথেষ্টই গত কয়েক বছরের তুলনায় পরিষ্কার। শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য একে একে বেজিংয়ে পা দিতে শুরু করেছেন অ্যাথলিটরা। তার পরই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে করোনার গ্রাফ। রাশিয়ান বায়াথলট ভালেরিয়া ভাসনেতসোভা বেজিংয়ে পা দেওয়ার পর কোভিডের যে দুটো টেস্ট করিয়েছেন, তা পজিটিভ এসেছে। তাঁর সঙ্গে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
advertisement
৪-২০ ফেব্রুয়ারি উইন্টার অলিম্পিকের আসর। অ্যাথলিট, কোচ, কর্তা, ম্যাচ পরিচালকদের ধরলে প্রায় ৩ হাজার লোক হাজির হতে পারেন বেজিংয়ে। গেমস ভিলেজ থেকে ইভেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিবহন ব্যবস্থা থাকছে বেজিংয়ে। ভিলেজে খুব একটা কড়া বিধিনিষেধ থাকছে না। তবে গেমে অংশ নেওয়া কেউই জনসমক্ষে ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। করোনার প্রভাব বাড়তে শুরু করার পর থেকেই বিশ্বের সঙ্গে যাবতীয় সংযোগ ছিন্ন করেছিল চিন। কড়া হাতে সামলানো হয়েছে করোনা। সরকারের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে, অতিমারীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করার জন্যই সব রকম ভাবে তৈরি চীন।
advertisement
কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে?
২০১৩ সালে দূষণ রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। সেই দূষণের আঘাতে বেজিং মুখ থুবড়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং জনগণের অসন্তোষে বিব্রত হয়ে চিন প্রশাসন দেশের দূষণের মাপ এবং বায়ু দূষণের গুণমান উন্নত করার জন্য পরিকল্পনা গ্ৰহণ করে এবং বলে যে 'লোহার মুষ্টি দিয়ে' দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা হবে, এনার্জির সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে শিকাগোতে তৈরি হয় পলিসি ইনস্টিটিউট। চলতি মাসের শীতকালীন গেমের জন্য দেশটির আবহাওয়া উন্নত করতে সে দেশের গ্ৰিন বেঞ্চ তৎপর হয়।
advertisement
২০০৮ সালে গ্ৰীষ্মকালীন খেলার সময় চিন এবং বেজিংয়ে যে ধরনের পরিবেশ ছিল তা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হচ্ছে দেশের প্রশাসন। সেই সময় দূষণ ঠেকাতে কয়লা চালিত প্ল্যান্টগুলির ধোঁয়া নির্গমনের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং গাড়ির ধোঁয়া নির্গমন কমাতে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমানো হয়েছিল। স্থানীয় পরিবেশ আধিকারিকদের প্রশাসনের তরফে দূষণ কমানোর টার্গেট স্থির করে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে কয়লাচালিত ব্রয়লারগুলিকে গ্যাস বা বৈদ্যুতিক হিটার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
বায়ুর গুণগতমানের উন্নতি হয়েছে বলে দাবি সরকারের
জিয়া পেই ৩০ বছর বয়সী বেইজিংয়ের বাসিন্দা। যিনি ঘরের বাইরে পরিবেশের কোলে ব্যায়াম করতে পছন্দ করেন। তিনি জানান, "উন্নত বাতাসের গুণমান আমাকে আরও ভাল মেজাজে রাখে। অতীতে যখন ধোঁয়াশা ছিল, আমি অনুভব করতাম যে আমার মুখের মধ্যে ধুলো এবং ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছিল। দূষণের তীব্রতা করলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। বোঝা যায় দূষণের থেকে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যায়।"
বেইজিংয়ের আকাশ কি এখন পরিষ্কার?
আবহাওয়ার অগ্রগতি সত্ত্বেও গত বছর বেইজিংয়ের বার্ষিক গড় বায়ু দূষণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা দ্বারা নির্ধারিত সীমার ছয় গুণেরও বেশি ছিল। ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কির সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের লরি মাইলিভার্তা বলেছেন, বেজিং শহরটিকে ঘিরে থাকা কয়লা-পোড়ানো শিল্পের থেকে নির্গত ধোঁয়ার জন্যই খারাপ বাতাসের সৃষ্টি হচ্ছে এবং দূষণ বাড়ছে। দূষণের মাত্রা দিনের বেলা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। দিনের বেলা বিশেষ করে গাড়ি চলাচলের জন্য যে ধোঁয়া নির্গমন হয় এবং শিল্প কলকারখানা থেকে কয়লার নির্গত ধোঁয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড অত্যধিক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করছে। প্রশাসনিক স্তরে নিয়মিত আলোচনা করে কীভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে নতুন নতুন ভাবনা চিন্তা প্রয়োগ করা হচ্ছে। সমগ্র দেশের যান চলাচল এবং কল-কারখানাগুলির উপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে চিনের পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন বেজিংয়ে গত ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২৮৮ দিন উন্নত মানের বায়ু ছিল। ২০১৩ সালে ১৭৬ দিনের তুলনায় গত বছর কয়েকটা দিন বেশি হলেও উন্নত মানের বাতাস পাওয়া গিয়েছিল।
