উত্তম কুমার মানেই বিস্ময়, ফ্লপ মাস্টার থেকে হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক

Last Updated:

শুরুর গল্পটা ঠিক উল্টো। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তার জন্ম। পরিবারের দেওয়া নাম ছিল অরুণ কুমার। বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় আর মা চপলা দেবী গৃহিণী। অভাব-অনটনের সংসার; কোনওমতে দিন কেটে যায়।

#কলকাতা: ১৯৫৩ সালের কথা, মুক্তি পেল নির্মল দের ছবি 'সাড়ে ৭৪'। মুক্তির পর কমেডি ছবিটি নিয়ে সবার কী উল্লাস। ছবিতে নামি সব তারকা_ কে নেই! চারদিকে কথা হচ্ছিল, ছবিটির মাধ্যমে কী এক নতুন জুটি এসেছে পর্দায়। বয়স্করা মজেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীতে। তাদের দাবি, হিরো-হিরোইন তো তুলসী-মলিনা। নতুন জুটি তো সাইড রোলে! ছবিটি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিল ৷ টানা আট সপ্তাহ চলল এই ছবি ৷ সাদা-কালো 'সাড়ে ৭৪'-এর মাধ্যমে নতুন জুটির যে ইনিংস পত্তন হয়েছিল তাতেই হল রঙিন ইতিহাস। উত্তম পেলেন কালজয়ী সাফল্য, সৃষ্টি করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন যুগ। তিন দশক ধরে দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে পৌঁছে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। ১৯৭০-এর পর নায়ক উত্তম থেকে হয়ে গেলেন মহানায়ক। অনাবিল হাসি, অকৃত্রিম চাহনি আর অভিনয় গুণে কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে আজও বাঙালির চেতনায় উত্তম জীবন্ত।
গানের শিক্ষক: শুরুর গল্পটা ঠিক উল্টো। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তার জন্ম। পরিবারের দেওয়া নাম ছিল অরুণ কুমার। বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় আর মা চপলা দেবী গৃহিণী। অভাব-অনটনের সংসার; কোনওমতে দিন কেটে যায়। গিরিশ মুখোপাধ্যায় রোডের একটিমাত্র ঘরে তাঁরা থাকেন ৷ ভরসা বাড়িটি নিজের। বাবার সামান্য বেতনে সংসার চলছে না। উপায় না দেখে উপার্জনে নেমে পড়লেন বাড়ির বড় ছেলে অরুণ। পড়াশোনার পাশাপাশি গানের শিক্ষকতা শুরু করলেন। সবচেয়ে লোভনীয় প্রস্তাব পেলেন অল্প দিনেই। গান শেখাতে হবে গাঙ্গুলী বাড়ির মেয়ে গৌরী দেবীকে। বেতনও বেশ ভালো, মাসে ৭৫ টাকা। আগেই চেনাজানা হলেও শিক্ষকতা করতে গিয়ে কাছে এলেন উত্তম-গৌরী। ১৯৫০ সালের ১ জুন অরুণের ঘরে এলেন গৌরী দেবী।
advertisement
169
advertisement
পাঁচ সিকিতে এক্সট্রার রোল: ছোটবেলা থেকেই অরুণ প্রচ থিয়েটার অনুরাগী; ছিলেন যাত্রার ভক্ত। রুপোলি পর্দায় অভিনয়ের ঝোঁকটা ক্রমেই বেড়ে চলল। ১৯৪৭ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র 'মায়াডোর'-এ অভিনয়ের সুযোগ মিলল ৷ তবে এক্সট্রার রোল। মাত্র পাঁচ সিকিতে দৈনিক ভিত্তিতে ওই ছবিতে অভিনয় করলেন অরুণ। কিন্তু 'মায়াডোর' মুক্তি পেল না। '৪৮ সালে পেলেন আরেকটি সুযোগ, 'দৃষ্টিদান' ছবিতে নায়ক অসিতবরণের অল্প বয়সের চরিত্রে। কিন্তু দর্শকমনে তেমন দাগ কাটতে পারলেন না অরুণ। পরের ছবি 'কামনা'। ১৯৪৯ সালে মুক্তি পেল ছবিটি, কিন্তু সেটিও সুপার ফ্লপ। পরের দুই ছবি 'মর্যাদা' ও 'ওরে যাত্রী'ও চলল না।
advertisement
'ফ্লপ মাস্টার জেনারেল': ছবি ফ্লপ হচ্ছে, তারপরও দমে যাননি অরুণ। হাতে ছিল তখনও 'সহযাত্রী' ও 'নষ্টনীড়' ছবি। মন-প্রাণ দিয়ে অভিনয় করলেন। ফল আগের তিনটির মতোই। ছবি ফ্লপ করছে কিন্তু সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন ৷ বিষয়টি ভালভাবে নিল না অনেকেই। আড়ালে-আবডালে তাঁকে ডাকা শুরু হল 'ফ্লপ মাস্টার জেনারেল' বা 'এফএমজি' বলে। নামটা রটে গেলে সিনেমাপাড়ায়। খবরের পাতায় এফএমজি ঘিরে খবরও ছাপা হল।
advertisement
