‘ওই মেয়েটাই ঘুমের মধ্যে ঋতুকে মেরে ফেলেছে’
Last Updated:
#কলকাতা: শুক্রবার সন্ধে পৌনে ছ’টা ৷ নন্দন ২ ৷ থিকথিকে ভিড় ৷ কাচের দরজা দিয়ে দু’পা এগোতেই সামনে মিডিয়ার ভিড় ৷ ফ্ল্যাশের ঝলকানি ৷ ভিড় পেরোতেই ডান হাতে দরজা ৷ কাঠের দরজা দিয়ে পেক্ষাগৃহে ঢুকতেই মাথায় হাত! একটাও আসন ফাঁকা নেই ৷ তীর্থের কাকের মতো তখন সবাই আসনের খোঁজ করে চলেছেন ৷ এর মধ্যেই ঘোষিকা সবাইকে নিজেদের আসন গ্রহণ করার জন্য আবেদন জানালেন ৷ ধীরে ধীরে পেক্ষাগৃহের আলোগুলো নিভতে শুরু করল ৷ সিঁড়িতেই বসতে শুরু করলেন দর্শকরা ৷
ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সেই চেনা চিত্রটি ফিরে এল অসময়ে ৷ কারণটা ঋতুপর্ণ ঘোষ ৷ ঋতুপর্ণ মানেই একটা দমকা হাওয়া ৷ আর সেই হাওয়াই এসে লাগল সেদিন নন্দনের পেক্ষাগৃহ ২-এর সাদা পর্দাটার গায়ে ৷ কলকাতার রাস্তা-ঘাট, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভাল লাগা হাওড়া ব্রিজ তখন রঙ ঝরাতে শুরু করেছে সাদা স্ক্রিনটায় ৷ এ বার এলেন চোখে বড়ফ্রেমের চশমা, পরণে আলুথালু পোশাক, একমাথা ঝাঁকরা চুলে হাজির হলেন ঋতুপর্ণ ৷ পাশে বসে থাকা দর্শকটি শিরদাঁড়া শক্ত করে সোজা হয়ে বসলেন ৷ ঋতুপর্ণের ছবি কথা, ভিডিও এসেই চলেছে ৷ মিলে মিশে যাচ্ছে ‘বনমালী তুমি পর জনমে হয়ো রাধা’র সুর ৷
advertisement
advertisement
কথা ধরলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং মীর ৷ আর তাঁদের কথার সূত্র ধরেই মাঝেমধ্যে শর্মিলা ঠাকুর, অপর্না সেন, অভীক চট্টোপাধ্যায়, অর্ঘ্যকমল মিত্র, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নন্দিতা দাশদের আনাগোণায় তখন বুঁদ দর্শকাসনে বসে থাকা দর্শকরা ৷ টানা পঁচানব্বই মিনিট ৷ ঋতুপর্ণ ঘোষকে ফিরে দেখা পরিচালক সঙ্গীতা দত্ত’র হাত ধরে ৷ তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ঋতুপর্ণ ঠিক কেমন পরিচালক ছিলেন ? জীবন নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক কেমন ছিল? সে সব নিয়ে টুকরো কোলাজ উঠে এল সঙ্গীতা দত্ত’র তথ্যচিত্র ‘বার্ড অফ ডাস্ক’-এর হাত ধরে ৷
advertisement
ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়ি ‘তাসের ঘর’৷ সেই বাড়ির বড় ছেলেটার ছোটবেলা, মায়ের আদর ৷ মায়ের মুখের গল্পের গন্ধ ৷ প্রয়াত পরিচালকের ‘ফার্স্ট পার্সন’-পড়ে চলেছেন সৌমিত্রবাবু এবং মীর ৷ সঙ্গীতা আলাদা ভাবে, বাড়তি কিছুই করার চেষ্টা করেননি এই ছবিতে। ঋতু আজীবন যা করেছেন, করতে চেয়েছেন, বলেছেন, বলতে চেয়েছেন তাই দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি, এখানেই এই তথ্যচিত্রের মুন্সীয়ানা। তথ্যচিত্রের শুরুতে নিজেই 'সন্ধ্যের পাখি'র বর্ননা দিতে থাকেন ঋতু, তারপর কখনও তাঁর লেখা বই 'ফার্স্ট পার্সন', কখনও তাঁর নির্মিত বিভিন্ন ছবির টুকরো দৃশ্য, তাঁর ছবির একাধিক কলাকুশলী-সহকর্মীদের সাক্ষাত্কার-বক্তব্য, কখনও তাঁর স্কুল-পাড়া-বাড়ি-তাসের ঘর, কখনও একা-একান্তে ঋতু এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এই তথ্যচিত্রকে।
advertisement