বায়ু দূষণে স্বাস্থ্য কীভাবে প্রভাবিত হয়?
বায়ু দূষণের প্রভাবগুলি ভিসারাল হতে পারে, এতে চোখ জ্বালা করা এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেজিংয়ে বসবাসকারী মাইলিভির্তা বলেন, "অত্যাধিক বায়ু দূষণের ফলে বহু মানুষের শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়েছে। ফুসফুস এবং কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার বহু মানুষ। নিয়মিত অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে এখানে।"
শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্কদের হাঁপানি সহ একাধিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা শুরু হয়েছে। বাধ্য হয়ে যাঁরা কর্মসূত্রে রাস্তায় বের হতেন, তাঁরা অনেকেই ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হাঁপানি বেড়েছে বহুগুণ মানুষের। বায়ু দূষণ থেকে অতি সূক্ষ্ম দূষিত ধূলোর কণা মানুষের ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস করে দেয় ফলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই দূষণের ফলে বহু মাল্টি অর্গান ফেলিওর হয়ে বহু মানুষ মারা গিয়েছেন।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক এবং শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের রিপোর্টের সহ-লেখক গুওজুন হে বলেছেন, দরিদ্র লোকেদের যদি বায়ু পরিশোধনের সামর্থ্য না থাকে, তাহলে তাঁরা বাইরে কাজ করতে যেতে পারবেন না। বাইরে বের হলে তারা আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। রাস্তায় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
আগামী দিনে কী হতে পারে
চিন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ এবং দূষণ মুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও দেশটি এখনও বিদ্যুতের জন্য কয়লার উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। চিনের পরিবেশ প্রযুক্তিবিদের দাবি, ধোঁয়া এবং দূষণ নির্গমন রোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ইতিমধ্যেই করেছে চিন এবং বেজিং। উচ্চ পর্যায়ের গবেষণায় নিয়মিত সৌরশক্তি এবং বায়ু থেকে নির্গত শক্তি দিয়েই দূষণ রোধ করে কাজ করা হচ্ছে সমগ্র দেশে।
পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ বলেন, "কয়লা এবং ধোঁয়া বাদ দিয়ে সৌরশক্তি এবং বাতাস থেকে শক্তি সঞ্চয় করার ফলে আগামী দিনে পরিবেশদূষণ নজিরবিহীন ভাবে কমে যাবে। ধীরে ধীরে অতীতের দূষণমুক্ত পরিবেশ ফিরে আসবে সমগ্র দেশে। সরকার যখন আন্তরিকভাবে চায় পরিবেশ দূষণমুক্ত করতে, তখন স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থাও নিতে পারে সরকার এবং প্রশাসন। আন্তরিকতার সঙ্গে অস্থায়ীভাবে কারখানাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এ দেশের প্রশাসন, বর্তমানে সেই সিদ্ধান্ত এখনও লাগু রয়েছে। চলতি মাসের অলিম্পিকের মতো বিশ্বমানের যে কোন অনুষ্ঠান চিনে হতেই পারে। আপাতত ধীরে ধীরে চিনের পরিবেশ দূষণমুক্ত হচ্ছে।"
কোভিড পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি চিনের। অত্যাধিক পরিবেশ দূষণের জন্যই কোভিডের মাত্রা বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গিয়েছিল বেজিং সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। নিয়মিত মৃত্যু এবং নতুন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা চিন্তায় ফেলেছে বেজিংয়ের প্রশাসনকে। এই অবস্থায় অলিম্পিক সহ বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার খেলা কীভাবে সংঘটিত হবে তা নিয়ে সম্পূর্ণভাবে চিন্তামুক্ত নন আয়োজকরা। কোভিড বিধি মেনে চূড়ান্ত নজরদারির মাধ্যমে শুরু হতে চলেছে অলিম্পিক। দেশের বিমানবন্দর, রেলস্টেশন সহ যাতায়াতের সকল জায়গায় কড়া নজরদারি রেখেছে চিনা প্রশাসন। কোভিড বিধি না মানলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হচ্ছে।
যদিও পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ, স্থানীয় প্রশাসন, ক্রীড়াবিদরা যতই পরিবেশ দূষণ মুক্ত হওয়ার কথা বলুন, আসন্ন অলিম্পিকের আগে চিন্তা মুক্ত নয় বেজিং সহ সমগ্র দেশের সাধারণ মানুষ!
view comments
বাংলা খবর/ খবর/Explained/
EXPLAINED: China: সামনেই বড় ইভেন্ট, কিন্তু ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হচ্ছে চিনে! কী ঘটছে?
Next Article
advertisement
Success Story: বেঙ্গালুরুর দুই বোনের কাজ দেখে দোকানদাররা হাসতেন, এখন তাঁরাই ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা পরিচালনা করছেন
বেঙ্গালুরুর দুই বোনের কাজ দেখে দোকানদাররা হাসতেন, এখন তাঁদেরই ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা !
  • বেঙ্গালুরুর দুই বোনের কাজ দেখে দোকানদাররা হাসতেন

  • এখন তাঁদেরই ১০০ কোটির ব্যবসা !

  • জেনে নিন তাঁদের সাফল্যের কাহিনি

VIEW MORE
advertisement
advertisement