অরুণ থেকে অরূপ, পরে উত্তম: অসফলতার ধারাবাহিকতা চলছিল। এর মধ্যে সরোজ মুখোপাধ্যায়ের 'মর্যাদা' ছবিতে নায়ক হলেন। তবে পরিচালকের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নাম পাল্টে হলেন অরূপ কুমার। তাতেও কাজ হল না। ‘সহযাত্রী’ ছবিতে অভিনয় করছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা পাহাড়ি সান্যালের সঙ্গে। শুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডায় পাহাড়ি সান্যাল হঠাৎ বলে বসলেন-'তুমি অরুণ নও হে, তুমি যে উত্তম, উত্তম কুমার।' তার পরামর্শে নাম পাল্টে হয়ে গেলেন উত্তম কুমার। নাম বদলের প্রথম ছবি সহযাত্রীতেও সাফল্য ধরা দিল না। ১৯৫১ সালে 'সঞ্জীবনী'ও ফ্লপ হল। 'বসু পরিবার' ছবিতে নায়কের ভূমিকায় নয়, ছিলেন পার্শ্বচরিত্রে। ছবিটি বেশ ভাল চলল, অভিনয়ের জন্য প্রথম প্রশংসিত হলেন উত্তম।
advertisement
239
উত্তমের 'দিদি'রা: সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয়ের আগ পর্যন্ত উত্তম ছয় বছরে নয়টি ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিগুলোর ৯ নায়িকার মধ্যে আটজনই ছিলেন উত্তমের বড়। ছোট ছিলেন একমাত্র সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। মায়া মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ছবি রায়, মনীষা দেবী, করবী গুপ্ত, ভারতী দেবী, সনিন্দা দেবী, সন্ধ্যা রানী ও মঞ্জু দে- আটজনকেই উত্তম ‘দিদি’বলে ডাকতেন। অনেকেই মনে করেন, বয়সে বড় নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করায় উত্তমের শুরুর কেরিয়ারে প্রভাব ফেলে।
advertisement
এক বছরেই ১৪ ছবি: 'সাড়ে ৭৪'-এর জোয়ারের ঢেউ গিয়ে পড়ল পরের বছর। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পেল উত্তম অভিনীত ১৪টি ছবি, তার মধ্যে সাতটিই সুচিত্রার সঙ্গে জুটি বেঁধে। 'দৃষ্টিদান' দিয়ে শুরু করে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছরে বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ' ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম। প্রথম ছবিতে মায়া মুখোপাধ্যায়, সর্বশেষ 'ওগো বধূ সুন্দরী'তে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়-সহ সর্বমোট ৪৬ জন তার নায়িকা হয়েছেন।
advertisement
কিংবদন্তি জুটি ও রহস্য: ১৯৫৪ সালে 'ওরা থাকে ওধারে' ছবি দিয়ে উত্তম-সুচিত্রা জুটি পাকাপাকিভাবে দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নেয়। তিপান্নর যাত্রা পঁচাত্তরে গিয়ে 'প্রিয় বান্ধবী' দিয়ে শেষ হয়। ২২ বছরে মুক্তি পেয়েছে উত্তম-সুচিত্রা জুটির সর্বমোট ৩১টি ছবি। কিন্তু রূপালি পর্দার বাইরে কেমন ছিল তাদের সম্পর্ক? পেশাগত, নাকি বন্ধুত্বের? নাকি আরও কিছু? এসব প্রশ্নের শুরু হয়েছে অনেক আগেই, শেষ হয়নি কখনও! সুচিত্রা সেনের জীবনের শেষ ছবি হতে পারত উত্তমের সঙ্গে; এমনকি উত্তমেরও। কী যে ঘটেছিল, ১৯৬২ সালের পর তারা একসঙ্গে ছবি করা কমিয়ে দেন। সুচিত্রা কেনই বা সিনেমা জগৎ ছেড়ে চলে গেলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে, তাও এক চিরকালীন রহস্য। গৌরী দেবীকে ছেড়ে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৮০ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে ছিলেন।
১৯৬১ সালে 'সপ্তপদী' সিনেমায় উত্তম তার ভালবাসার মানুষ রিনা ব্রাউনকে (সুচিত্রা সেন) নিয়ে বাইকে চেপে গেয়েছিলেন, 'এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো'- পথ শেষ হয়নি, মৃত্যুর পরও চিরসবুজ পথে হেঁটে চলেছেন বাঙালির প্রাণের নায়ক। প্রতিটি ক্ষণে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল।
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
উত্তম কুমার মানেই বিস্ময়, ফ্লপ মাস্টার থেকে হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক
Next Article
advertisement
Durga Puja Weather Update: নবমীর রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন ! তার আগে সপ্তমী-অষ্টমীতে কী পূর্বাভাস? বৃষ্টি কি বাধ সাধবে ঠাকুর দেখায়
নবমীর রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন ! সপ্তমী-অষ্টমীতে কী পূর্বাভাস? বৃষ্টি কতটা হতে পারে
  • নবমীর রাত থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন !

  • তার আগে সপ্তমী-অষ্টমীতে কী পূর্বাভাস?

  • বৃষ্টি কি বাধ সাধবে ঠাকুর দেখায়

VIEW MORE
advertisement
advertisement