'বার্ড অফ ডাস্ক'-এর নির্মাতা সঙ্গীতা দত্তের সঙ্গে ঋতুপর্ণ ঘোষের বন্ধুত্ব যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ঋতু ছিলেন ইতিহাসের ছাত্র আর সঙ্গীতা সাহিত্যের। তারপর বেশ কিছু বছর পর ঋতু যখন ছবি বানাচ্ছেন, সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঋতুপর্ণের প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর সঙ্গীতা তাঁকে লন্ডনে আসার আমন্ত্রণ জানান। ঋতুপর্ণের 'বাড়িওয়ালি' এবং 'উত্সব'-এর প্রদর্শনীও কিন্তু হয় লন্ডনেই। তারও বেশ কিছু বছর পর সঙ্গীতা ঋতুপর্ণের সহকারী হিসেবে কাজও শুরু করেন। সঙ্গীতার কথায়, তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একটি বই লিখেছিলেন, সেই বইই অনুসরণ করেছে এই তথ্যচিত্র।
advertisement
ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে তথ্যচিত্র, আর তাঁর যৌন পছন্দ নিয়ে কোনও আলোচনা থাকবে না, তা কি হয়!এই দিকটিও ছুঁয়ে গিয়েছেন সঙ্গীতা ৷ পর্দায় তখন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ৷ কথা শুরু করলেন-‘‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-এর স্ক্রিপ্ট নিয়ে ঋতু দা’র কাছে হাজির হয়ে গিয়েছিলাম ৷ বললাম-এই চরিত্রটা তোমায় করতে হবে নয়তো করবই না ৷ উঠে চলে গেলেন ঋতু দা ৷ আমি তো তখন ঘাবড়ে গিয়েছি ৷ রেগে গেল নাকি! ইন্ডাস্ট্রিতে উনি আমার সিনিয়র ৷ কী বলবেন? ভেবেই চলেছি ৷ হঠাৎ দেখি একগাদা জামা-কাপড়, বিদেশি ম্যাগাজিন নিয়ে হাজির হলেন ঋতু দা ৷ বলল দেখ তো, লুকটা কেমন হবে ? এটা নাকি ওটা ৷ ভাবটা এমন যেন, সেদিনই কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন হয়ে গিয়েছে ৷
advertisement
আরেকটা দিনের কথা খুব মনে পড়ছে ৷ এই ছবিরই একটা সিনের জন্য ঋতুকে মেয়ে সাজতে হয়েছিল ৷ মেয়ের লুক নিতে চার ঘণ্টা সময় লেগেছিল ৷ যখন তিনি ফ্লোরে এলেন তখন তো আমরা থ ৷ যে ফ্লোরে এল, তাঁকে আমরা চিনি না ৷ রেখার মতো লাগছে ৷ ইনি এক্কেবারে অন্য মানুষ ৷ এমনি সময় আমরা গায়ে হাত দিয়ে কথা বলি ৷ কিন্তু সে সময় গায়ে হাত দিতেও কেমন একটা ইতঃস্তত ভাব ৷ কেননা এই মানুষটাকে আমরা চিনিই না ৷
advertisement
শুট শেষ। মেকআপ তুলছে। মাস্কারা মাখামাখি হয়ে আছে মুখে। আমাকে বলল, মেকআপ রুমের দরজাটা বন্ধ করে দে। তখনই বুঝেছি কোনও গণ্ডগোল। দরজা বন্ধ করতেই হাউহাউ করে কান্না। কী কথা হয়েছিল, সেটা ব্যক্তিগতই থাক। কিন্তু মোদ্দা ব্যাপারটা হল, ঋতু বলেছিল, মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’’ফের কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘আমার মনে হয় ওই মেয়েটাই ঘুমের মধ্যে ঋতুকে মেরে ফেলেছে’’৷ তথ্যচিত্র শেষ হতেই, নন্দনের বাইরে আলোচনার ঢল ৷ তবে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ঠিক কি বলতে চাইলেন ? ‘‘নারীসত্তাকে জাগিয়ে তুলতে গিয়ে কি ঋতুপর্ণ পরিচালক ঋতুপর্ণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন ?’’আরেকজন বললেন, ‘‘নারী হয়ে ওঠার পথে কী শারীরিক ব্যধি আরও জাঁকিয়ে বসছিল ৷’’প্রশ্নটা উঠেই গেল ৷ এমনই হাজারও প্রশ্ন,কথা, মতামতের বুনন রয়েছে গোটা ‘বার্ড অফ ডাস্ক’ বা ‘সন্ধের পাখি’জুড়ে ৷ আর এই তথ্যচিত্রটি দেখলেই সবার মনে জাগবে প্রশ্ন, উত্তর মিলবে অনেক কিছুরই ৷ তথ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হচ্ছে নন্দন ২ পেক্ষাগৃহে ৷ সন্ধ্যা ছ’টায় ৷
বিনোদন জগতের লেটেস্ট সব খবর ( Entertainment News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ বলিউড, টলিউড থেকে হলিউড সব খবরই পাবেন এখানে ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন ন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
January 14, 2019 4:48 PM IST